বাঙালির ইতিহাসে পিঠাপুলির গুরুত্ব অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। উৎসব-আনন্দে মানুষের ঘরে থাকে নানা স্বাদের নানা রকমের পিঠা। এসব পিঠা তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে থাকে চালের গুঁড়া, আটা, ময়দা, চিনি কিংবা গুড়। কিছু কিছু পিঠাপুলিতে থাকে আবার দুধের মালাই কিংবা পানির বদলে দুধ। এসব পিঠাপুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ছাচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, সুন্দরি পাকন, পানতোয়া, মুঠি পিঠা, পুলি পিঠা, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুর পিঠা, লর্গি লতিকা, রসফুল পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, জামদানি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, নকশি পিঠা সহ ইত্যাদি পিঠা। শীতের এই সময়কে ঘিরে ঘরে ঘরে হয় পিঠা উৎসব। নতুন ধানের গন্ধ সেইসাথে মুখোরোচক পিঠা। কখনো লেপে মুড়ি দিয়ে ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠা খাওয়া আবার কখনো আগুনের পাশে বসে চিতই পিঠা খাওয়া সাথে নানা ভর্তার সংমিশ্রণ। একটা সময় ছিলো যখন পদ্ম, বৃত্ত ইত্যাদি পিঠার উপর আঁকা হতো। কখনো কখনো পিঠার উপর শুভ বিবাহ, মনে রেখ আমায়, কে তুমি? মনে রেখো ইত্যাদি লেখা লিখে তা পাঠানো হতো প্রিয় মানুষের কাছে। সাধারণত ফুল পিঠা, পাক্কুয়ান পিঠায় আঁকা হতো এমন নকশা। এই পিঠাগুলোকে স্থান ভেদে ফুল পিঠাও বলে। পুলি পিঠাও এসব পিঠার মধ্যে অন্যতম। নকশা একে নানা ভাবে নানা এতে নানা নান্দনিক নানা কাজ ফুটিয়ে তোলা হয়। আঙুল এবং নখের সাহায্য এই পিঠায় নকশা তোলা হয়। নকশা অনুযায়ী এই পিঠাগুলোর নামেও আছে ভিন্নতা। যেমন শঙ্খলতা, কাজললতা, চিরলপাতা, সজনে পাতা, পদ্মদিঘি, সাগরদিঘি ইত্যাদি। আগে পিঠা তৈরির উপাদানে ছিলো ভিন্নতা। মুগডাল, নারকেল, ময়দা, প্রাণিজ উপাদান ইত্যাদি দিয়ে নানাভাবে ক্ষীর এবং পিঠার পুর তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে নকশা পিঠার আগমন ঘটে। এর আগে খুব সহজে তৈরি করা যেতো এমন পিঠা বানানো হতো। বর্তমানে শহুরে জীবনেরও পিঠার গুরুত্ব বেড়েছে বেশ। খাবার টেবিলের বিকেলের আয়োজন থেকে শুরু করে পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং উৎসবে পিঠা দেখা যায়। এক সময় যা ছিল কেবলি খাদ্য তা আজ আমাদের ঐতিহ্যর একটি অংশ। যা আমাদের ভালোবাসার জায়গাতে মিশে আছে। এইচএন/এমএস
Advertisement