মৃতব্যক্তির জানাযা ও কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রীতি-নীতি ও পদ্ধতি হলো সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর সুন্নাত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম পদ্ধতি। মৃতব্যক্তির প্রতি এবং তার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনও এ রীতির অন্তর্ভুক্ত। মৃতব্যক্তির জানাযা নামাজে আল্লাহ্ তাআলার পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য ও ইবাদাত প্রকাশ করা বিশ্বনবির সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত ছিল। মৃতব্যক্তিকে ভালভাবে প্রস্তুত করে তাকে আল্লাহর দিকে পাঠিয়ে দেয়া তাঁর হেদায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।বিশ্বনবি এবং তাঁর সাহাবীরা সারিবদ্ধ হয়ে জানাযা নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং আল্লাহর কাছে ইখলাসের সঙ্গে মৃতব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।জানাযার পর মৃতব্যক্তির সঙ্গে কবর পর্যন্ত গিয়ে শেষ বিদায় জানাতেন। অতঃপর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথীদেরকে নিয়ে কবরবাসীকে প্রশ্নের সঠিক উত্তরের উপর দৃঢ় রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।পরবর্তীতে বার বার তার কবর জিয়ারত করতেন, কবরবাসীর ওপর সালাম দিতেন এবং তার জন্য দোয়া করতেন। মৃত্যুর আগে থেকে (মৃতব্যক্তি) অসুস্থ থাকা কালে তিনি তার খোঁজ-খবর নিতেন, তাকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন, তার ধন-সম্পদে বা অন্য কোনো বিষয়ে অসিয়ত করতে বলতেন এবং তাওবা করার আদেশ দিতেন।মৃত্যুশয্যায় রোগীর পাশে থাকা উপস্থিতলোকদেরকে তিনি এ মর্মে আদেশ দিতেন যে, তারা যেন মুমূর্ষ ব্যক্তিকে কালিমার (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর) তালকিন দেয় অর্থাৎ এটি পাঠ করতে বলে। যাতে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার সময় এ কালিমাই হয় তার সর্বশেষ কথা।অতঃপর তিনি পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী অন্যান্য জাতির (জাহেলীয়াতের) অভ্যাস অনুযায়ী মৃতব্যক্তির শোকে গালে চপেটাঘাত করা, উচ্চকণ্ঠে বিলাপ করা এবং এ জাতীয় অন্যান্য রীতি পালনে নিষেধ করতেন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতব্যক্তির জন্য চিন্তিত হওয়া এবং আওয়াজবিহীন কান্নার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি নিজেও তা করতেন। তিনি বলতেন, ‘চোখ কাঁদে, অন্তর ব্যথিত হয় আর আমরা তাই বলব যা আমাদের রব (প্রভু) পছন্দ করেন। হে ইবরাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে শোকাহত।’ (বুখারি)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’ বলা; ইন্নালিল্লাহ পাঠ করা এবং আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাককে তাগিদ দিয়েছেন।মৃতব্যক্তির জন্য বিশ্বনবির সুন্নাতের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক হলো->> মৃত ব্যক্তিকে জানাযার জন্য দ্রুত প্রস্তুত করা;>> কাফন ও দাফনে কোনো প্রকার বিলম্ব না করা;>> মৃতব্যক্তিকে পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা;>> মৃতব্যক্তির দেহে সুগন্ধি মাখানো এবং>> সাদা কাপড়ে কাফন পরানোও তাঁর সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত ছিল। অতঃপর মৃতব্যক্তিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হত। তারপর তিনি মৃতব্যক্তির জানাযার নামাজ পড়তেন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদের মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার সময় তাদের জন্য দোয়া করেছেন। তাঁর সাথীদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত তার পাশেই থাকতেন। অতঃপর মৃতব্যক্তির গোসল দেয়ার সময় উপস্থিত হতেন এবং জানাযার নামাজ পড়তেন ও কবর পর্যন্ত গমণ করতেন।মানুষের রূহ বের হওয়া মাত্রই মৃতব্যক্তির চেহারা ও শরীর ঢেকে দেয়া; উভয় চোখ বন্ধ করে দেয়াও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। তিনি মৃতব্যক্তিকে তিনবার বা পাঁচবার অথবা গোসল দাতার ইচ্ছানুপাতে তার চেয়ে অধিকবার গোসল দিতে আদেশ করেছেন। শেষবার কর্পূর ব্যবহার করতে বলেছেন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতব্যক্তির ওয়ারিশদেরকে ভাল এবং সাদা কাপড়ে কাফন পরাতে আদেশ দিতেন এবং কাফনের ক্ষেত্রে অপচয় ও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করতেন। সমস্ত শরীর ঢাকতে গিয়ে কাফনের কাপড় ছোট হয়ে গেলে মাথা ঢেকে ঘাস বা এ ধরণের কোন বস্তু দিয়ে উভয় পা আবৃত করে দিতে আদেশ করেছেন।বিশ্বনবির কাছে মৃতব্যক্তিকে উপস্থিত করা হলে তিনি উপস্থিত লোকদেরকে জিজ্ঞেস করতেন- তার উপর কোন ঋণ আছে কি? মৃতব্যক্তির কোনো ঋণ না থাকলে তিনি জানাযা পড়তেন। অন্যথায় তার জানাযা পড়তেন না।সেক্ষেত্রে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে জানাযা পড়তে বলতেন। কেননা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানাযা দেয়ার মানে হলো মৃতব্যক্তির জন্য শাফাআত স্বরূপ। আর তাঁর শাফাআত কবুলযোগ্য। অপরদিকে বান্দা তার ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; যতক্ষণ না পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করবে। এ কারণেই বিশ্বনবি নিজে থেকে অনেকের ঋণ পরিশোধ করেছেন এবং মৃতব্যক্তির সম্পদ ওয়ারিশদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির জানাযার কাফন ও দাফনের পদ্ধতি এবং করণীয়গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এনএইচ/আরআইপি
Advertisement