বিকালের সূর্য তখন অনেকটাই হেলে পড়েছে। শীতের বিকাল কুয়াশায় ঢাকা পড়ছিল সে সময় । বিশাল পদ্মায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দানবাকৃতির যন্ত্রগুলো গহিন পদ্মায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। সেখান থেকেই টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে। মাঝে মাঝে ভারি শব্দও শোনা যাচ্ছিল। পদ্মার ওপারেই এখন অধিক কাজের গতি। শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট। জানুয়ারিতেই সংযোগ সড়ক খুলে দেয়ার কথা। ধুম কাজ চলছে, দু’পাড়েই। শ্রমিকদের অলস সময় পার করার বিন্দুমাত্র ফুসরত নেই। মাস খানিক পরেই পদ্মার বুক ভেদ করে দেখা দেয়ার কথা রয়েছে পিলারের। পদ্মাসেতুর মূল কাজের দৃশ্যমান হবে এই পিলার দেখার মধ্য দিয়েই।চাইনিজ আর বাঙালি শ্রমিকেরা এখন পিলারের কাজেই অধিক ব্যস্ত। ক্যারেনে নৌযান থেকে টেনে ভারি লোহা ডাঙায় তুলছিলেন শামীম। তিনি এসেছেন মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে। শামীম বলেন, প্রতিদিন কাজ করছি আর মনে করছি, আমরা একেক দিন ইতিহাস গড়ে তুলছি। বড় প্রকল্পের কাজ। বড় যন্ত্র চালাই। অভিজ্ঞতাই ভিন্ন। পদ্মায় সেতু হচ্ছে এবং সেই সেতুর কাজে যুক্ত থাকতে পারছি, এটি ভাবতেই বুক ভরে যায়।এ কাজে বিশেষ আনন্দ পাচ্ছেন উল্লেখ করে শামীম আরো বলেন, কাজে কোনো ক্লান্তি নেই। ওভার টাইমের জন্য আলাদা মাইনে পাই। বিদেশিরাও আমাদের ব্যাপারে আন্তরিক।পাবনা থেকে এসেছেন রবি। তিনি বস্তা সেলাইয়ের কাজ করছেন। নদীশাসনের জন্য এসব বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। সেলাই করতে করতেই রবি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আনন্দ নিয়ে কাজ করছি। সবার স্বপ্ন পদ্মাসেতু। আর আমরা সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছি। সবাইকে বলেও বেড়াই। পদ্মাসেতুর কাজের কথা জানতে মানুষের আগ্রহ যেন ধরে না।মেশিন ভালো কাজ করলে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যন্ত টাকাও আয় করা যায় উল্লেখ করে বলেন, আমাদের এ কাজ অল্পদিনের। কিন্তু অভিজ্ঞতা অনেক বড়। আমি যমুনা সেতুতেও বস্তা সেলাইয়ের কাজ করেছি। এখন যমুনা সেতু দেখলে, সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যায়। সবই ইতিহাস। আর আমরা সেই ইতিহাসের সাক্ষী।প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সিরাজুজ্জামান, সায়েম সাবু, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবু সালেহ সায়াদাত ও এ কে এম নাসিরুল হক।এএসএস/এআরএস/পিআর
Advertisement