আন্তর্জাতিক

‌‘হত্যাচেষ্টায় বেঁচে যাওয়ার পদক থাকলে আমি স্বর্ণ জিততাম’

ছয় শতাধিকেরও বেশিবার হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বাঁচলেও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদূতের কাছে হেরে গেলেন কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দেশটির রাজধানী হাভানায় ৯০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাকে নিয় বেশ বিতর্ক থাকলেও ১৯৫৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৫০ বছরের শাসনকালের অনেক অংশই কেটেছে মার্কিন সরকারের রোষাণলের মুখে। তাকে হত্যাচেষ্টার বিষয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, অলিম্পিকে যদি হত্যাচেষ্টায় বেঁচে যাওয়ার পদক থাকতো, তাহলে আমি স্বর্ণ পদক জিততাম।কাস্ত্রোর নিরাপত্তাকর্মী ফাবিয়ান এসকালানতে দাবি করেছেন, কাস্ত্রোকে হত্যার জন্য ৬৩৮ বারেরও বেশি পরিকল্পনা করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। জেমস বন্ডের চলচ্চিত্রের গুপ্তহত্যার মতই কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৬০ সালে কিউবার এই নেতাকে কলমে বিষপ্রয়োগে, সিগারেট বিস্ফোরণসহ মাফিয়া স্টাইলে অসংখ্যবার হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে সিআইএ। তবে হত্যা চেষ্টার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল কাস্ত্রোর সাবেক স্ত্রী মারিটা লোরেঞ্জকে দিয়ে সিআইএর বিষমিশ্রিত ক্যাপসুল খাওয়ানোর চেষ্টা।বিপ্লবী এ নেতার প্রেমিকা লোরেঞ্জ কিউবায় বসবাস করতেন। গর্ভধারণের পর তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। এ সময় সিআইএর পাতানো ফাঁদে পড়েন তিনি। সিআইএর পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়, গর্ভের শিশুকে নষ্ট করার জন্য কাস্ত্রো গোপনে গর্ভপাতের ফন্দি এটেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভালোর জন্য কিউবায় ফিরে গিয়ে কাস্ত্রোকে হত্যায় সিআইএর প্রস্তাবে রাজি হন তিনি। তাকে দেয়া হয় সাধারণ একটি চিত্রনাট্য : কাস্ত্রোর পানীয়তে বিষমিশ্রিত একটি ক্যাপসুল মেশানোর দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। সিআইএর পরিকল্পনা মত সবকিছুই করেন কাস্ত্রোর এই প্রেমিকা। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাস্ত্রোর হাতে ধরা পড়েন। পরে লোরেঞ্জের হাতে একটি বন্দুক তুলে দিয়ে তাকে গুলি করার নির্দেশ দেন। লোরেঞ্জ বিপ্লবী কাস্ত্রোকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে রাজি হননি। ওই সময় কাস্ত্রো বলেন, আমি মনে করেছিলাম, সে আমাকে গুলি করতে যাচ্ছে, কিন্তু আমার হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে বলে, তুমি কী আমাকে হত্যা করতে পারবে? এভাবে কিউবার এই বিপ্লবী নেতাকে একের পর এক হত্যাচেষ্টা চলতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরের কিউবার শাসন ক্ষমতা থেকে বাতিস্তা সরকারকে হটিয়ে ১৯৫৯ সালে কিউবার ক্ষমতায় আসেন কাস্ত্রো। শত শত বার শত্রুর হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে যান তিনি। বেসবল মাঠে, গাড়ি বিস্ফোরণে, গ্রেনেড হামলাসহ কোনো চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। সূত্র : ডেইলি মেইল, সিএনএন।এসআইএস

Advertisement