আমিনাহ আলাভী হুসাইন সবার কাছে ‘আলাভী হুসাইন’ নামে পরিচিত। বর্তমানে যুক্ত আছেন নিউ ইয়র্কের ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক মিলনের ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া ‘ডাক’ এবং ‘জবস্মার্টি’ নামক ভিন্নধর্মী উদ্যাগের কো-ফাউন্ডার তিনি। আলাভী হুসাইন ‘আলাভীস্ ক্লোজেড’র মালিক এবং ডিজাইনার। তার ডিজাইন করা পোশাক অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ ফ্যাশন উইকসহ দেশ-বিদেশের বহু ফ্যাশন শো-তে। বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন অ্যানালিস্ট হিসেবে ইন্টার্ন করেছেন আলকোয়াতে। এছাড়াও ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের স্টুডেন্ট সাপোর্ট অ্যানালিস্ট, লাইব্রেরিয়ান, টিউটর এবং মেন্টর হিসেবে কাজ করেছেন। একইসাথে ইউনিডোর রিসোর্স অ্যাসিসট্যান্ট এবং রাজ নিটিং অ্যাপারেলে রয়েছে মূখ্য ভূমিকা। পড়াশোনার পাশাপাশি জড়িত ছিলেন এবং এখনও আছেন মার্কিন মুলুকের বড় বড় আইটি হাবের সঙ্গে। বর্তমানে আলাভীর ধ্যান-জ্ঞান পুরোটাই তথ্য-প্রযুক্তিকে ঘিরে। অন্তত পাঁচ-সাতটি ভাষায় সমান পারদর্শী এবং বহু ইতিবাচক গুণে-গুণান্বিত আলাভী হুসাইনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী। জাগো জবস : ফ্যাশন সচেতনতার সঙ্গে আপনার স্বাবলম্বী হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে কী?আলাভী হুসাইন : আমার বয়স তখন ১২ কি ১৪; সে হিসেবে আমার এই ফ্যাশন সচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে বহু টাকা রোজগার করা শুরু করি। যদিও সেটা আমার পরিচিতদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যার মাধ্যমে দেশে এমনকি আমেরিকায়, তখনকার সময় আমার কাজিন এবং বন্ধুদের মাঝে আমার ডিজাইন করা পোশাকের বেশ কদর ছিল। এখনও সেটা রয়েছে। আর এভাবেই নিজের প্যাশনকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া শুরু।জাগো জবস : আপনার ফ্যাশন এ পর্যন্ত কোথায় প্রদর্শিত হয়েছে?আলাভী হুসাইন : আমার স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উৎসবে তো প্রদর্শিত হয়েছেই। তবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন-আমেরিকার পিটসবার্গ ফ্যাশন উইকে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ফ্যাশন ডিজাইনারের সঙ্গে আমার ডিজাইন করা পোশাকের প্রদর্শন হয়েছে।জাগো জবস : দেশ নিয়ে আপনার স্বপ্ন-আলাভী হুসাইন : এখন আমি আমেরিকা আছি; তবে ইচ্ছা আছে দেশের বাইরের আইটি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের দেশ ও মানুষের জব ক্রাইসিস দূর করা; জীবনকে ইজিয়ার করা; সমস্যা সমাধানে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা। জাগো জবস : তথ্যপ্রযুক্তিতে আপনার অর্জিত জ্ঞানকে কীভাবে কাজে লাগাতে চান?আলাভী হুসাইন : ‘তরুণ’ এবং ‘প্রযুক্তি’- এ দু’টি বিষয় নিয়ে অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে আমার। এখনও অবশ্য আমরা একটা টিম দেশের সফটওয়্যার তথা ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ অ্যাপ্লেকিশনের নানা অ্যাপ তৈরিতে কাজ করছে। এমনকি দেশের উন্নয়ন ও সমস্যা মোকাবেলায় আমরা যেন প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি, সেসব নিয়েও কাজ করার চিন্তা রয়েছে।