রাজনীতি

গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত খালেদা

দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়না জারি হওয়ায় গ্রেফতার ও কারাবরণসহ যেকোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৫৩ দিন ধরে তার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তিনি।গত মাসের শুরুর দিকে অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তাহীনতার। তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সংবাদ শোনার পর তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। বরং তার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকারী দলীয় নেতা ও স্টাফদের নিজেই শান্ত্বনা দিয়েছেন। দিয়েছেন পরামর্শও।কার্যালয় সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরের মধ্যেই আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার সংবাদটি শোনেন খালেদা জিয়া। খবরটিকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানকারী কয়েক নেতা তার কাছে যান।খালেদা জিয়া দলের নেতাতর্মীদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা কি চিন্তিত? আমি চিন্তিত নই। রাজনীতির ইতিহাসে এমন প্রতিহিংসা নতুন কোনো ঘটনা নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে জেল-জুলুমও নতুন কিছু নয়। তবে সরকারকে মনে রাখতে হবে, এসব করে তারা পার পাবে না। জনগণের কাঙ্খিত মুক্তি ও দেশের গণতন্ত্র না ফেরা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে। সেজন্য সবাইকে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। আপনারা কি কষ্ট করতে পারবেন’?কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বুধবার দুপুরে তার বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার সংবাদ খালেদা জিয়া দুপুরেই পান। আইনজীবীদের কাছে এ সংবাদ জেনে তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান কার্যালয়ে ছুটে যান তার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরীন এস্কান্দার ও অপর ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। তারাই প্রথম তাকে এ সংবাদ জানান। তিনি অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই এ সংবাদ গ্রহণ করেন।বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানার সংবাদ শুনে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন নই। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যই আমি আন্দোলন করছি।’সূত্র আরও জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেফতারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন। তাকে যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হবে এমন আশঙ্কা নিয়েই তিনি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। আন্দোলনের চরম মুহূর্তে যেকোনো সময় তাকে যে গ্রেফতার করা হতে পারে সে কথা তিনি আগেই দলের একাধিক নেতাকে বলেছিলেন।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার জামিন বাতিলের পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছে গেছে গুলশান, রমনা ও ক্যান্টনমেন্ট থানায়। তাকে গ্রেফতার করা এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা ও সময়ের ব্যাপার মাত্র।বিএনপি নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে পড়বে যে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই আর্ন্তজাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বরং সরকারের ওপর নানামাত্রিক চাপ বাড়তে থাকবে।এর আগে বুধবার সকালে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ আদালতে তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু মোহাম্মদ জমাদ্দার এ পরোয়ানা জারি করেন।খালেদা জিয়া ছাড়া পরোয়ানা ভুক্ত অন্য দু`জন হচ্ছেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।বিএ/এমএস

Advertisement