খেলাধুলা

যে কারণে বদলে গেলো চিটাগাং ভাইকিংস

কি আশ্চর্য! কাগজে-কলমে যে দুই দলকে ফেবারিট ভাবা হয়েছিল, সেই ঢাকা ডায়নামাইটস আর চিটাগাং ভাইকিংসের কেউ পয়েন্ট টেবিলের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থানে নেই। চট্টগ্রাম পর্ব শেষে সাকিব আল হাসানের ঢাকা আর তামিম ইকবালের চিটাগাংয়ের পয়েন্ট এখন সমান আট। দু`দলের জয় সংখ্যা সমান চার। তবে একটা ছোট্ট পার্থক্য আছে। ঢাকার ম্যাচ সংখ্যা সাত। আর চিটাগাং এক ম্যাচ বেশি খেলেছে। দেশের এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবালের অধিনায়কত্বে দলে আছেন ডোয়েন স্মিথ, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ নবী ও ইমরান খান জুনিয়রের মতো বিদেশি। সঙ্গে আনামুল হক বিজয়, জহুরুল ইসলাম অমি, সাকলাইন সজিব, তাসকিন আহমেদ, শুভাশীষ রায় ও জাকির হোসেন। সব মিলে এবারের বিপিএলের অন্যতম সেরা লাইন-আপ। এমন দল নিয়ে অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখাই যায়। চিটাগাং শিবিরেও আছে সে স্বপ্ন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রথম লক্ষ্য সেরা চারে থাকা। একমাত্র দল হিসেবে আট ম্যাচের চারটিতে জেতা তামিম বাহিনীর পক্ষে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয়া অসম্ভব নয়। বাকি চার ম্যাচের তিনটিতে জিতলে অনায়াসে প্রথম চার দলে জায়গা হয়ে যাবে। তবে কোচ সালাউদ্দীন স্বপ্নবিলাসী নন। আকাশ কুসুম কল্পনা নেই তার। বোধ, উপলব্ধি ও অনুভব একদম পরিষ্কার। তার প্রথম কথা, ‘আগেই বলে নিই, আমি কখনই কাগজে-কলমের হিসাব-নিকাশ নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমার ক্রিকেট দর্শন ও ব্যাকরণে ‘কাগজে-কলমের’ হিসাব বলে কোনো শব্দের অস্তিত্ব নেই। বিশ্বাস করি, মাঠের পারফরম্যান্সে। মানতে চাই- মাঠের পারফরম্যান্সই শেষ কথা।’ চিটাগাং ভাইকিংস কোচ বুধবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে আলাপে তার দলের পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘আসলে আমরা শুরুর দিকে কয়েকটা ম্যাচে কিছু ভুল করেছি। সে ভুলের মাশুল  হিসেবেই প্রথম দিকে কয়েকটা ম্যাচ হেরে বসা। আর চট্টগ্রামে গিয়ে সে ভুলের পরিমাণ কমেছে কিছুটা। ভুলের পরিমাণ কমে আসায় জয়ের সংখ্যাও বেড়েছে।’ তার কথার পক্ষে সাক্ষী দিচ্ছে পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে- ঢাকায় চার ম্যাচের তিনটিতে হেরে বসা চিটাগাং ভাইকিংস বন্দর নগরীতে গিয়ে চার খেলার তিনটিতেই জিতেছে। এক কথায় ঢাকার বিপরীত অবস্থা চট্রগ্রামে। ৮ নভেম্বর শেরেবাংলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গে জয় দিয়ে শুরুর পর টানা তিন ম্যাচ হেরে নিচে নেমে যাওয়া। আর বন্দর নগরীতে গিয়ে প্রথম দিন ১৭ নভেম্বর ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে ১৯ রানে হার দিয়ে যাত্রা শুরুর পর রাজশাহী কিংসের সঙ্গে ১৯ রানে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ও বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ৭৮ রানের বড় জয়। কাজেই পরিসংখ্যান আশার রসদ। চিটাগাং ভাইকিংস কোচ সালাউদ্দীনও তাই আশাবাদী। তার কথায় পরিষ্কার, তিনি ব্যাটিং নিয়ে ততটা চিন্তিত নন। তার যত চিন্তা বোলিং। সালাউদ্দীনের কথা, ‘একটু খেয়াল করলে দেখবেন- আমরা যেসব ম্যাচ হেরেছি, তার প্রায় সব ক`টাই বেশি রান করে। আমি আসলে বোলিং নিয়ে একটু চিন্তিত।’বোলিং নিয়ে চিন্তা থাকলেও নিজ দলের বোলারদের মান ও মেধা নিয়ে এতটুকু সংশয় নেই তার। সালাউদ্দীন মনে করেন, উইকেটের চরিত্র ও গতি-প্রকৃতি না বুঝে বল করার কারণেই ঘটেছে বিপত্তি। ‘আমার দলের বোলাররা শুরুর কয়েক ম্যাচে উইকেট না বুঝে এবং উইকেটের আচরণ না ঠাউরে বল করে বিপদ ডেকে এনেছে।’ তবে কথোপকোথনের শেষ অংশে গিয়ে জানা হলো, সেটাই মূল সমস্যা নয়। আসল সমস্যা হলো, ক্রিকেটারদের অনেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝে উঠতে পারেননি। যার যা করার না, তা-ই করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন। তাইতো সালাউদ্দীনের মুখে এমন কথা, শুরুর দিকে যার যা দায়িত্ব-কর্তব্য তা পালন করতে না পারার কারণে রেজাল্ট ভালো হয়নি। কিন্তু এখন সে অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। সবাই কম বেশি বুঝে গেছে কার কি দায়িত্ব ও কর্তব্য? ’ এ কথার স্বপক্ষে সালাউদ্দীন একটি উদাহরণ টেনে আনেন। তার ব্যাখ্যা, ‘ধরেন, জহুরুল যদি তামিম ইকবালের মতো  অ্যাটাকিং এ্যাপ্রোচে খেলার চেষ্টা করে, সেটা কি ঠিক হবে? তাতে কি কার্যকর ফল আসবে? শুরুর দিকে তা-ই হয়েছে। জহুরুল তার মতো ধরে না খেলে তামিমের মতো আক্রমণাত্মক ঢংয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে। এখন জহুরুল বুঝে গেছে তার দায়িত্ব হলো একদিক আগলে রাখার কাজ করা। শুধু জহুরুল একা নয়, এ বোধ ও উপলব্ধিটা সবার মাঝেই এসেছে। তাই পারফরম্যান্সেও উন্নতি ঘটেছে।’এআরবি/এনইউ/পিআর

Advertisement