পিকআপ ভ্যান বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন সামাদ মিয়া। সর্বশেষ সমিতি থেকে আরও ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে লেপ-তোষকের দোকান বড় করেছিলেন। দুই বাচ্চার বাবা সামাদের চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল। ব্যবসাও চলছিল বেশ। কিন্তু রোববার দুপুরের আগুনে সামাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই।রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ঢোকার মুখেই গলির রাস্তার পাশে সামাদের লেপ-তোষকের দোকান। অাগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সামাদের ছেলে সিয়াম ও স্ত্রী লাইজু বেগমকে সঙ্গে নিয়ে কড়াইল বস্তিতে উপস্থিত। নিজের দোকান দেখে যেন দিশেহারা কান্নায় ভেঙে পড়েন সামাদ।চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তোষক, বালিশ ও আগুনে পুড়ে যাওয়া তুলা। তখনও ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সামাদের স্ত্রীর বড় ভাই আগুনে পোড়া ছাই সরিয়ে কিঞ্চিত বেঁচে যাওয়া তুলা ও পোড়া তোষক কিংবা বালিশের তুলা সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন।ভস্মীভূত দোকানের ছাইয়ের উপর দাঁড়ানো সামাদের আহাজারিতে নির্বাক কোলে থাকা ছেলে সিয়ামও। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জাগো নিউজকে সামাদ বলেন, ‘আমার এখন কি হবে? কেমনে ঋণের ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করবো। আশায় বুক বাইন্ধা ব্যবসায় নামছিলাম। ব্যবসাও বেশ চলছিল। এখন কি হবে?’ তিনি বলেন, কড়াইল বস্তির দোকান মালিক সমিতির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ও গুলশানের একটি সমিতি থেকে নেয়া ১ লাখ টাকা পিকআপ ভ্যান বিক্রি করা পুঁজিতে যোগ করেছিলেন তিনি। ঋণ করা পুঁজিতে স্বপ্ন ছিল দিগন্ত জোড়া। শীত মৌসুমে লেপ-তোষকের বিক্রি চলছিল বেশ।সামাদ বলেন, ‘গতকাল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম বেড়াতে। আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসি। এসে দেখি সব শেষ।’ সামাদের স্ত্রী লাইজু বলেন, ‘জানি না এখন আমাদের কি হবে। ব্যবসা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। স্বামী-স্ত্রী মিলেই দোকান চালাচ্ছিলাম। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু আসল ও ঋণের টাকার পুঁজিও গেলো।’চারদিকে চিৎকার আর আহাজারি। সামাদ ও তার স্ত্রীর আহাজারির মাঝে চিৎকার করে উঠছিলেন সুমি, আছিয়া, সাফিয়া বেগম ও তাবেলা আক্তাররা। চলছিল স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের নিরবচ্ছিন্ন উদ্ধার অভিযানের তৎপরতা। উল্লেখ্য, রোববার বেলা ২টা ৪৯ মিনিটে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে আরো ১৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে।জেইউ/জেএইচ/পিআর
Advertisement