তথ্যপ্রযুক্তি

যেভাবে ব্যবহার করবেন ৯৯৯ জরুরি সেবা

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক (৯৯৯) সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে সরকার।৯৯৯ নম্বরে যে কোনো মোবাইল নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে বাংলাদেশের নাগরিকরা জরুরি মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাবেন।আর এই সেবাটি ব্যবহারে সচেতনতার জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেইজে পরামর্শমূলক এক পোস্ট দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।এই পোস্টে তিনি লিখেছেন, কেমন করে ব্যবহার করবেন ৯৯৯ জরুরি সেবা?তিনি লিখেছেন- ‘৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত এজেন্টরা জরুরি মুহূর্তে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।’জুনাইদ আহমেদ পলক তার ওই পোস্টে ৯৯৯ নম্বরে কল করার সময় নাগরিকদেরকে ১১টি বিষয়ে খেয়াল রাখার কথা লিখেছেন। তা হলো-১. ঠিকানা প্রদান  জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হলো সাহায্য প্রার্থীর লোকেশন বা ঠিকানা জানা। অপারেটকে (অ্যাজেন্ট) যতটা সম্ভব আপনার সঠিক অবস্থান বলুন, এক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলার নামও বলতে হবে। আপনার সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববর্তী বড় রাস্তা, বাজার বা হাইওয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেন। ২. প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানআপনাকে সঠিক সেবা প্রদানের জন্য অপারেটর বা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এক্ষেত্রে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবেন, যাতে তারা যথাযথ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার প্রয়োজন জানাতে পারেন। অথবা আপনাকে জীবন রক্ষাকারী কিছু পরামর্শ বা করণীয় সম্পর্কে জানাতে পারেন। এ ধরনের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করে অপারেটরকে সহায়তা করুন। অবশ্য আপনার প্রয়োজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে হয়তো একই প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার দেয়া লাগতে পারে। বিশেষ করে ৯৯৯ নম্বর থেকে কল ট্রান্সফার হয়ে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হলে এমনটা হতে পারে।  ৩. ধৈর্যশীল থাকাকলের সময় শান্ত থাকুন এবং আপনার সমস্যা বিস্তারিত তুলে ধরুন। অনেক সময় দেখা যায়, নাগরিক তার সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে আবেগে আক্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থাকেন। এমনটা করা উচিত নয়। এর ফলে অপারেটরের মূল সমস্যাটা ধরতে ও প্রকৃত সাহায্য করতে অসুবিধা হয়। মনে রাখবেন, আপনি যত শান্ত থাকবেন, আপনি তত বিশদভাবে আপনার ঘটনার বর্ণনা দিতে পারবেন এবং অপারেটরও আপনাকে তত ভালভাবে সেবা প্রদান করতে পারবেন। ৪. আপনার জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করুনজরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সময় কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে তথ্য দিন। আপনি নিজে নাকি আপনার কাছের কেউ সমস্যায় পড়েছেন? কীভাবে হলো? আপনার কোন ধরনের জরুরি সেবা প্রয়োজন – অ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা? কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন– আহত ব্যক্তির অবস্থা কি খুবই আশঙ্কাজনক? তার চেতনা আছে কি? তিনি কি শ্বাস নিতে পারছেন? তার শরীর থেকে কি রক্ত বের হচ্ছে? আপনার সাধ্যমত রোগীর অবস্থা বলার চেষ্টা করুন, আপনার কথা বলতে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে দিয়ে বলাতে পারেন। কল না কেটে লাইনে থাকুন।৫. অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুন৯৯৯ সার্ভিসের মাধ্যমে যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়, তা কিন্তু বিনামূল্যে নয়। বস্তুত বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষই বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করে না। আর ৯৯৯ যেভাবে কাজ করে, নাগরিকের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ফলে অ্যাম্বুলেন্সের ধরণ, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। তাই অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এই সকল তথ্য অপারেটরকে সঠিকভাবে প্রদান করুন। মনে রাখা প্রয়োজন, ৯৯৯ সার্ভিস থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয় না। ৬. ফায়ার সার্ভিসের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুনশুধু অগ্নিকাণ্ড নয়, ফায়ার সার্ভিস আরো নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা, আটকে পড়া মানুষ বা পশু, পাখি উদ্ধার ইত্যাদি। ফলে এই ধরনের সেবার প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অপারেটরকে সহায়তা করুন। চলন্ত অবস্থায় এমন ঘটনা দেখলে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করুন, আপনার ফোন করার পূর্বেই ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের কোনো ইউনিট সেখানে পৌঁছেছে কি না।  ৭. পুলিশের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুনজরুরি পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর আপনাকে নিকটস্থ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। আপনি সেখানে আপনার অভিযোগটি জানাতে পারবেন। যেহেতু রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯ নম্বরে কল রেকর্ড করা হয়ে থাকে, তাই পুলিশের সঙ্গে কথা বলার জন্য সঠিক তথ্য প্রদান করুন। শত্রুতাবশত কাউকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে । পুলিশি সাহায্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়। কারণ লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকে ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না। ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনার করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।  ৮. অপরাধীর বর্ণনা দিনআপনি যদি কোনো অপরাধ ঘটতে দেখেন তাহলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছান। যত দ্রুত সম্ভব ৯৯৯ নম্বরে কল করুন। আপনি অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানান কিংবা কাউকে সন্দেহ করেন কি না তাও জানান। অপরাধীর হাতে অস্ত্র ছিল কি না জানান। অপরাধী দেখতে কেমন? তার ধর্ম? আনুমানিক বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাপড়ের রঙ প্রভৃতি তথ্য দিন। অপরাধী এখন কোথায়? তারা কি পালিয়েছে? কোন দিকে গেছে? তাদের সঙ্গে কোনো গাড়ি ছিল কি না? কি গাড়ি? গাড়ির মডেল, রঙ এবং গাড়ির সাইজ কতটুকু? এমনকি গাড়ির নম্বরের অংশবিশেষ প্রভৃতি তথ্য দিন।  ৯. ফোন খোলা রাখুনআপনি যদি কোনো মোবাইল ফোন থেকে কল করে থাকেন তাহলে আপনার নম্বরটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যেকোন মুহূর্তে আপনার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে। এর বাইরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ১০. সচেতনতা তৈরি করুন৯৯৯ ইমার্জেন্সি সার্ভিসে বিনা কারণে প্রতিদিন প্রচুর শিশু ফোন করে থাকে। এর ফলে প্রকৃত বিপদগ্রস্থরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। সময় ও সুযোগ করে আপনার সন্তানদের শেখান কীভাবে এবং কখন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে হবে। কখন ফোন করবে না সেটিও শেখান। ১১. প্রতিটি কলই গুরুত্বপুর্ণপ্রতিটি কলই গুরুত্বপূর্ণ সেটা ফলস কলই হোল আর প্রাঙ্ক কল হোক। যদিও এসব কল প্রকৃত জরুরি সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। ভুয়া কলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে। আপনার অসতর্কতার কারণে যাতে ৯৯৯ নম্বরে কল না যায় সেজন্য আপনার মোবাইলটি লক করে রাখুন।   শেষ কথায় পলক লিখেন, আপনার জন্য অপারেটররা অপেক্ষা করছে। ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন।এএস/জেডএ/পিআর

Advertisement