বিশেষ প্রতিবেদন

মানবিক কারণেই কিছু রোহিঙ্গাকে জায়গা দিতে হচ্ছে

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে পরপর তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজ-এর মুখোমুখি হন। বলেন, বিএনপি এবারে নির্বাচনে অংশ নেবেই এবং খালেদা জিয়ার প্রস্তাব হচ্ছে নির্বাচনী কৌশল। কথা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা এবং দেশের মধ্যকার সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দলের নতুন কমিটি নিয়েও। আজ থাকছে শেষ পর্ব।জাগো নিউজ :  মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চলছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। আপনি কি মনে করেন? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এই বর্বরতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এমন সময়ে কোনো সমাজ এই বর্বরতা মানতে পারে না। অথচ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে অনেকটাই নিশ্চুপ রয়েছে। বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তা দেখতে পাচ্ছি না। একইভাবে শান্তিতে যারা বড় বড় পদক পেয়েছেন, তারাও নিশ্চুপ। কোথায় তাদের মানবতা।জাগো নিউজ : রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেরও দায় রয়েছে। যদিও রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি অনেক আগে থেকেই। বাংলাদেশের সামর্থ্য এবং জনসংখ্যার বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। সামর্থ্য থাকলে সব রোহিঙ্গাকেই জায়গা দিতে পারতো সরকার। কিন্তু সে সুযোগ তো নেই। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাদের দেশেই নিরাপদে থাকুক। কারণ মিয়ানমারই তাদের দেশ। বিশ্ব সংস্থাকে এ নিয়ে কথা বলা উচিত। জাগো নিউজ : মৃত্যুর ভয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড়ছে। বাংলাদেশ সরকারও তো মিয়ানমার সরকারকে এ ব্যাপারে চাপ দিতে পারে? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা মানবতার পক্ষে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মানবিক কারণেই আমাদের কিছু রোহিঙ্গাকে জায়গা দিতে হচ্ছে। আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে এই বর্বরতার ব্যাপারে অবহিত করেছি। দায় থেকেই আমরা কথা বলছি। শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। কারও মানবতা হরণ হোক, তা চাইতে পারি না। জাগো নিউজ : মানবতা লংঘিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাড়ি পোড়ানো গন্ধ ছড়াচ্ছে এখনও। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : গুলশানের হামলার পর আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে কতো চাপ এসেছে। এর পরেও দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার এ বিচার সম্পন্ন করেছে।স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মরণ কামড় দেবে- এটি আমাদের ধারণা ছিল। কল্যাণপুর ও আজিমপুরেও জঙ্গিদের প্রস্তুতি ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জে হামলা। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে, তা থামিয়ে দেয়ার জন্যই এমন ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছে সরবারবিরোধীরা। জাগো নিউজ : নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জে হামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত, এটি তো গণমাধ্যাম, মানবাধিকারকর্মী এবং নির্যাতিতরা অভিযোগ করছে? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনুকম্পা দেখাবেন না, তা বলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ কখনোই এই ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই সাম্প্রদায়িকতার বীজ উপড়ে ফেলার জন্য। যেখানেই সাম্প্রদায়িকতার নামে নির্যাতন, সেখানেই আমরা সোচ্চার। জাগো নিউজ : অনেকেই তো অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগও সংখ্যালঘু ইস্যুতে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। এই সরকারের আমলে যতগুলো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিরই বিচার হয়নি, তদন্ত প্রকাশ পায়নি। এ নিয়ে কী বলবেন? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : ঘটনা ঘটলেই বিজ্ঞজনেরা বিচার দাবি করেন। ঘটনা ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে বিচার করা যায় না। ঘটনার তদন্ত করতে হয়। সঠিক বিচার করতে হলে, সঠিক তদন্ত করতে হয়।জাগো নিউজ : মানুষ বিচার দেখে না বলেই এমন অভিযোগ করে। ঘটনা দিয়ে ঘটনা চাপা দেয়াই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই মানুষের অভিমত? