জাতীয়

আলোচনা ছাড়া গণতান্ত্রিক উন্নয়ন অসম্ভব : অমর্ত্য সেন

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া গণতান্ত্রিক উপায়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য সবার সঙ্গে আলোচনাই প্রধান মাধ্যম।সোমবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে নিজের লেখা বইয়ের অনূদিত বাংলা সংস্করণ ভারত: উন্নয়ন ও বঞ্চনা -এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রথম আলো ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন ‘অর্থনৈতিক প্রগতি ও মানবিক প্রগতি’ শীর্ষক বক্তব্য দেন।অমর্ত্য সেন বলেন, অর্থনৈতিক প্রগতি ও মানবিক প্রগতি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। একটি ছাড়া অপরটির উন্নয়ন মানুষের কল্যাণে বড় ভুমিকা রাখতে পারে না। মানবিক প্রগতির জন্য দেশের সব নাগরিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানব উন্নয়ন -সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিশ্চিত করা দরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে অবশ্যই সরকারকে প্রধান ভুমিকা রাখতে হবে।তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রগতির পাশাপাশি মানবিক উন্নয়নের জন্য সরকারের সঙ্গে ব্যক্তিখাতের ভূমিকাও অনেক বড়। সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া গণতান্ত্রিক উপায়ে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায় না। কোনো কিছুর পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক আলোচনা জরুরি।ভারতের উদাহরণ টেনে অমর্ত্য সেন বলেন, ভারত ১৯৪৭ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারলেও মানবিক প্রগতি সুনিশ্চিত করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলোতে ১৯৯০ সালে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে এগিয়ে আছে।অ্যাডাম স্মিথের দ্য ওয়েলথ অব নেশনস বইয়ের উদাহরণ টেনে অমর্ত্য সেন বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়, তেমনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মানবিক প্রগতির জন্য কাজ করতে সরকার টাকা পায়।তিনি বলেন, নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুব্যবস্থার দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত, বেসরকারিভাবে তা সবার জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।বক্তৃতায় ভারতের কেরালা রাজ্যের উন্নয়নের উদাহরণ টেনে অমর্ত্য সেন বলেন, মানবিক প্রগতি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। মানবিক প্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন বঞ্চনার সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।বাংলাদেশের কাছেও ভারতের শেখার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো কয়েকটি পণ্য নির্ভর। ভারত মূলত তথ্য-প্রযুক্তি, ফার্মেসি ও অটোমোবাইল এই তিনটি পণ্য রপ্তানি করে। ১৯৯৩ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় ছিল বাংলাদেশের তুলনায় ৫০ ভাগ বেশি। আর বর্তমানে এর ব্যবধান প্রায় শতভাগ। কিন্তু তারপরও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মেয়েদের অন্তর্ভূক্তি অনেক বেশি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মেয়েদের অন্তর্ভূক্তি বেড়েছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এটা ছিল না। তাই চাকরির বাজারে মেয়েদের অন্তর্ভূক্তির এ ব্যাপারটি বাংলাদেশের একক কৃতিত্ব বলে তিনি জানান।জেন্ডার প্রগতির এ ব্যাপারটি বাংলাদেশের কাচ থেকে ভারতকে শিখতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পড়াশুনা করতে হবে। বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তবে যা পড়ছি তাই মানতে হবে এমন নয়। কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকলে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এর মাধ্যমেই একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।এসআই/আরএস/এমএস

Advertisement