নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বৈঠকে বসেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। রোববার রাজধানীর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর নিজ দফতরে দুপুর ১টায় এ বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। বৈঠক শেষে চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে মামলা করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত না দিলে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত দেবে না বলে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতো দিন তাদের আচরণে ভালো ছিল, আমরা মামলা করিনি। এখন আরসিবিসি বলছে, কোনো টাকা ফেরত দেবে না। যেহেতু রিজার্ভের অর্থ নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে ছিল, তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার জন্যই নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে- এমন কারণ দেখিয়ে আরসিবিসি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে আর কোনো টাকা দেয়া হবে না। এর আগে ২৬ নভেম্বর আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে ফিলিপাইন যান। সেখান থেকে ফিরে এসে আনিসুল হক বলেন, রিজাল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতেই হবে। তিনি বলেন, অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে অঙ্গীকার করেছে। একইসঙ্গে ফিলিপাইনের সিনেটে এ ঘটনায় চলা স্থগিত শুনানি আবার শুরু করারও আশ্বাস দিয়েছে ফিলিপাইন সরকার। নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে হদিস না মেলা ৬৬ মিলিয়ন ডলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকেই (আরসিবিসি) পরিশোধ করতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ। রিজাল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানালেও লাভ হবে না।উল্লেখ্য, হ্যাকারদের একটি গ্রুপ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরি করার চেষ্টা করে। তবে পুরোপুরি সফল না হলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয় তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোড ব্যবহার করেই এই অর্থ চুরি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম এবং সুইফট কোড কন্ট্রোলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৩০টি পেমেন্ট অ্যাডভাইজ পাঠায় ফিলিপাইনের স্থানীয় ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের জন্য। এর মধ্যে চারটি অ্যাডভাইজ অনার করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, যার মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার সফলভাবে পাচার করতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আরসিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এসআই/এমইউএইচ/এনএফ/এনএইচ/এমএস
Advertisement