শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি মো. রাসেল শিকদারকে। ব্যাট-বল হাতে নিয়ে নেমেছেন ক্রিকেট মাঠে। রাসেলের ডান হাতে সমস্যা। স্বাভাবিক কোনো কাজ দুই হাতে করতে পারেন না। এমন অবস্থায় অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে তার চলার কথা। কিন্তু রাসেলের ‘বাধা’ হয়েছে তার স্বপ্নে।রাসেল শিকদার যখন খুব ছোট, মা-বাবার সঙ্গে শরীয়তপুরে থাকতেন, তখন টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখতেন। ইচ্ছে হতো জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলতে। রাসেল যখন ছোট হঠাৎ করে টাইফয়েট জ্বরে তার ডান হাতে সমস্যা হয়ে যায়। তবুও স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে। অবাস্তব, অকল্পনীয় বা অসম্ভব বলে এত দিনে যে ভাবনাটা ছিল, সেটা এক নিমেষে উড়ে গেছে শরীয়তপুর ক্রিকেট একাডেমি কোচ মো. সেলিম শিকদারের সহযোগিতায়। শরীয়তপুর সদর পৌরসভার দক্ষিণ আটং গ্রামের নুরুল হক শিকদারের ছেলে মো. রাসেল শিকদার (২৪)। শরীয়তপুর ক্রিকেট একাডেমি কোচের সহযোগিতায় ২০০৬ সালে ক্রিকেট জগতে যাত্রা শুরু হয় প্রতিবন্ধী রাসেলের। বাঁ-হাতি ওপেনিং বোলার হিসেবে ২০০৮ সালে জেলা ভিত্তিক অনূর্ধ্ব ১৮ দলে শরীয়তপুর জেলার হয়ে খেলতে যান মুন্সিগঞ্জ জেলায়। শরীয়তপুর ক্রিকেট একাডেমির হয়ে ২০১১-১২ সালে অনুষ্ঠিত ক্লাব কাপ খেলেন তিনি। ২০১৪ সালে ঢাকায় শুরু হয় সারা বাংলাদেশের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমের বাছাই পর্ব। বাছাই পর্বে রাসেল বাহাতি ওপেনিং বোলার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী দলে জায়গা করে নেন।ওই সালেই শুরু হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। প্রথম ভারতে শারীরিক প্রতিবন্ধী এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ হয় রাসেলের। টুর্নামেন্টে আফগানিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। ২০১৫ সালে বিকেএসপি, সাভার একটি আইসিআরসি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। এতে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ অংশ নেয়। সেই বছরের ২০ ডিসেম্বর ভারতে হায়দারাবাদ দলের হয়ে খেলতে যান রাসেল। ২০১৬ সালে দুবাই ও ভারতে ৩ ম্যাচ সিরিজ খেলেন রাসেল। বর্তমানে ঢাকায় বিসিআইসি নামক একটি ক্লাবে যুক্ত রয়েছেন তিনি।রাসেল শিকদারের বাবা নুরুল হক শিকদার বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমের একজন খেলোয়াড়। ছেলে প্রতিবন্ধী তবুও বাংলাদেশ জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমে খেলছে। গর্বে বুকটা ভরে যায়।’মো. রাসেল শিকদার বলেন, ‘ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় হওয়ার। হঠাৎ করে টাইফয়েট জ্বরে আমার ডান হাতে সমস্যা হয়ে যায়। আমি প্রতিবন্ধী হয়ে যাই। স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যায়।শরীয়তপুর ক্রিকেট একাডেমি কোচ মো. সেলিম শিকদারের সহযোগিতায় আজ বাংলাদেশ জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে বাঁ-হাতি ওপেনিং বোলার হিসেবে খেলছি।’তিনি আরো যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়ের অভিষেক হলে কত আয়োজন করে বরণ করা হয়। আমরা প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার বলে অবহেলিত! আজ পর্যন্ত একজন জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে আমি কোনো রকমের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। সংবর্ধনা তো দূরের কথা- আমাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই।’ শরীয়তপুর ক্রিকেট একাডেমি কোচ মো. সেলিম শিকদার জানান, ২০০৬ সালে রাসেল আমার কাছে ক্রিকেট প্রাকটিস করতে আসে। তখন খুব ভালো বল করতো রাসেল। বাঁ-হাতি ওপেনিং বোলার হিসেবে ২০০৮ সালে জেলা ভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৮ দলে শরীয়তপুর জেলার হয়ে খেলতে মুন্সিগঞ্জ জেলায় নিয়ে যাই রাসেলকে। সেখানে আমার এক সহকর্মী ছিল মুন্সিগঞ্জের ক্রিকেট একাডেমি কোচ, একেএম জসিম উদ্দিন। তিনি রাসেলের ভালো পারফরম্যান্স দেখে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমের বাছাই পর্বে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করেন। বাছাই পর্বে রাসেল বাহাতি ওপেনিং বোলার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী টিমে জায়গা করে নেয়। শরীয়তপুরের ছেলে হয়ে রাসেল বাংলাদেশ জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী টিমে খেলছে, আমি ওকে নিয়ে গর্ববোধ করি।ছগির হোসেন/এনইউ/এমএস
Advertisement