ডা. ম্যাড গিলবার্ট। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন। গাজার আশশিফা হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় চিকিৎসা করেছেন ইসরায়েলি তাণ্ডব শুরু হওয়ার পর থেকেই। সম্প্রতি নিজ বাসস্থান নরওয়ের ট্রমসোয় ফেরত যাওয়ার পর ২৫ মিনিটের এক মর্মস্পশী বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।ডা. গিলবার্ট তার ভাষণে বিশ্ববাসীকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। বিশেষ করে নরওয়ের জনগণের কাছে গাজায় ঘটে যাওয়া অনৈতিক আগ্রাসনের হৃদয় বিদারক কাহিনী তুলে ধরেছেন।ভাষণের শুরুতে গিলবার্ট বলেছেন, ‘পৃথিবীর হৃদয় এখন গাজা। এটা রক্তাক্ত, তবু জীবিত। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতিরোধক্ষমতা বিস্ময়কর! এটা ন্যায্য এবং আমাদের সবার জন্য। আমরা এমন পৃথিবী চাই না, যেখানে অস্ত্রের অসভ্য ব্যবহার হবে তাদের বিরুদ্ধে, যারা ন্যায় বিচারের জন্য সংগ্রাম করে।’তিনি নরওয়ের সকল নাগরিকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘ভেবে দেখুন, আপনাদের কি করা উচিত। যেহেতু জার্মানদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেতে আপনাদের যুদ্ধ করতে হয়নি। আমি জানি, আপনারা গাজাকে সমর্থন করবেন। আমি জানি, আপনারা সেই বীরদের পক্ষ নেবেন যারা ন্যায্য পাওনা আদায়ে গাজায় সংগ্রাম করছে।’‘কিন্তু এটা বাস্তবায়ন সহজ নয়, যা আমি অতি কোমলতা, উষ্ণতা, নিরাপত্তা, বোমা, জেট বিমান, রক্ত এবং মৃত্যু ছাড়াই জয় করেছি। আমাদের নিজেদেকে ভেতর থেকে উপরিভাগে প্রদর্শনের সময় এসেছে।’‘ভাবছি যখন আমি বাড়িতে ফিরে যাব এবং আমার মেয়ে সিরি এবং তর্বজর্ন, আমার জামাতা, নাতনী জেনী ও তর্জের সঙ্গে মিলিত হব তখন সেটা একটা ছোটখাট দেশে পরিণত হবে।’‘সব ধরনের সম্পর্কে মানবতা থাকা ভালো। কারণ, আমরা এ দেশ তৈরি করেছি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে, পারস্পারিক মর্যাদা এবং মানবতার প্রতি সন্মান দিয়ে।’‘আমি ১৯৪৫ সালে ফিরে গিয়ে কল্পনা করছি। আমি বুঝি তাই জার্মানির নাজী পার্টির সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা করছি না।’‘কিন্তু আমি অধিকারের সঙ্গে অধিকারের তুলনা করছি। কল্পনা করুন, ১৯৪৫ সালে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হইনি। দখলদারদের বিতাড়িত করিনি, আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারিনি, কখনো ভাবিনি আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে। ভাবুন, দখলদার বাহিনী আমাদের দেশে অবস্থান করছে, যুগ যুগ ধরে আমাদের খণ্ড বিখণ্ড করছে। আমাদের নিজেদের সামান্য জায়গা-জমি থেকে বিতারিত করছে। সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে, জমি দখল করছে, পানি সেচে নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা সব দিক থেকে সংকীর্ণ হয়ে পড়ছি।’‘এখানে ট্রমসোয়তে আমরা কারারুদ্ধ। কারণ, একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও দখলদাররা তা মানছে না।’‘ট্রমসোয় শহরটি সাত বছর ধরে অবরুদ্ধ হওয়ার পর দখলদাররা আমাদের ওপর বোমা বর্ষণ করছে। যখন নরওয়ের অধিকারে থাকা অন্য অংশের সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছি যে, আমরা সবাই মিলে ন্যায্য অধিকারের বিষয়ে কথা বলব তখন দখলদাররা আবারও বোমা বর্ষণ করেছে।’‘তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, মেডিক্যাল সেন্টারে বোমা বর্ষণ করছে। অ্যাম্বুলেন্স কর্মীদের গুলি করে হত্যা করছে। তারা স্কুলে বোমা বর্ষণ করছে, যখন গৃহহারা নিঃস্ব মানুষগুলো স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা আমাদের বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা করছে, পানির লাইন কেটে দিয়েছে, তখন আমাদের কি করা উচিত?’‘আমাদের কি তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত? নাকি সাদা পতাকা তোলা উচিত? না না এটা উচিত হবে না…এটাই গাজার বর্তমান পরিস্থিতি।’‘এটা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের যুদ্ধ নয়। হামাস ইসরায়েলের শত্রু নয় যে ইসরায়েল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ইসরায়েল যুদ্ধ করছে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে যারা বাঁচতে চায়। কোনো অধিকারকে কেন্দ্র করে এ যুদ্ধ নয়।’‘এটা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য মর্যাদার বিষয় হলেও ইসরায়েল তাদেরকে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণীর নাগরিক মনে করে।’‘১৯৩৮ সালে নাজী পার্টির সদস্যরা ইশ্বরকে অর্ধমানব বলে ডাকত। এখন ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের অর্ধমানব বলে ডাকে। তাই তাদেরকে বোমা মেরে হত্যা করা ন্যায্য বলে মনে করে তারা।’‘সুতরাং আমি আমার স্বাধীন দেশে ফেরত এসেছি। কারণ, দখলদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীন দেশের নাগরিকরা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা রাখেন। এমনকি সেটা অস্ত্র দিয়ে। যা আর্ন্তজাতিক আইনে সিদ্ধ। আমরা দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখি। কারণ, কেউ অন্যের অধিকৃত হয়ে থাকতে চায় না।’ প্যালেস্টাইন ক্রনিকেল থেকে সংগৃহীত।
Advertisement