জাগো জবস : বাংলাদেশি তরুণদের আইটি খাতে যুক্ত করার বিষয়ে আপনার ভাবনা-আলাভী হুসাইন : বাংলাদেশের তরুণরা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেখে আমার খুব ভালো লাগে। দেখা যাচ্ছে- তাঁরা আইটিতে কাজ করতেও বেশ উৎসাহী। এখন তরুণদের হাত ধরে দেশে বহু আইটি প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেছে। সুতরাং আমরা যেভাবে নতুন প্রজন্ম দেশটাকে গড়ছি; বিশ্বাস করি- খুব শীঘ্রই আমারা সবার উপরে উঠে যাবো। বাংলাদেশি তরুণদের বলতে চাই- একটা করে স্টেপ নিতে। ভাবতে ভাবতে বসে থাকলে হবে না, শুরু করতে হবে। আর আমারও স্বপ্ন- নতুন আইটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দেশের তরুণদের স্বপ্নপূরণে সহায়তা করবো।জাগো জবস : আপনাদের ‘ডাক অ্যাপ্লিকেশনটা’ নিয়ে যদি কিছু বলতেন-আলাভী হুসাইন : নির্যাতন তথা সামাজিক নানা সমস্যা থেকে বাঁচতে এ অ্যাপটি আমরা ডেভেলপ করেছি। এর স্লোগান হলো- ‘ডাক দিন সাহায্য আসবেই’। অ্যাপটি মূলত যে বা যিনি ব্যবহার করবেন,তিনি কোনো সমস্যায় পড়লে সয়ংক্রিয়ভাবে তার আশেপাশের বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে সমস্যাসংক্রান্ত মেসেজ দিবে। জাগো জবস : কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কী?আলাভী হুসাইন : আমি সবসময় ভাবি যে, আমি একজন মানুষ। আর মানুষ হিসেবে কখনোই নিজেকে ছোট হিসেবে দেখি না। এই পৃথিবীর সব জায়গা আমার কাজের ক্ষেত্র। আমার যেখানে ইচ্ছা যাবো, নিজের এবং পৃথিবীর জন্য ইতিবাচক কিছু করবো। আমি কাউকে ভয় পাই না; আমার চিন্তা আর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা হলো কোয়ালিটি থাকলে আমাকে হারাবে কে? জাগো জবস : আপনার সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা-আলাভী হুসাইন : আমার বাবা-মা-ভাই-ভাবি। আমার ভাই খুবই পরিশ্রমী। সে নিজেকে সবসময় ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত রাখে। আর এককথায় আমার ফ্যামিলির সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আর বাংলাদেশ আমার ভালোবাসা-ভালোলাগা।জাগো জবস : অ্যাপস-অ্যানিমেশন তথা শিশুতোষ শিক্ষা নিয়ে নিজের পরিকল্পনা-আলাভী হুসাইন : কিছু সমাজ সচেতন অ্যাপস বানানো; অ্যানিমেশন কার্টুন বানিয়ে শিশুতোষ পড়ালেখাকে অনুপ্রাণিত করা।জাগো জবস : সফল হওয়ার জন্য আপনার পরামর্শ- আলাভী হুসাইন : আপনি ঠিক আপনার মতোই হোন।সবসময় ভাবুন যে- ‘আমিও পারবো’। মনে আনন্দ নিয়ে পরিশ্রম করুন, দেখবেন আপনার মুখে হাসি ফুটবেই।জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?আলাভী হুসাইন : নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করা। আর অবশ্যই নিজেকে, নিজের দেশকে এবং আশপাশের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করাই আমার কাছে সফলতা। কারণ আমরা সামাজিক জীব। আমার পাশের মানুষটির জন্য আমি যদি ইতিবাচক হতে না পারি, তাহলে আমি আবার কীসের মানুষ, আর কি-ই বা আমার সফলতা!জাগো জবস : নিজেকে কোথায় দেখতে চান?আলাভী হুসাইন : আমি অনেক বড় জায়গা থেকেই অফার পাই। কিন্তু আসলে আমার ইচ্ছা আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করা। যেটা আমার দেশকে-মানুষকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যেতে সহায়তা করবে। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি মানুষকে সাহায্য করতে পারবো। যাতে সবাই খুশি থাকবে, বড় একটা টিম বিল্ড করবো এবং সবাইকে বড় করে তুলবো।এসইউ/এমএস
Advertisement