মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামছে না। সীমান্ত এলাকায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। বৃহস্পতিবারও নাফ নদীতে আট নৌকাসহ ১০৭ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও সাত দালালকে আটকের পর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু এলাকার উত্তরাংশে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলায় ৯ বিজিপি সদস্য নিহত এবং ১০ হাজারেরও অধিক গুলি লুটের ঘটনার পর থেকে মিয়ানমারে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের খুঁজতে সেনা অভিযান চালানো হয়। হেলিকপ্টার থেকে গানপাউডার ছিটিয়ে পোড়ানো হয় বেশ কিছু বাড়িঘর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে রোহিঙ্গারা। বিজিবি-কোস্টগার্ডের কড়া নজরদারি উপেক্ষা করে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে তারা। বৃহস্পতিবারও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত ঘুরে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেখা গেছে। বালুখালী সীমান্তের কৃষক নুরুল আমিন বলেন, সীমান্তে এত বিজিপি আগে দেখিনি। কড়া নজরদারির মধ্যেও রোহিঙ্গারা আসছে। সীমান্ত পার হয়ে এ দেশে প্রবেশের পর কথা হয় ৭৮ বছর বয়সী ছালেখার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, তার সামনে স্বামী আর ছেলেকে মিয়ানমারের মিলিটারি হত্যা করেছে। সে বাড়িতে আটকা পড়েছিল। খাবার ছিল না। এরপর এক আত্মীয়ের হাত ধরে বাঁচার জন্য এ দেশে পালিয়ে এসেছেন। টেকনাফের ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, নাফ নদীতে রোহিঙ্গাবোঝাই আটটি নৌকা এ দেশে প্রবেশের চেষ্টা করার খবর পেয়ে সাগরের টহল দলকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ওই নৌকাগুলোকে মিয়ানমারের দিকে ফেরত পাঠানো হয়। অপরদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী সাত দালালকে আটক করেছে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। পরে আটকদের টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে আদালত তিনজনকে দুই মাস করে ও চারজনকে এক মাস করে কারাদণ্ড দেন। কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা এ দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় ১০৭ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। তার মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৯ নারী ও ৪৮ জন শিশু রয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করতে কক্সবাজারে এসেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি কক্সবাজার পৌঁছে বিকালে টেকনাফ, উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বলে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সেক্টরের কামান্ডার কর্নেল এম এম আনিসুর রহমান জানিয়েছেন।বিজিবির টেকনাফস্থ ২নং ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে টেকনাফে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বিজিবির মহাপরিচালক।সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/পিআর
Advertisement