ফিচার

সমুদ্রসৈকত থেকে জাহিদের পথচলা

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। গত বছরের ডিসেম্বরেও ছেলেটি আজকের ছেলেটি ছিল না। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের মাথা মালিশ ও বিভিন্ন আঞ্চলিক গান শুনিয়ে মা আর চার ভাই-বোনের সংসার চালাতো। কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর না আসতেই ছেলেটি মাতিয়েছে আন্তর্জাতিক লোকসংগীতের উৎসব ‌‘ঢাকা ফোক ফেস্ট’। হ্যাঁ, যার কথা বলছি, সেই ছেলেটি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাপলাপুর চরপাড়া এলাকার জাহিদ।তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাবা নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার মায়ের যখন বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তখন জাহিদের বয়স চার বছর। সেই থেকে শুরু হয় জাহিদের সংগ্রামী জীবন। কাঁধে আসে পরিবারের ভার। তাই বড় ভাই শুরু করেন সমুদ্র পাড়ে কলা বিক্রির কাজ। জাহিদ মুঠোফোনে দুটি হিন্দি ও ১৮টি আঞ্চলিক গান শুনে মুখস্ত করে পর্যটকদের শোনাতে থাকে। এভাবেই চলতে থেকে মা আর চার ভাই-বোনের সংসার।২০১৫ সালের ডিসেম্বর। কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ও তার পাঁচ বন্ধু। পেশার কারণে তখন ইমরান হোসেনকে গান শোনাতে আসে জাহিদ। তার আঞ্চলিক সেসব গান শোনায় ইমরানদের। জাহিদের গানে মুগ্ধ হন ইমরান। একপর্যায়ে ইমরানের ইউকেলেলির সুরে গান শুরু করে জাহিদ। সেই সময় ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ নামের একটি আঞ্চলিক গানের ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করেন ইমরানের এক বন্ধু। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেই ভিডিও ফেসবুক আর ইউটিউবে ছাড়েন ইমরান। সেই থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি জাহিদের। শুরু হয় তার ভাগ্যের চাকা ঘোরা।ফেব্রুয়ারিতে ইমরানের ছাড়া সেই ভিডিও ইন্টারনেট দুনিয়ায় ব্যাপক ঝড় তোলার বেশকিছু দিনের মধ্যেই ইউটিউবে জাহিদের গান শুনে সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জাহিদকে চাকরি দেয়। তাদের হোটেলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জাহিদ পরিবেশন করবে আঞ্চলিক গান। এছাড়া হোটেল সায়মন কর্তৃপক্ষ জাহিদকে কলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে।অন্যদিকে জাহিদ বহুবার ইমরানের সঙ্গে ঢাকায় আসে। গান গেয়ে যায় বেসরকারি রেডিও চ্যানেলগুলোতে এবং অংশ নেয় ইউটিউব ভিডিও শুটে। একসময় জাহিদ কাজ করে মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের একটি বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনটিতে জাহিদের সঙ্গে ইমরান হোসেনের যেভাবে দেখা হয়েছিল, সেটি দেখানো হয়। সর্বশেষ জাহিদ মাতিয়েছে ‘ঢাকা ফোক ফেস্ট-২০১৬’। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ‘মধু হই হই’ গানটি পরিবেশন করে জাহিদ।এ ব্যাপারে জাহিদের অাবিষ্কারক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তিন মাসে ছাপ্পান্ন বার যে উদ্দেশ্য নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছিলাম; আমার সে উদ্দেশ্য আজ সফল। জাহিদকে এখন সবাই চেনে। কিন্তু জাহিদের পড়ালেখা সেভাবে হচ্ছে না। আমি চাই জাহিদ পড়ালেখায় আরো বেশি মন দিক। আরো বেশি সফলতা অর্জন করুক।’আমরাও চাই ইন্টারনেটের কল্যাণে হাজারো ইমরান লাখো জাহিদের জন্ম দিক। আর সেসব জাহিদরা জয় করুক সমুদ্রসৈকত থেকে ফোক ফেস্ট এবং ফোক ফেস্ট থেকে বিশ্ব।এসইউ/

Advertisement