মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস অশুভ মরুঝড়ের মতো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। শুরুতে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী বলে পরিচিতি লাভ করলেও এখন তারা বিভিন্ন দেশে খুঁটি গাড়ছে। বলা যায়, যেখানে সুযোগ মিলছে, সেখানেই শেকড় ঢোকাচ্ছে আইএস।গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আইএস একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির সমুদ্র সৈকতে এক সারিতে বসানো হয়েছে কমলা পোশাক পরা ২১ মিসরীয় খ্রিষ্টানকে। প্রত্যেকের পেছনে কালো পোশাকে একজন করে জঙ্গি। এরপরই ওই মিসরীয় ব্যক্তিদের শিরশ্ছেদ করা হয়। এই ইরাক ও সিরিয়ার বাইরে আইএসের এই ধরনের শিরশ্ছেদের ঘটনা এই প্রথম। এর আগেও এই জঙ্গি গোষ্ঠী পাশ্চাত্যের কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীর শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও প্রকাশ করেছে।ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের অংশবিশেষ নিয়ে একটি অঞ্চলজুড়ে ‘খিলাফত’ পদ্ধতির ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইএস। তারা বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিমধ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী লড়াইয়েও সংগঠনটি প্রভাব বিস্তার করছে।লিবিয়ায় এই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর আইএস সম্পর্কে বিশ্লেষকেরা যা ধারণা করছিলেন, তা পুরোপুরি বদলে গেছে। তারা বলছেন, আইএসের বিস্তার সম্পর্কে আগে যা ধারণা করা হচ্ছিল, এর চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয় পড়ছে এই সংগঠনটি।এটি হয়েছে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইয়েমেনের জঙ্গিরা আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার পর থেকে। আবু বকর আল-বাগদাদি নিজেকে তাঁদের অধিকৃত অঞ্চলের ‘খলিফা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।|মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিনসেন্ট স্টুয়ার্ট এ মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদকে এই বলে সতর্ক করেন, আলজেরিয়া, মিসর, লিবিয়ায় শাখা বিস্তারের মাধ্যমে এই গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পা রাখতে শুরু করেছে।আলজেরিয়ায় পর্যটকের মাথা কেটে নেওয়ার ঘটনা, মিসরের সেনা ঘাঁটিতে হামলা, ত্রিপোলির অভিজাত হোটেলে আত্মঘাতী হামলা, ইত্যাদি ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রচার করে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে জানান দেয় আইএস। মূলত সহিংসতায় নিজেদের প্রভাবের বিষয়টিকেই বড় করে তুলে ধরছে তারা।সন্ত্রাস ও সহিংসতার পরিধি বিস্তারে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আইএসের মিল রয়েছে। এরপরও দুটি সংগঠনের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দৃশ্যমান। আল কায়েদার নেতারা সাধারণত গোপন আস্তানায় লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। ইয়েমেন এবং উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকায় আল কায়েদার কর্মকাণ্ডে এর প্রমাণ মেলে। কিন্তু আইএসের কর্মকাণ্ডে রাখঢাকের বালাই নেই। তারা প্রকাশ্যে নানা রকম সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জশ আর্নেস্ট বলেন, আইএসের জঙ্গিদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য নিরূপণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আইএসের কমান্ডারদের সম্পদ, সংগঠনটির ‘ব্র্যান্ড’ শক্তি এবং ইরাক ও সিরিয়ায় নাটকীয় উত্থান তাদের বিশাল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। গত নভেম্বরে মিসরে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আনসার বিদ আল মাকদিস আবু বকর আল বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যে আইএস মিসরে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করে। সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, মিসরের ওই গোষ্ঠীটির রয়েছে কয়েক বছরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও এক কোটি ২০ লাখ অস্ত্র।ইরাক ও সিরিয়ায় যেসব অঞ্চলে আইএস দখল করে নিয়েছে, সেসব অঞ্চলের সঙ্গে সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলো এখন আতঙ্কে আছে কখন যে আইএস তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়! লেবাননের নিরাপত্তা প্রধান সতর্ক করে দিয়ে এই মাসের শুরুর দিকে বলেছে, আইএস তাদের অভিযান পরিচালনার সুবিধার্থে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর দখল নিতে চাইছে।জানুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে আসা কয়েকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, তালেবান কমান্ডাররা আইএসে যোগ দিতে যাচ্ছেন। সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় আরব বিশ্বের বাইরে প্রথমবারের মতো খোরাসানে তারা পা রাখতে যাচ্ছে। দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনেএএইচ/আরআইপি
Advertisement