দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামের আলু যাচ্ছে রাশিয়া

কুড়িগ্রামের আলু যাচ্ছে রাশিয়ায়। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ আলু রফতানি করছে। এর আগে এ অঞ্চলের আলু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা রফতানি হতো। এর সঙ্গে যুক্ত হলো রাশিয়া। ফলে এ এলাকার আলু চাষিদের মুখে হাঁসি ফুটেছে।স্থানীয় কৃষকরা জানায়, টানা অবরোধের সঙ্গে হরতাল যুক্ত হওয়ায় পরিবহন সংকটে মৌসুমের শুরুতে আলুর বাজার পড়ে গিয়েছিল। ছিল না ক্রেতাও। বাজার মন্দা থাকায় জমি থেকে আলু উত্তোলন করতে পারছিল না চাষিরা। প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল জাতভেদে চার থেকে ছয় টাকা। এ অবস্থায় লোকসানের শঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছিল চাষিরা। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে বিদেশে আলু রপ্তানি এবং হিমাগারে সংরক্ষণ করায় দাম ক্রমে বাড়ছে। এখন আলুর দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। প্রতি কেজি আলু ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানি করে অ্যাগ্রোবেন কম্পানি। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কুয়েত পল্লী এলাকায় ওই কম্পানির কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কম্পানির উদ্যোগে সাড়ে তিন বিঘা জমির ওপর একটি বড় চালাঘর নির্মাণ করা হয়েছে। রপ্তানির জন্য আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের নানা ধাপে বেশ কিছু শ্রমিক কাজ করছে। এ কারণে খুশি এলাকার কৃষি শ্রমিকরা। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছে নারীরাও। জমি থেকে আলু সংগ্রহের পর এখানে আলু বাছাই, প্যাকিং, সেলাই, ট্রাকে লোডসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকছে দেড় শতাধিক শ্রমিক।ওই কারখানায় কাজ করা শ্রমিক ওবায়দুর বলেন, দৈনিক ২০০-২২০ টাকা হারে মজুরি পাই। নারী শ্রমিকরাও ১২০ টাকার বেশি পায়। আলু রপ্তানি শুরুর পর থেকে কাজ নিয়ে আর ভাবতে হচ্ছে না।অ্যাগ্রোবেন কম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গ্রানুলা ও কার্ডিনাল জাতের আলু যাচ্ছে বিদেশে। হলুদ প্যাকেটে পাঁচ কেজি ও ১০ কেজি ওজনের আলু রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১০০-১৫০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ৬.২৫ পয়সা ও ১৫০ গ্রাম-৫০০ গ্রাম আকারের আলু ৭.৩০ পয়সা দরে কিনছে কম্পানি। এরপর তা পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বর্তমানে মালয়েশিয়াতে আলু পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩২৪ মেট্রিক টন (১০০০ কেজিতে এক মেট্রিক টন) আলু রপ্তানি করেছে এই কম্পানি। আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের আলু যাচ্ছে রাশিয়ায়।রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অবরোধের কারণে ট্রাকভাড়া দ্বিগুণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছতেও দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। সরকারিভাবে নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবহন সুবিধা দিলে তাঁরা রপ্তানি কার্যক্রম জোরেশোরে চালাতে পারবেন।অ্যাগ্রোবেন কম্পানির ব্যবস্থাপক রাতুল আহমেদ বলেন, রাশিয়ায় আমরা ১০০ কনটেইনার (একটি কনটেইনার ২৭ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন) আলু পাঠাব। এ জন্য প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ে ক্লিয়ারেন্সের (অনুমতিপত্র) জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটা পেলেই রপ্তানি শুরু হবে।তিনি আরও বলেন, গত বছর ট্রাকের ভাড়া ছিল ২৪ হাজার টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। ফলে প্রতি কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা শুধু পরিবহন খরচ বেড়েছে। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রাক যেতেও সময় লাগছে বেশি। এতে শিপের সিডিউল (সময়সূচি) পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাশিয়া থেকে একটি প্রতিনিধিদল কুড়িগ্রামে এসেছিল। তারা সরেজমিনে আলুক্ষেত ঘুরে দেখেছে। যাওয়ার সময় তারা নমুনা হিসেবে কিছু আলু নিয়ে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেই আলুতে কোনো রোগজীবাণু পাওয়া যায়নি। সে দেশের (রাশিয়া) সরকারের ক্লিয়ারেন্সের ভিত্তিতে রাশিয়ায় আলু যাচ্ছে।এএইচ/আরআইপি

Advertisement