অর্থনীতি

সহিংসতার ক্ষতিপূরণে সরকারের দারস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপাকে পড়েছেন বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এরই মধ্যে ক্রেতারা বাংলাদেশের পরিবর্তে অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দিতে শুরু করেছেন। এছাড়াও টানা ৫২ দিনের অবরোধ ও  হরতালের কারণে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো, জাহাজীকরণে বিলম্ব, মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন কারণে  প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচির কারণে সৃষ্ঠ রাজনৈতিক অস্থিরতায় এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন সরকারের দারস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ লক্ষ্যে আগামী রোববার বিভিন্ন দাবি জানাতে অর্থ মন্ত্রণালয় যাবেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কাছে পৃথক চিঠিতে সহায়তার দাবি জানানো হবে।দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রফতানিতেও নগদ সহায়তাসহ নতুন বাজারে রফতানিতে বিদ্যমান দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা, ছোট-বড় সব কারখানার জন্য ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ এবং স্বল্পমেয়াদে সুদহীন ব্যাংক ঋণ। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জাগোনিউজকে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে আমরা কয়েকটি বিষয়ে দাবি জানাবো। ইতিমধ্যে দাবি সম্বলিত চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। আজকালই চিঠি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থমন্ত্রী ও বিজিএমইএর সভাপতি ঢাকার বাহিরে থাকায় রোববার চিঠিটি দেওয়া হবে।সালাম মুর্শেদী বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে দীর্ঘদিন পণ্য বন্দর থেকে খালাশ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে পরিবহণ ভাড়া দুই থেকে তিনগুন বেড়েছে। এসব কারণে একদিকে ঋণের সুদ বাড়ছে আবার ঋণ পরিশোধও করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। গত দুই মাস যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে এর প্রভাব এখন চোখে পড়বে না। এর প্রভাব পড়বে এপ্রিল মে তে।তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে ইউরো দরপতনের কারণে ইউরোপের বাজারে আমাদের রফতানি আয় অনেক কমে গেছে। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রফতানিতে নগদ সহায়তা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রফতানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা দেওয়া হয় পাঁচ শতাংশ। নতুন বাজার ও নতুন পণ্য রফতানিতে তিন শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রফতানিতে এ সুবিধা প্রযোজ্য নয়। এ দুই ধরনের নগদ সহায়তা ছাড়াও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বাইরে সব কারখানাই দশমিক ২৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা ভোগ করে থাকে।এদিকে বস্ত্র ও পোশাক খাতের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত ‘ব্যাংক ও ট্যাক্স’ কমিটি ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক করেন। বৈঠকে ক্ষতিপূরণের দাবি-দাওয়ার তালিকা তৈরি করা হয়। পরে আরও দুটি বৈঠক করে কমিটির সদস্যরা এসব দাবি পর্যালোচনা করে চিঠি চূড়ান্ত করেন।বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ৬ ও ১২ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিলের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেই সুযোগ সমানভাবে ছোট-বড় কারখানাকে দেওয়ার দাবির জানানো হবে। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে হরতাল-অবরোধের কারণে বন্দরে পণ্য আটকে থাকায় বন্দর চার্জ আমদানি-রফতানিকারকদের ওপর আরোপ না করা, বীমা কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে পরিশোধ পদ্ধতি নমনীয় করা, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ আমদানি-রফতানি কাজে ব্যবহৃত মহাসড়কে পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যকে বীমার আওতায় আনা। অবরোধের কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার দাবি করা হবে।উল্লেখ্য, হরতাল-অবরোধের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দর কষাকষি করতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বস্ত্র ও পোশাক খাতের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত ‘ব্যাংক ও ট্যাক্স’ কমিটি গঠন করে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর নেতৃত্বে এ কমিটি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বস্ত্র ও পোশাক খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে। অপর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে অন্য একটি কমিটি রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সরকার এবং আন্দোলনকারী দলের মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি সমন্বয় করছে। পোশাক ও বস্ত্র খাতের সংগঠনগুলোর সাবেক সভাপতিরা দুই কমিটিতেই সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।এসআই/এএইচ/পিআর

Advertisement