বিশেষ প্রতিবেদন

যাত্রা পথে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিমান বাংলাদেশ

চলতি বছরের ৮ জুন। সৌদি আরবের সফর শেষ করে দেশে ফিরছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীরা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার মুহূর্তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ধাতব বস্তু দেখতে পান পাইলট। অবতরণ না করে ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করেন পাইলট। এরপর কর্মকর্তারা সেই ধাতব বস্তু সরানোর পর বিমানটি অবতরণ করে। ততক্ষণে প্রায় ২০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি আকাশে থাকে। এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বরখাস্ত করা হয় বিমানের ট্রাফিক কন্ট্রোলের দুই কর্মকর্তাকে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট অবতরণের কথা জানার পরও কেন এ অব্যবস্থাপনা তা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো খোলাসা করেনি। এরই মাঝে আবার একই ঘটনার শিকার হলেন প্রধানমন্ত্রী। রোববার প্রথমবারের মতো হাঙ্গেরি সফরে যাওয়ার সময় ঘটল বিমানের ত্রুটির ঘটনা। হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে জরুরি অবতরণ করতে হয় তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদ বিমানবন্দরে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-১০১১) ‘রাঙ্গা প্রভাতে’  ৯৯ জন যাত্রী ছিলেন। এছাড়া চারজন ককপিট ক্রু, ২০ জন কেবিন ক্রু এবং চারজন এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। একই দিন বিমানের লন্ডন ফ্লাইটেও ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটি। ওই ফ্লাইটটিও জরুরি অবতরণ করে একই বিমানবন্দরে। এর আগে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ছেড়ে আসা বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেই ফ্লাইটে যাত্রী ও ক্রু মিলে ২০৬ যাত্রী ছিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরপরই সেখানে আগুন ধরে যায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পান সেই যাত্রীরা। ওই ফ্লাইটে আরো উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফরেও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। এর আগে চলতি বছরের ৭ আগস্ট ওমানের রাজধানী মাস্কাটগামী বিমানের ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করে ভারতের রায়পুর বিমানবন্দরে। অল্পের জন্য রক্ষা পান ১৭৩ যাত্রী। সম্প্রতি বিমানের আরেকটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৩৬ যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুর যাত্রা করেছিল। বিমানটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পরপরই বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাইলট জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন। পরে মেরামতের ৩ ঘণ্টা পর ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়ে। ‘আকাশে শান্তির নীড়’ স্লোগান/ট্যাগলাইনে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান। পরবর্তীতে নতুন করে এর নামকরণ করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু প্রায় ৪৪ বছর আগের এই প্রতিষ্ঠানটি বিমান কেনা থেকে শুরু করে মুনাফা কিংবা গুণগত সেবা কোনোটিই দিতে পারেনি। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৫টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৩টি সচল রয়েছে। বাকি দুটির অবস্থা নাজুক। সচল বিমানগুলো দিয়ে মোট ১৫টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ রুট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ। তবে বছরের পর বছর লোকসানই গুনছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। এআর/এসএইচএস/জেএইচ/জেডএ

Advertisement