ইহসান মানে হলো সৎ কাজ বা নেক কাজ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা সৎ কাজ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ নেককার লোকদেরকে পছন্দ করেন।’ এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগিতে ভালো কাজ তথা ইহসানের গুরুত্ব অনেক বেশি।আল্লাহ তাআলার নিদের্শ ‘ইহসান’ তথা দুনিয়ার সব কাজে ইহসান বজায় রাখা জরুরি। যেহেতু ইহসান মানে সৎ কাজ করা, ভালো কাজ করা। সেহেতু সব কাজই হবে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী। যখনই দুনিয়ার প্রতিটি কাজ কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী হবে, তখনই তা নেক কাজ বা ভালো কাজ হিসেবে পরিগণিত হবে।ইহসান কি? এ প্রসঙ্গে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে জিবরিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আগমন করেন এবং তাঁর কাছে জানতে চেয়ে বলেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন।তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইহসান হলো- তুমি এমনভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ; যদি তুমি আল্লাহকে দেখতে না পাও; তবে অন্তরে একথা বিশ্বাস করো যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।ইহসানের মূল তাৎপর্য হলো মনের একাগ্রতা নিয়ে আল্লাহ তাআলার বিধান পালন করা। যারা একাগ্রতা নিয়ে এভাবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করবে, দুনিয়ার প্রতিটি কাজ ইহসানের সঙ্গে করবে; কুরআনে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন।তাই ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন বা পরস্পরের সম্পর্ক ও সামাজিক সম্প্রতির কাজে ইহসান তথা জবাবদিহির মানসিকতা অত্যন্ত জরুরি। আর সব কাজে ইহসানের মূল তাৎপর্য হলো- মানুষ নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও তা পছন্দ করা। সব সময় ভালো ও কল্যাণমূলক কাজ করা।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর তা অপরের জন্য পছন্দ না কর; সে পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না।’অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়, যার আচার-ব্যবহার সবচেয়ে ভালো এবং যে উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যের অধিকারী।’হাদিসে আরো এসেছে, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে ব্যক্তি, যে অন্য মুসলমানকে তার জিহ্বা এবং হাত থেকে নিরাপদ রাখে। অর্থাৎ কোনোভাবেই যেন এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে অন্যায়ভাবে কষ্ট না দেয়।পরিশেষে...দুনিয়ার সব কাজে ইহসান অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। কোনো মুসলমানকে কষ্ট না দেয়া, পরোপকারে আত্মনিয়োগ করা, মানুষের কল্যাণে সচেষ্ট থাকা, অসহায়-নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবই মুহসিন ব্যক্তির অন্যতম কাজ।এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বিশ্বমানবতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা ইহসান অবলম্বন করো।’ দুনিয়ার প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর নিকট জবাবদিহির মানসিকতায় নিজেকে তৈরি করো। তবেই তা হবে সৎ কাজ।যখনই বান্দা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মেনে ভালো কাজ করবে, আর তখনই আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ভালোবাসবেন বলে কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সর্বদা ভালো কাজ করার মাধ্যমে মুহসিন বান্দা হিসেবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement