মালয়েশিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ল্যাংকাউয়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খালেদা সাজেদুরের ‘বাংলা রেস্টুরেন্ট’। দেশটির পানতাই চেনাং এলাকায় অবস্থিত এ রেস্টুরেন্টটি ভ্রমণপ্রিয় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য দেশি মাছ, মাংস, ভাত, ডাল, সবজি, ভর্তা, চিকেন বিরিয়ানিসহ দেশীয় সব ধরনের খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছে।অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন কেন্দ্র ল্যাংকাউয়িতে একটি মাত্র বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট। মাছে ভাতে বাঙালি বছর খানেক আগেও বেড়াতে এসে খাবারের কষ্টে ভুগতো। কিন্তু বর্তমানে খালেদুন্নেছা খালেদার ঘরোয়া পরিবেশে রান্না খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। রেস্টুরেন্টটিতে অর্ডার করার পর পরই খালেদা গরম গরম খাবার রান্না করে দেন। আর ক্যাশবাক্স সামলান তার স্বামী।ল্যাংকাউয়িতে ভ্রমণকালে খালেদার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথটি খুব মসৃণ ছিল না। অনেক লড়াই সংগ্রাম করে আজ তিনি মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, সচ্ছল হয়েছেন আর্থিকভাবেও। রাজশাহীর মেয়ে খালেদা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করার পর ঢাকায় সানোফি অ্যাভেনটিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মোটামুটি ভালো বেতন পেলেও ছোটবেলা থেকেই নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নে বিভোর খালেদা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।মালয়েশিয়ায় আসার বিষয়ে খালেদা জানান, ২০১৩ সালে নগদ ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে দুই বছরের প্রফেশনাল ভিসায় স্থানীয় একটি মেরিন কলেজে ভর্তি হন। মাত্র দেড় বছরের শিশুকন্যাকে স্বামী সাজেদুল ইসলামের কাছে রেখে কুয়ালামপুর চলে আসেন। তবে মালয়েশিয়ায় আসার আগে এজেন্ট থেকে বলা হয়েছিল কলেজে ভর্তি হওয়ার এক মাসের মাথায় স্বামী ও সন্তানকে কাছে নিয়ে আসতে পারবেন। তাছাড়া এক বছরের কোর্স করা মাত্রই জাহাজে চাকরি নিশ্চিত।কিন্তু মালয়েশিয়ায় আসার পর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারেন শুধু পাস করলেই চাকরি হবে এমন বিন্দুমাত্র আশা নেই। অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থী পাস করে বছরের পর বছর বেকার বসে আছেন। পরে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে আসতে না পেরে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য কলেজের পড়াশুনা বন্ধ করে দেন খালেদা। তবে প্রফেশনাল ভিসা ও যোগ্যতা থাকায় একটি কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি নেন।চার মাস ওই কোম্পানিতে চাকরির পর অন্য একটি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে দুই মাসের ২ হাজার ৪শ’ রিঙ্গিত বকেয়া রেখেই চাকরি ছেড়ে দেন এবং এর মধ্যেই স্বামী আর সন্তানকে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসেন খালেদা। একইসঙ্গে স্বামী সাজেদুল ইসলাম গ্রাজুয়েট হওয়ায় তার জন্যও প্রফেসনাল ভিসার ব্যবস্থা করে নেন। এরপর ল্যাংকাউয়িতে স্বামী-স্ত্রী একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন তারা।খালেদা জানান, চাকরিতেও কোনো স্বাধীনতা ছিল না। যে পরিমাণ কাজের চাপ ছিল তাতে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও কাজ শেষ হতো না। পরে চাকরি ছেড়ে হোটেল ব্যবসায়ী বোন জামাইর পরামর্শে এ হোটেল ব্যবসা শুরু করি। তবে প্রথমে ব্যবসায় শুধু লোকসানই গুণতে হয়েছে। দেশ থেকে টাকা এনে তা রিঙ্গিতে (১৮ টাকা সমান ১ রিঙ্গিত) খরচ করতে খুব কষ্ট হতো। এক বছরের মধ্যে ১৫-১৬ লাখ টাকা খরচ করেও লাভের মুখ না দেখায় ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার কথা ভাবছিলেন।কিন্তু এভাবে হাল ছেড়ে দিতে মন সায় না দেয়ায় জায়গা বদল করে ম্যাকডোনালসের পাশে হোটেল খোলেন। এতে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। তিনি জানান, ল্যাংকাউয়িতে বছরের সব সময় ব্যবসা থাকে না। তবে কিছু কিছু সময় প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়। জার্মানিরা বাংলাদেশিদের মতো স্পাইসি ফুড পছন্দ করেন।ইতোমধ্যে খালেদা দেশ থেকে নিয়ে আসা ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে তার মেয়ে বাংলাদেশে একা মানুষ হওয়ার কষ্টটা তাড়া দেয় বলে জানান। তাই দু-এক বছর পর ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরে রাজশাহীতে হোটেল ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন তারা।এমইউ/আরএস/পিআর
Advertisement