জাগো উপকূল

অধিকারবঞ্চিত উপকূলের শিশুরা

উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ শিশু এখনো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। এমনকি তিনবেলা খাবারও তারা অনেক সময় পায় না। দারিদ্র্যের কারণে এ শিশুরা নিয়োজিত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে। তাই শিশুদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে বিশেষ প্রকল্প প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকার সুরক্ষায় ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) গৃহীত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ২০ নভেম্বর সার্বজনীন শিশু দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির ২২টি দেশের অন্যতম, যারা সিআরসি সনদে স্বাক্ষর করেছে। সিআরসি স্বাক্ষর করার পর শিশু অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিশু নীতিমালা ২০১১, শিশু আইন ২০১৩, জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০ এবং জাতীয় শিশুশ্রম-নিরোধ নীতিমালা ২০১০ প্রণয়নসহ বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিলেও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার চিত্র একবারেই ভিন্ন। দারিদ্র্যের কারণে এসব এলাকায় কোনো নীতিমালাই কার্যকর হচ্ছে না। পেটের তাগিদে উত্তাল সাগরেও মাছ শিকারে নামছে এখানকার শিশুরা। এছাড়া শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি অবহেলার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। চন্দ্রদীপ ইউনিয়নের সুজন (৮) জানায়, ‘তিন মাস আগে মায় মারা গেছে। আব্বায় নতুন মা আনছে। নতুন মায় কইছে পড়াশুনা কইরা কী অইবে? মাছ ধরলে টেহা (টাকা) পাওন যাইবে। হ্যার লইগা স্কুলে যাই না।’ জানা গেছে, বাউফল উপজেলার ১৫নং চন্দ্রদীপ ইউনিয়নে মোট ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হওয়ায় ভালো শিক্ষকেরা অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে শিক্ষক সংকট দেখা দিচ্ছে ওইসব বিচ্ছিন্ন চর এলাকায়।চর ব্যারেট গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামে অধিকাংশ মানুষ গরিব ও অশিক্ষিত। তাই তারা শিশুদের স্কুলে পাঠাতে চায় না। তারা নগদে বিশ্বাসী। কাজ করলে টাকা পাওয়া যায়। স্কুলে গেলে শুধু টাকা খরচ হয়- এমনটাই মনে করেন তারা।আব্দুল করিম মৃধা কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. দেলোয়ার জাহান বলেন, চরাঞ্চলের শিশুদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ আছে, আরো ব্যাপকভাবে নিতে হবে।চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলকাস মোল্লা বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ তাদের প্রধান পেশা। বিকল্প আয়ের কোনো উৎস না থাকায় শিশুদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে এ শিশুদের শিক্ষাজীবন নিরাপদ করতে হলে সরকারের বিশেষ প্রকল্প হাতে নিতে হবে। সমাজে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের শিশুদের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকারি নজরদারির পাশাপাশি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন পটুয়াখালী শিশু অধিকার আন্দোলন কমিটির সভাপতি স ম দেলায়ার হোসেন দিলীপ।পটুয়াখালী জেলায় মোট কতো শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত এর সঠিক কোনো সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার হিসাব অনুসারে শুধু পটুয়াখালী পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডেই এর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০। জেলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে পর্যাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ চরের অভিভাবকদের আরো সচেতন করারও তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টেরা।এফএ/এ্নএইচ/এমএস

Advertisement