‘বাবা আমি আর পারছি না। এখন তো বাসায় চলো।’ মঙ্গলবার রাত ১২টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘুমে ঢলে ঢলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছয় বছরের ছোট্ট শিশু তানহা (ছদ্মনাম) তার বাবাকে বাসায় ফেরার জন্য বার বার তাড়া দিচ্ছিল। তানহার পাঁচ সদস্যের পরিবার মালয়েশিয়ায় সাতদিনের সফর শেষে মালিন্দো এয়ারলাইন্সযোগে দেশে ফেরেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তানহার বাবা আনোয়ার হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ভ্রমণক্লান্ত যাত্রীদের সহজে ইমিগ্রেশনের সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ করার প্রত্যাশা থাকলেও গতরাতের অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো ছিল না। চার ঘণ্টার ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে কয়েকশ যাত্রী যখন ইমিগ্রেশন করাতে আসেন তখন তাকিয়ে দেখেন ইমিগ্রেশনের জন্য হাতে গুনা কয়েকটা কাউন্টার খোলা রয়েছে। অধিকাংশ কাউন্টার ফাঁকা পড়ে আছে। কয়েকশ যাত্রী ইমিগ্রেশনের জন্য তখন তিন চারটি কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আনোয়ার হোসেন জানান, মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশনে মাত্র দুই তিন মিনিটে পাঁচ সদস্যের পরিবারের সবার পাসপোর্টে প্রস্থানের সিল পড়লেও নিজ দেশে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্টে সিল মারতে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লেগে যায়। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা অধিকাংশ যাত্রীকে নানা প্রশ্নবানে জর্জড়িত করে তোলেন। তাদের চোখে সন্দেহের বারুদ। গতরাতে সিলেটি এক ভদ্র নারী লন্ডন থেকে দেশে ফিরেন। দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরায় তিনি সিলেটের ঠিকানা সঠিকভাবে না লেখায় এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে তাকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হয়রানি শুরু করেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ওই নারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছে পৌঁছলেও তাকে লাইন থেকে বের করে দিয়ে কারো সঙ্গে টেলিফোন বা মোবাইলে যোগাযোগ করে সঠিক ঠিকানা না দিলে বাইরে বের হতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। কথাবার্তা বলার সময়ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার চেহারায় হাসির লেশ নেই, গম্ভীর ও কিছুটা রুঢ় স্বরেই নারীকে লাইন থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। নারী বার বার অনুরোধ জানালেও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কঠিন স্বরে একই কথা বলে লাইন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এখানেই শেষ নয়, ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টে প্রস্থান সিল নিয়ে লাগেজ বেল্ট থেকে লাগেজ নিয়ে গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও ইমিগ্রেশনের অপর এক কর্মকর্তা কোথা থেকে এসেছেন, স্বর্ণ আছে কি না, ল্যাপটপ মোবাইল আছে কি না নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। এসব নেই বলায় এক পুলিশ সদস্য নিরাশ হয়ে বলতে থাকেন লাগেজগুলো স্ক্যানিং করিয়ে তারপর যাবেন। ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন যাত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরে যখন যাত্রীরা স্বল্প সময়ে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করার প্রত্যাশা করেন তখন বেশিরভাগ ইমিগ্রেশন কাউন্টার বন্ধ দেখতে পেয়ে হতাশ হন। নিরাপত্তার নামে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে প্রশ্নবানে জর্জড়িত, যাত্রীদের সহযোগিতার বদলে অসহযোগিতা ও রুঢ় আচরণ করা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তারা। এমইউ/জেডএ/পিআর
Advertisement