বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) তরুণ বিজ্ঞানী ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন এবার গাজীপুর একটি গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে বোমার আগুন থেকে রক্ষায় তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রয়োগ করে দেখালেন। মঙ্গলবার দুপুরে বারি চত্বরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বারি’র কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় পরিবহন নেতা এবং কয়েকশ চালক ও শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। খোলা মাঠে থাকা একটি জীপে তিনি নিজে পেট্রলবোমা ছুড়ে তার উদ্ভাবনের পরীক্ষা করে দেখান। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শুরু হয় প্রযুক্তি প্রদর্শনের আনুষ্ঠানিকতা। বারি’র একটি জীপ গাড়ির জানালার কাচে দু’পাশে মুড়ানো হয় স্কচ টেপ। জানালার কাচের ভেতরের দিকে দেয়া হয় তার উদ্ভাবিত বিশেষ মিশ্রণ যুক্ত কাপড়ের পর্দা। এরপর বিজ্ঞানী নিজ হাতে উপস্থিত লোকজনের সামনে ওই গাড়িতে ছুড়ে মারেন পেট্রলবোমা। বোমার আঘাতে গাড়ির কাঁচ ভেঙে গেলেও তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যায়নি। কাচ ছিদ্র হয়ে বোমার কিছু আগুন ভেতরে যায় এবং ওই পর্দায় জ্বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা নিভে যায়।এসময় বারি’র মহাপরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম মন্ডল, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন, গাজীপুর ডিজিএফআই’র উপ-পরিচালক মাহবুব রেজা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম, জয়দেবপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান, গাজীপুর জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকারসহ কয়েকশ লোকজন উপস্থিত ছিলেন। ইয়ামিন উপস্থিত কর্মকর্তা, পরিবহন শ্রমিক ও নেতাদের কাছে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক ও প্রয়োগ পদ্ধতি তুলে ধরেন। ইয়ামিন বলেন, পেট্রলবোমার আগুন থেকে জীবন ও পরিবহন সুরক্ষিত রাখার কোনো সহজ ও কম মূল্যের লাগসই প্রযুক্তি দেশে বর্তমানে নেই। এ চিন্তা থেকেই সাধারণের জীবন রক্ষায় এই সহজ কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। একটি বড় বাসে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি। ইয়ামিন তার প্রযুক্তির বিবরণ দিয়েছেন উপস্থিত কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সামনে।ইয়ামিন জানান, যানবাহনের জানালার কাচের দুপাশ তিন ইঞ্চি চওড়া স্বচ্ছ স্কচটেপ দিয়ে লেমিনেশন করে নিতে হবে, যা পেট্রলবোমার আঘাতে জানালার কাঁচ ভাঙা ঠেকাবে এবং ভাঙলেও কাঁচের টুকরা ভিতরে ছিটকে পড়া রোধ করবে। এটি পেট্রল ও আগুন ছড়িয়ে পড়াও রোধ করবে। এটি ব্যবহারে পেট্রল বোমার ক্ষতি ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব বলে ইয়ামিন মনে করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে জানালার ভেতরে বিশেষ পর্দা ব্যবহার করা হয়। স্টেশনারি দোকান থেকে চক পাওডার ও আঠা কিনে নিয়ে পানি মিশিয়ে কাই তৈরি করা হয়। এরপর হার্ডওয়ারের দোকানে কাঠে বার্নিশ করার জন্য যে পাতলা জালি কাপড় পাওয়া যায় তার উপর ওই কাইয়ের প্রলেপ দিতে হবে। পরে রোদে শুকিয়ে কাইয়ের প্রলেপযুক্ত কাপড় পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে গাড়ির জানালার ভেতরে। কাইয়ের মিশ্রণটি তৈরি করতে এক কেজি চক পাউডারের সঙ্গে এক লিটার পানি ও ২৫০ গ্রাম আঠা বা গাম প্রয়োজন হবে। আর পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হলে ওই অনুপাত ঠিক রেখে মিশ্রনটি তৈরি করে নেওয়া যাবে। তিনি বলেন, বিশেষ পর্দাটি অতি উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার কারণে নিক্ষিপ্ত পেট্রল বোমার পেট্রল বা অকটেন দ্রুত শুষে নেবে এবং এতে তেল কম ছড়িয়ে পড়বে। বোমার কিছু অংশ বাসের জানালার কাঁচ ভেঙে ভেতরে ঢুকলেও তা পর্দায় বাধা পাবে। ইয়ামিন জানান, চক পাউডার (কার্বনেট) আগুনে কিছু জ্বলে সাময়িক কার্বন- মনো-অক্সাইড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলে। এ বিশেষ পর্দাটি দাহ্য নয় এবং অন্যকে জ্বলতেও বাধা দেয়। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বর্তমান নাশকতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার ক্ষেত্রে একজন কৃষিবিজ্ঞানী তার ধারাবাহিক কাজের বাইরে গিয়ে এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা প্রশংসার যোগ্য। গাজীপুর জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার বলেন, ইয়ামিনের পেট্রলবোমা থেকে রক্ষার প্রযুক্তি স্বচক্ষে দেখলাম। পরিবহনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেট্রল বোমার আগুনের ভয়াবহতা থেকে অল্প খরচে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সহজেই রক্ষা করা সম্ভব। এর আগে ইয়ামিন সমুদ্র বা নদীতে ছড়িয়ে পড়া অনাকাক্ষিত তেল শোষণের প্রযুক্তি, পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজ, নৌকা বা অন্য কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের প্রযুক্তি, মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়ের প্রযুক্তি, এক টাকায় ফরমালিন পরীক্ষার প্রযুক্তি ও শাক-সব্জি ও ফল-মূল টাটকা রাখার মাটির ফ্রিজ উদ্ভাবন করেন।এমএএস/পিআর
Advertisement