সবারই প্রত্যাশা থাকে আয় বাড়ুক, শুধুই বাড়ুক। কেউ চায় না আয় কমুক। না-চাইলেও মাঝে মাঝে কারো কারো আয় কমে যায়। তখন কিছুই করার থাকে না। সয়ে নিতে হয় অনেক সময়। মালয়েশিয়ায় প্রবাসীরা তা-ই করছে গত কয়েক বছর। ১৩ বছর আগে যখন মালয়েশিয়ায় আসি তখন এক রিংগিতের বিপরীতে ১৫ টাকা হতো। সেই থেকে দিনে-দিনে, বছরে-বছরে মালয়েশিয়ার মুদ্রার মান অল্প অল্প করে শুধুই বেড়েছে। কখনো সামান্য কমলেও ক’দিন পরে হয়তো আবারো বেড়েছে। বাড়তে বাড়তে ২০১১ থেকে ২০১২ সালের দিকে এক রিংগিতের বিপরীতে ২৭ টাকা পর্যন্ত পেয়েছি। সেই বাড়াই শেষ। এরপর থেকে মালয়েশিয়ান মুদ্রার মান শুধুই কমেছে। কমতে কমতে ২০১৫ সালে নেমে আসে ১৮ টাকার কম রেটে। ২০১৬ সালে এসে কিছুটা বেড়ে ১৯ বা সাড়ে ১৯, ২০ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়ার বাজেট (২০১৭-এর জন্য) পাস ও নভেম্বরের শুরুতে আমেরিকার নির্বাচনের পর থেকে আবারো রিংগিতের মান নেমে এসেছে ১৮ টাকায়। চার বছর আগে এক হাজার রিংগিত দেশে পাঠালে হতো ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। এখন হচ্ছে মাত্র আঠারো হাজার বা সাড়ে আঠারো হাজার। তাহলে চার বছর পরে এসে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীর আয় কমলো। মুদ্রার মান কমায় জিনিসপত্রের দামও ক্রমাগত বেড়েছে গত কয়েক বছর ধরে। পুরো মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা বলে গত কয়েক বছর ধরে শুনছি মালয়েশিয়ান ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মুখ থেকে। তাই মালিকেরা চাকরিজীবীদের বেতনও বাড়ায় না তেমন। মালয়েশিয়ান মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা। দেশে টাকা পাঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রবাসীদের। হিসাব মেলাতে কষ্ট আয়-ব্যয়ের। প্রতি মাসে মালয়েশিয়ায় থাকা-খাওয়ার খরচ শেষে দেশে আগের মতো টাকা পাঠাতে সমন্বয় হচ্ছে না। কেউ কেউ হয়তো আগের চেয়ে বেশি রিংগিত পাঠিয়েও টাকা পাচ্ছেন কম। দেশে পরিবার-পরিজন প্রত্যাশা করে বেশি, পাচ্ছে কম। বেচারা প্রবাসী ঠিকই আগের চেয়ে বেশি রিংগিত পাঠাচ্ছে। কোনো প্রবাসী আগে নিজের মাসিক খরচাপাতি করে এক হাজার রিংগিত পাঠালে দেশে কম হলেও ২৫ হাজার টাকা পেয়েছে। এখন অভিজ্ঞতা বাড়ছে, বেতনও বাড়ছে, বেতন বাড়ার ফলে এখন এক হাজার ৩০০ রিংগিত পাঠালেও দেশে আগের চেয়ে কম টাকা পাচ্ছে। এতে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা কিছুটা বিপাকে আছে। বিশেষ করে কিছুটা পুরনো প্রবাসী যারা। এমনিতেই মালয়েশিয়ায় প্রবাসে মানুষ যতো পুরনো হয়, ততো বেশি খরচ শিখে যায়। খরচ তো একবার বাড়লে সহজে কমে না। এমনিতেই কোনো দেশের মুদ্রার মান কমলে সে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করে নাগরিকেরা। আর প্রবাসীরা এর নেতিবাচক ফল ভোগ করে দ্বিগুণ। একদিকে দ্রব্যমূল্যে, অন্যদিকে দেশে টাকা পাঠাতে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আয় কিছুটা কমছে। এর একটা কারণ হতে পারে মালয়েশিয়ান রিংগিতের দরপতন। কারণ, এখান থেকে আমরা রিংগিত পাঠালেও রেমিট্যান্সগুলো দেশে যায় ইউএস ডলার হয়ে। আগে এক হাজার রিংগিত পাঠালে হয়েছে ৩৩৩ ইউএস ডলার (সামান্য কম-বেশি), এখন এক হাজার রিংগিতে হচ্ছে মাত্র ২৩৫ ( সামান্য কম-বেশি) ইউএস ডলার। অর্থাৎ প্রতি এক হাজারে ১০০ ডলার কমে গেছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন বেড়েছে এ বছরের ১ জুলাই থেকে। মালয়েশিয়ান সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন ৯০০ রিংগিত থেকে ১০০ রিংগিত বেড়ে গত ১ জুলাই থেকে হয়েছে এক হাজার রিংগিত। মানে রিংগিতের মান হ্রাসের চেয়ে বেতন বাড়ার পরিমাণ কম। গত তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ান মুদ্রার মান হ্রাসের ফলে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে টাকা পাঠাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা বাড়ছে, সামান্য বেতন বাড়ছে, তবে টাকার হিসাবে আয় কমছে। প্রবাসীরা সামনে আগানোর জন্য, আয় বাড়ানোর জন্য লড়ছে শ্রমে-ঘামে, রিংগিতের মান পেছনে টানছে প্রবাসীদের আয়কে। এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে কে রক্ষা করবে?লেখক : মালয়েশিয়াপ্রবাসী। এইচআর/এনএইচ/পিআর
Advertisement