লাইফস্টাইল

সুস্থ থাকুন এই রমজানে

মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান মাস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পুরো এ মাস জুড়েই রয়েছে সংযমের শিক্ষা। আর তা হলো শুধুমাত্র মহান আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য। তবে একটা দীর্ঘ সময় সংযমে থাকতে হবে সেটা ভেবে সেহেরি ও ইফতারের সময় নানা বাহারি খাবারের আয়োজন করা হয়। যা মোটেও ঠিক নয়। পবিত্র এই মাসে খাবারের অভ্যাসটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিবিদদের সাথে কথা বলে সংযমের মাসের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে লিখেছেন নওশীন শর্মিলীপবিত্র রমজানে ইফতার-সেহরি এই দুটি সময় রোজাদার মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় খাদ্যের সমাহারে আমরা একটু বেহিসাবী হয়ে পড়ি। শুধু তাই নয়, ইফতারে খাওয়া-দাওয়া খুব ভালো হলেও সেহরিতে কিন্তু খাবারের কমতি নেই। অথচ ইফতার ও সেহরিতে কী কী খেলে রমজানে রোজা রাখায় কোনো অসুবিধা হবে না, পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে সেদিকে অনেকেরই লক্ষ থাকে না। ফলে ১৫ কিংবা ২০ রোজার পর আমরা অনেকে অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারি না। এ জন্য রমজানে অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট ডায়েট প্ল্যান থাকা উচিত। একদিন কিংবা দুদিন পরপর ডায়েট প্ল্যানে ভিন্নতা রাখলে রুচিতেও অসুবিধা হয় না।সেহরিতে যা খাবেনদুটি আটা অথবা ময়দার রুটি ডাল, সবজি ও মুরগি ভুনা এক কাপ দুধ অথবা লাচ্ছি, এক কাপ চা।ইফতারে যা খাবেনএকটি খেজুর, দুটি ছোট আকারের পেঁয়াজু, আধা কাপ মুড়ি, এক চামচ ছোলা অথবা বুট, এক বাটি ফ্রুট সালাদ, এক গ্লাস ফলের রস অথবা লেবুর শরবত।সন্ধ্যারাতে যা খাবেনআধা প্লেট ভাত অথবা একটি রুটি, আধা সিদ্ধ সবজি, এক টুকরা মুরগির মাংস, একটি মাঝারি আকারের আপেল।রোজায় সুস্থ থাকতেযিনি রোজা রাখছেন তাকে প্রথমেই লক্ষ রাখতে হবে, রোজা রেখেও যেন তার শরীরে প্রতিটি পুষ্টি উপাদান সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে সরবরাহ হয়। রোজা রেখে তিন বেলা কোনো ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টির এ জোগান নিশ্চিত হয়। তা ছাড়া এ সময়ে বাইরের খোলা বা বাসি, পচা বা পুরোনো তেল দিয়ে ভাজা খাবার খেলে পুষ্টি তো পূরণ হয়ই না বরং বিভিন্ন রোগব্যাধি শরীরকে আক্রমণ করে বসে। শারীরিক সুস্থতা আবার নির্ভর করে মানসিক সুস্থতারও ওপর। এ সময়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ, ধর্মীয় জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হলেই রোজা রাখা পরিপূর্ণতা লাভ করে। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ৫ থেকে ৬ বার খেয়ে থাকি। কিন্তু রোজার এই সময়ে রোজাদারেরা ৩ বার অর্থাৎ ইফতার, সন্ধ্যারাত ও সেহরিতে খেয়ে থাকেন। একজন রোজাদারের তার বয়স, পরিশ্রম, শারীরিক অসুস্থতা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা কোনো খাদ্য বেশি খাওয়ার পরামর্শ থাকলে সে অনুযায়ী তিন বেলা খাদ্য নির্বাচন করা উচিত। সারা দিন রোজা রাখার পর শরবত একটি উত্তম পানীয় কিন্তু একজন ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এটি পান করা উচিত নয়। অর্থাত্ তিনবারের খাদ্য বণ্টন এমন হতে হবে যেন শারীরিক প্রতিটি পুষ্টি এ খাদ্য তালিকা থেকে পাওয়া যায়। প্রৌঢ় বয়সে সারা দিন রোজা রাখার পর যে ক্লান্তি, অবসাদ ও দুর্বলতার সৃষ্টি হয়; তা এই সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে পূরণ হয়। সুষম খাবার একেক বয়সের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। তবে সাধারণভাবে ৬টি গ্রুুপে এ খাদ্যকে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হলো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। শর্করা বলতে ভাত, মুড়ি, চিড়া, রুটি ইত্যাদিকে বোঝায়। দ্বিতীয়টি হলো প্রোটিন, যেমন মাছ, মাংস, ডিম ও সেকেন্ডারি প্রোটিন ডাল বা বিচি-জাতীয় খাবার। তৃতীয়টি হলো দুধ বা দুধজাত খাদ্য, যেমন—ফিরনি, দই, ছানা ইত্যাদি। এরপর যে খাবার আমাদের শরীরে প্রতিদিন অবশ্য প্রয়োজনীয় তা হলো শাক ও সবজি। অন্য খাদ্যগুলো পরিবর্তন করে খাওয়া গেলেও এটি প্রতিদিন পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। চতুর্থ হলো ফল এবং পঞ্চম তেলজাতীয় খাদ্য। একজন ব্যক্তির সুস্থতার জন্য ওপরের প্রতিটি খাবার সুষমভাবে খাওয়া দরকার। ইফতারিতে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাদ্যের আধিক্য দেখা যায় প্রধানত দুটি কারণে। একটি হলো পারিবারিক বা ঐতিহ্যগতভাবে এটির প্রচলন হয়ে আসছে এবং দ্বিতীয়টি হলো দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে একটু ঝালজাতীয় বা ভাজা-ভুনা খেতে আমাদের স্বাদ লাগে। কিন্তু এই খাদ্য গ্রহণের আগে আমাদের কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে; তা হলো এই খাদ্যগুলো হতে পারবে না বাইরের কোনো খোলা খাবার। সাধারণত দোকানে রোজার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাধারণত একই তেল ব্যবহার করা হয়। পুরোনো তেলের সঙ্গে নতুন তেল মিশিয়ে কোনো কিছু তৈরি করা হয়। এ পুরোনো তেল ঘি বা ডালদার চেয়েও ক্ষতিকর। এটি হূদরোগ ও রক্তনালিতে খারাপ কলস্টেরল জমার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া পুরোনো বেসন বা ডাল বা পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন কিছু মিশিয়ে কোনো খাদ্য তৈরি করা হয়ে থাকে। ফলে এর পুষ্টিমান তো থাকেই না, উপরন্তু এ খাদ্য গ্রহণে জটিল ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়াও বদহজম, ডায়রিয়া, পেটফাঁপা, পেটব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি ধরনের অসুস্থতা হতে পারে। বাইরের খাবারের সঙ্গে যে রং ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দোকানদাররা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকেন এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যজ্ঞান নেই। তাই ঘরের খাবার খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যসম্মত।

Advertisement