বিশেষ প্রতিবেদন

বার কাউন্সিল পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা : উৎকণ্ঠায় সনদ প্রার্থীরা

আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার পরীক্ষার্থী উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ২০১৫- ১৬ এবং ২০১৬-১৭ সময়ের মধ্যে দুবার পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষা হয়েছে একবার। এতে সনদ প্রার্থীদের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হচ্ছে। অ্যাডভোকেট হিসেবে অন্তর্ভুক্তি পরীক্ষার (এনরোলমেন্ট) জন্য দীর্ঘ সময় ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অপেক্ষা করলেও পরীক্ষা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।বার কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, আগে সাধারণত বছরে দুবার এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নেয়া হতো। সর্বশেষ ২০১৫ সালের মাঝামাঝি  এনরোলমেন্ট পরীক্ষা হয়।প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা এই তিন ধাপের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পায় চলতি বছরের ১৪ মে। নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী এলএলবি পাস করার পর সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বার কাউন্সিলের নির্ধারিত ফর্মে ইন্টিমেশন পেপার জমা দেন। এরপর শিক্ষানবিশ হিসেবে ৬ মাস অতিক্রম হলে বার কাউন্সিল শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন ফরম দেয়। এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রাথমিক যোগ্যতা এই রেজিস্ট্রেশন। এরপর পরীক্ষার জন্য বার কাউন্সিল সময়সূচি ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেন। বার কাউন্সিল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে অধিভুক্ত হওয়ার ভাইভা শুরু হবে। এ ভাইভার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিম্ম আদালতের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতার কোনো সিডিউল ঘোষণার সম্ভাবনা নেই।বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্টের দায়িত্ব মূলত সুপ্রিম কোর্টের ওপর। এনরোল কমিটির চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, দুইজন সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, একজন আ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন সদস্য থাকেন বার কাউন্সিল থেকে । ফলে পরীক্ষা নেয়া এবং এনরোলমেন্ট সংক্রান্ত বিষয় বার কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির কাছে নেই। শ ম রেজাউল আরও জানান, হাইকোর্টের একটি রায়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত আইনে দুই বছরের ডিগ্রি নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব কারণে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির কোন গাফলতি নেই। বার কাউন্সিলের কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন জাগো নিউজকে জানান, আগে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণাসহ সবকিছু তদারক করতো বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যরা। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে বাছাই করে একটি কমিটি করা হতো। ওই কমিটি সকল দ্বায়িত্ব পালন করতো। বর্তমানে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্টের দায়িত্ব মূলত সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত  করা হয়েছে। তাই যেখানে প্রতি বছর একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো, তা দুই বছরেও সম্ভব হচ্ছে না।ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, পাস করার পর আমাদের এমনিতে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়। আমার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। সে রেজিস্ট্রেশনের এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পাইনি। তিনি বলেন, আমাদের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের পরিবারও বিষয়টি নিয়ে একধরনের উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় অতিবাহিত করছে। কমপক্ষে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী এনরোলমেন্ট পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানান এই শিক্ষার্থী।বার কাউন্সিলের তথ্য কর্মকর্তা নাজমুল আহসান জানান, সাধারণত নিয়ম হচ্ছে একটা পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আরেকটা পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু পূর্বের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও নতুন পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা না হওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাজমুল আহসান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন।এফএইচ/ওআর/আরআইপি

Advertisement