জাতীয়

নবান্ন উৎসবে আসর মাতালেন ফকির আলমগীর, বারী সিদ্দিকী

হেমন্তের বিকাল। ছুটির দিন। শীত এসেছে বটে, তবে শুষ্কতা এখনও তীব্র হয়নি। তাই বসন্তের মতোই মন যেন  উড়ু উড়ু। উড়ন্ত মনের মানুষেরাই এ দিন মিলেছিল রবীন্দ্র সরোবরে।নবান্ন উৎসব। বাউলের আসর। পিঠার গন্ধ। লাঠি খেলা, সাপ খেলা, বাঁদর খেলা, নাগর দোলা। সবই ছিল সেথায়। যান্ত্রিক শহরের রূপকে হরণ করা বাঁশের বাঁশি আর ঢাকের শব্দ মিলে গ্রাম বাংলার রূপকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। নবান্নের এমন আয়োজনে সবাই তখন উদাস বনে। বাউলিয়ানা ঢংয়ে আসর মাতালেন ফকির আলমগীর, বারী সিদ্দিকী, আব্দুল জব্বার, জানে আলমের মতো গুণী শিল্পীরা। বাউলের চিরায়িত সুরে শিল্পীরা গ্রাম বাংলার রূপ। গাইলেন বিজয়ের মাসে দেশের গানও। শিল্পীদের সুরে গাইলেন উৎসবে আসা দর্শকরাও।তিন দিনব্যাপী নবান্ন উৎসবের এ আয়োজন সত্যিই বদলে দেয় রাজধানীর ধানমণ্ডির ঝিলপাড়ের চিত্র। উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার সকালে গ্রাম বাংলার রূপ চিত্রায়িত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্গণ প্রতিযোগিতায়। নবান্নের নাচগান, পুতুল নাচ, নাগরদোলা,পুঁথি পাঠ, বায়োস্কোপ,গাজীর কিসসা, পালকি,লাঠি খেলা, সাপ খেলা ও বাঁদর নাচসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সমস্ত আয়োজনই ছিল উৎসবে।উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল পিঠা। ৩২টি পিঠার ঘরে হরেক রকম পিঠা-পুলির আয়াজন করা হয়। ভাপাপিঠা, নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, দোল পিঠা,পাটিসাপটা পিঠা, পাকান,আন্দসা, কাটা পিঠা, ছিটাপিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকিপিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, বিবিখানা,চুটকি, চাঁদ পাকান, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি,পানতোয়া, মালপোয়া, মেরাপিঠা, মালাই, কুশলি,ক্ষীরকুলি, গোলাপ ফুল,লবঙ্গ লতিকা, ঝালপোয়া,ঝুরি, ঝিনুক, সূর্যমুখী,নারকেলি, সিদ্ধপুলি, ভাজাপুলি, দুধরাজ, দুধকুলিসহ শতেক রকমের পিঠার পসরা নিয়ে বসেছিল দোকানিরা। সুস্বাদু এসব পিঠার বেচাবিক্রিও হয়েছে ভালো। দামও ছিল সাধ্যের মধ্যে। কথা হয় গোপালগঞ্জ পিঠা ঘরের দোকানি সোহেলের সঙ্গে। বলেন, ঢাকার বুকে এমন উৎসব মেলে না। বেচাকেনাও হয়েছে বেশ। নবান্ন উৎসবে বান্ধবীদের সঙ্গে এসেছেন রতিকা। বলেন, অসাধারণ আয়োজন। তিন দিনই এসেছি। এমন জায়গায় এমন উৎসব সবাইকে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। প্রতি বছরই এমন আয়োজন করা হলে আমরা শহুরে মানুষেরা গ্রাম্য আচারের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারব। মন গ্রামে ফিরতে চাইছে উল্লেখ করে বাবুল মোল্লা নামের আরেক দর্শক বলেন, আমার বাড়ি পাশেই। রবীন্দ্র সরোবরে মাঝে মধ্যেই অনুষ্ঠান দেখতে আসি। এই অনুষ্ঠানটি ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। প্রতি বছর এমন অনুষ্ঠান হওয়া সময়ের দাবি।রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে তিন দিনব্যাপী নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ‘প্রাণ চিনিগুড়া চাল নবান্ন উৎসব’ শিরোনামে এ আয়োজন চলে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বুধবার উৎসবের উদ্বোধন করেন বঙ্গ মিলারস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহানশাহ আজাদ। সবার জন্য উন্মুক্ত এ উৎসব চলে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বে তিনদিন গান পরিবেশন করেন দেশের বরণ্য বাউল শিল্পীরা।এএসএস/ওআর/এমএস

Advertisement