সবার আগে সেরা চারে। তাও এক ম্যাচ বাকি থাকতেই এমন এক উচ্চতায়, যেখানে আর কোনো দলের যাওয়া সম্ভবনা নেই। ১১ খেলায় আট জয়ে ১৬ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকা ডায়নামাইটসকে টপকে যাওয়া বহুদূর, কেউ ছুঁতেও পারবে না। মোদ্দা কথা নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীর কারোই আর ১৬ পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ নেই। এমন সমীকরণ ও হিসেব-নিকেশ সামনে রেখেই আজ রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচ হয়ে গেল বিপিএলে। এমন সুদৃঢ় অবস্থানে থেকে কী করবে ঢাকা? খেলা শুরুর আগেই গুঞ্জন। জল্পনা-কল্পনার ঘুড়ি উড়ছিল আকাশে বাতাসে। সবার কথা- বল এখন ঢাকা ডায়নামাইটসের কোর্টে। টুর্নামেন্টের বাইলজ ও প্লেইং কন্ডিশন অনুযায়ি পয়েন্ট টেবিলে এক ও দুই নম্বরে থাকা দলের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। ওই দুই দলের সামনে এক ম্যাচ খেলেই ফাইনালে যাবার হাতছানি; অর্থাৎ এক ও দই নম্বর দলের মধ্যে যে ম্যাচটি হবে, সেটা প্রথম ‘কোয়ালিফায়ার’। ওই ম্যাচ জয়ী দল সোজা ফাইনালে। বিজিত দলের তাই বলে সব সম্ভাবনা শেষ হবে না। তারাও একটি সুযোগ পাবে। তিন ও চার নম্বর দলের মধ্যে যে আরেক ম্যাচ হবে (এলিমিনেটের) সেই খেলার বিজয়ির সাথে খেলবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান পাওয়া দলের হার মানা পক্ষ। মোদ্দা কথা অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে ঢাকা। শেষ ম্যাচে খুলনাকে হারালে কোয়ালিফায়ার লড়াইয়ে দেখা হবে ক্রিস গেইল, তামিম ইকবাল, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ নবি ও তাসকিন আহমেদের শক্তিশালী চিটাগাং ভাইকিংসের সঙ্গে। আর হারলে তুলনামূলক কমজোরি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনার সঙ্গে। কি করবে ঢাকা? ফাইনালের পথে কঠিন প্রতিপক্ষ চিটাগাংকে বেছে নেবে? নাকি তুলনামূলক কমজোরি খুলনার বিপক্ষে কোয়ালিফায়ার খেলবে? এমন পরিস্থিতিতে সুযোগ থাকলে সবাই প্রায় তুলনামূলক কম শক্তির দলকেই বেছে নেয়। সেটা মাঠে ইচ্ছে করে হেরে প্রতিপক্ষকে জিতিয়ে দিয়ে নয়। নিজেদের সেরা একাদশের কয়েকজন নির্ভরযোগ্য ও অন্যতম চালিকাশক্তি পারফরমারকে বিশ্রাম দিয়ে শক্তি কমিয়ে মাঠে নেমে। এমন অলিখিত একটা রীতি শুধু ক্রিকেটেই নয়, ফুটবল কিংবা হকি- পৃথিবীর তাবৎ খেলায় এমন পরিস্থিতিতে দেশে ও বিদেশে বহু দলের শক্তি কমিয়ে মাঠে নামার ভুরি ভুরি নজির আছে। ক্রিকেটীয় যুক্তি ও ব্যাখায় এটাকে পাতানো খেলা বলার কোনো সুযোগ নেই। ভাবটা এমন থাকে, ‘আমার সামনে সেমিফাইনালের (এখানে কোয়ালিফায়ার) প্রতিপক্ষ বেছে নেয়ার সুযোগ আছে। আমি কেন সহজ প্রতিদ্ব›দ্বী ফেলে কঠিন দলকে বেছে নেব? খেলা শুরুর আগে প্লেয়ার লিস্ট দেখেই বোঝা গেল ঢাকা শক্তি কমিয়ে মাঠে নেমেছে। দলে নেই এবারের আসরে সাকিব বাহিনীর সবচেয়ে কার্যকর বোলিং অস্ত্র ডোয়াইন ব্রাভো। সঙ্গে দুই বিদেশি আন্দ্রে রাসেল ও এভিন লুইস। ‘আপনারা সবার ওপরে। হার-জিৎ যাই হোক না কেন, কিছুই আসে যায় না। এমন অস্থায় কোয়ালিফায়ারে তুলনামুলক সহজ প্রতিপক্ষকে পেতেই কি ইচ্ছে করে লাইন আপ দূর্বল করে মাঠে নামিয়েছে?’ খেলা শেষে রাতের প্রেস কনফারেন্সে এ তিন বিদেশিকে বসিয়ে মাঠে নামানো নিয়ে প্রশ্ন উঠল। ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ঝানু বোদ্ধার মতো জবাব দিলেন, ‘আমরা ম্যাচটি হালকাভাবে নিয়েছি তা ঠিক নয়। আমরা যেহেতু কোয়ালিফাই করে ফেলেছি, তাই রাসেল ও ব্রাভোকে বিশ্রাম দিয়েছি। রাসেল একটা ইনজুরি থেকে উঠেছে। আগের ম্যাচেও ও খুঁড়িয়ে খেলেছিল। তাই আমরা কোন ঝুঁকি নেইনি। আর ব্রাভো টানা ১১টা ম্যাচ খেলেছে, তাই তাকে বিশ্রাম দিয়েছি। আর লুইসের ইনজুরিটা এখনও সেরে ওঠেনি। যেহেতু অবস্থা তুলনামুলক সুদৃঢ়, তাই ঝুঁকি নেইনি। বাঁচা-মরার লড়াই হলে হয়তো খেলাতাম।’সামনে যেহেতু সুযোগ ছিল চিটাগাং ভাইকিংসকে পাশ কাটিয়ে খুলনাকে বেছে নেয়ার। তেমন কোন কৌশলী চিন্তা কি মাথায় খেলেছে? ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদের আবারো কৌশলী জবাব, ‘কার সঙ্গে খেলবো কোয়ালিফায়ারে, এমন কোন লক্ষ্য বা চিন্তা মাথায় ছিলো না। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল যে করেই হোক কোয়ালিফায়ারে যাতে সেরা ও সম্পূর্ণ ফিট দল নিয়ে মাঠে নামা যায়। তাতে করে দল নকআউট পর্বে এসে যেন সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারে- এমন ভাবনাই ছিল মাথায়। কেউ যদি ইনজুরিতে পড়ে যায় তাহলে নকআউট পর্বে সেরা দল পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই তিনজনকে বিশ্রাম দিয়ে একাদশ মাঠে নামানো হয়েছে।’ অবস্থানগত কারণে কৌশলী হবার সুযোগ মিলেছে। অতিবড় সমালোচকও মানছেন সেটা মাঠে ভাল খেলে অন্য প্রতিপক্ষদের পিছনে ফেলে লিগ টেবিলে একন নম্বর স্থান দখল করেই তা অর্জন করেছে ঢাকা। দেশ সেরা সাকিব তো মাঠেই ছিলেন। তারপরও তো এ খেলা নিয়ে সংবাদ সন্মেলনে কথা উঠবে। সাংবাাদিকরা হয়ত তীর্যক প্রশ্ন করতে পারেন। তা মাথায় রেখে কোন ক্রিকেটারকে না পাঠিয়ে মাঠের অভিজ্ঞ যোদ্ধা খালেদ মাহমুদ সুজনকেই প্রেস কনফারেন্সে পাঠানো হলো।তিনি সব প্রশ্নর জবাব দিয়েছেন অতি দক্ষতা ও চাতুরতার সঙ্গে। তবে রীতির ব্যাত্যয় ঘটিয়ে খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সাথে ঢাকা কোচের পাশাপাশি বসে প্রেস কনফারেন্সে কথা বলাটা চোখে লেগেছে। বিজয়ী দলের অধিনায়ক ও বিজিত দলের কোচ প্রেস কনফারেন্স পাশাপাশি চেয়ারে বসে। সচরাচর দেখা যায়না এমন দৃশ্য। এআরবি/আইএইচএস
Advertisement