জাতীয়

খালার ভাতের হোটেল

শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টা। শাহবাগ থেকে টিএসসির রাস্তায় হেঁটে চলার সময় পাবলিক লাইব্রেরি পেরোতেই রাস্তার ধারে চোখে পড়লো কিছু মানুষ। যারা পিঁড়িতে (কাঠের তৈরি বসার আসন) বসে খোলা আকাশের নিচে ভাত খাচ্ছেন। রিকশাচালক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলোর কাছে এটা ‘খালার ভাতের হোটেল’ নামেই পরিচিত।খাবার হোটেল বলতে বোঝায় সাধারণত টেবিল-চেয়ার থাকবে, থাকবে মেসিয়ার, ফরমায়েশ অনুযায়ী টেবিলে পরিবেশন করবে কাস্টমারের খাবার। কিন্তু এখানে যে খোলা আকাশের নিচে হোটেল, এখানকার পরিবেশ কিছুটা ভিন্ন। এখানে নেই অতসব আয়োজন।  সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘাম ঝরানো শরীর নিয়ে সাদামাটাভাবে রাতের খাবার খাচ্ছেন রিকশাচালকেরা। তবে আপ্যায়নের যেন কমতি নেই একটুও। সারা দিনের বিরতিহীন খাটুনিতে তাদের ক্ষুধার জ্বালার যেন অন্ত থাকে না। ক্ষুধা নিবারণ-ই যে শরীরের প্রধানতম উপলক্ষ তাদের।এই হোটেলে পাওয়া যাচ্ছে ভাত, সবজি, শুঁটকি ভর্তা, মাছ আর ডাল। পাশেই পাত্রে রাখা আছে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ। সবকিছু মিলে দাম ৩৫ টাকা। যেসব স্বল্প আয়ের মানুষ এবং রিকশাচালকেরা এখানে ভাত খেতে আসেন তাদের পক্ষে প্রচলিত কোনো হোটেলে গিয়ে ভাত খাওয়া অনেকটাই বিলাসিতা। তাই তারা প্রতিদিনিই ভিড় জমান খোলা আকাশের নিচে এই ‘খালার ভাতের হোটেলে’।সকাল থেকে টানা রিকশা চালিয়ে শাহবাগসংলগ্ন এই ভাতের হোটেলে রাতের খাবার খেতে এসেছেন রিকশাচালক হুমায়ুন। অনেকটাই ঘামে ভিজা শরীর নিয়ে, গামছায় ঘাম মুছতে মুছতে হুমায়ুন বলছিলেন, ‘খালা মাছ দিইয়া ভাত দাও।’ তার কথা শুনেই খালাও (হোটেলের পরিচালনাকারী, যিনি খালা নামেই পরিচিত) ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হুমায়ুনের জন্য ভাত বাড়তে।ভাত খেতে খেতে রিকশাচালক  হুমায়ুন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ভালো হোটেলে গিইয়া ভাত খাওনের সামর্থ্য নাই আমাগো। তাই খালার হোটেলেই প্রতিদিন খাইতে আসি। এখানে কম টেকায় খাওন যায়।’হোটেল পরিচালনাকারী ‘খালা’ জানান, আমার এই হোটেলে কম দামেই খাবার বিক্রির চেষ্টা করি,  তাই প্রতিদিন অনেক দিনমজুর, খেটে খাওয়া, নিম্ন আয়ের মানুষ খেতে আসে। আগে আরো কম দাম রাখতাম, তবে এখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’‘এই গরিব মানুষদের তুলনামূলক কম দামে ভাত খাওয়াইয়া মনে খুব শান্তি লাগে’, বলেও যুক্ত করেন তিনি।এএস/জেডএ/এনএইচ/এমএস

Advertisement