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার শুরু করতেই ২১ বছর সময় লেগেছে। আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল একটি গোষ্ঠী। জাগো নিউজ : কিন্তু এসব ঘটনার বিচারে তো কোনো আইনি বাধা নেই? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা সব বাধা অতিক্রম করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছি। চার দশক পর আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। যারা সংখ্যালঘু নির্যাতন করছে, তাদেরও বিচার হবে। এসব বিচার সময়ের ব্যাপার। অপেক্ষা করতে হয়। যারা খুব তাড়াহুড়া করে বিচার চাইছে, তারা অপরাধীদেরই উৎসাহিত করছেন। কারণ সঠিক অপরাধীকে শাস্তি দিতে হলে সঠিকভাবে তদন্ত করতে এবং সেক্ষেত্রে সময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। জাগো নিউজ : কিন্তু তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করছে কিনা? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আপনাকে তো পেছনের ঘটনাগুলো সমাধান করে আসতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পরেই তো আমরা ২০০১ সালের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিচারে অগ্রগতি দেখতে পাবো। সবকিছুর তো ধারাবাহিকতা আছে। জাগো নিউজ : কিন্তু অপেক্ষা কি ২১ বছর বা চার দশক।খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা কখনোই বলিনি বিচার হবে না। বিচার অবশ্যই হবে। কিন্তু বিচার চাইলে আপনাকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি প্রতিশোধ চান, তাহলে ঘটনার পরেই হতে পারে। কিন্তু প্রতিশোধ দিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনাকে এগোতে হবে এবং এর জন্য অবশ্যই আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। জাগো নিউজ : প্রক্রিয়া, অপেক্ষা অপরাধ বাড়াচ্ছে কিনা? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমি তা মনে করি না। বিচার তো হচ্ছে। সব তো একদিনেই শেষ হবে না।  যারা অপরাধ করছে, তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে। কেউ এখানে রক্ষা পাবে না। গণতন্ত্রের সঠিক রাস্তায় চলার জন্য আমরা প্রতিটি ঘটনার বিচার করবোই।জাগো নিউজ : আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে তারুণ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কী বলবেন নতুন কমিটি নিয়ে? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন বর্ণাঢ্য সম্মেলন আর কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। এটি শুধু আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছিল না, এটি ১৬ কোটি মানুষের সম্মেলন ছিল।  কমিটি গঠনের পরেই সারাদেশে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে আওয়ামী লীগ আরও উজ্জীবিত হবে।জাগো নিউজ : অনেকেই বলছেন, সম্মেলন বর্ণাঢ্য ছিল কিন্তু চমকহীন।খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : চমক বড় কথা নয়। সম্মেলন সঠিকভাবে করতে পারা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের সৌন্দর্য এবং দায়িত্ব। কে এলো আর কে এলো না, তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সম্মেলনের মূল বার্তা। মানুষের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছে, সেটাই আমাদের চমক।জাগো নিউজ : প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দলে আসা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল।খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তিই আমাদের কাছে শ্রদ্ধার, সম্মানের। তারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই নক্ষত্র। ফলে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে পদ কোনো বিষয় নয়। তিনি তার যোগ্যতা দিয়েই সব প্রমাণ করছেন। দলে থাকা না থাকার কোনো বিষয় নয়। তিনি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গেই আছেন। যে পরিবার একটি দেশ উপহার দিতে পারে, সেই পরিবারের সবাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যখন যেখানে যার দরকার, তারা সেখানেই সঠিক ভূমিকা পালন করছেন এবং আগামীতেও করবেন বলে মনে করি।জাগো নিউজ : কমিটিতে তারুণ্যের প্রাধান্য দিতে গিয়ে জ্যেষ্ঠদের অবমূল্যায়ন হলো কিনা? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : না। যোগ্যতা অনুসারে সবার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারও অবমূল্যায়ন হয়নি বলেই সবার মধ্যে এমন উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে।এএসএস/এআরএস/এনএইচ/পিআর

Advertisement