দীপু মাহমুদ। লেখক ও অভিনয় শিল্পী। পড়েছেন ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কেয়ার-এর টিম লিডার হিসেবে কাজ করছেন। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার ১১টি বই। বইমেলা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। জাগোনিউজ : আপনার লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাই..দীপু মাহমুদ : আমি সব বয়সের মানুষের জন্য লিখছি। আমার লেখা বেশকিছু বই আছে শিশুতোষ। আছে কিশোর গল্প ও উপন্যাস। বড়দের জন্য উপন্যাস লিখছি। আর কিছু শিক্ষামূলক বই। খুব ছোটবেলায় যারা আমার লেখা পড়বে, আমি জানি তারা কিশোর বয়সে এসে আমার লেখা খুঁজবে। আবার বড় হয়েও খুঁজবে। তাই সব বয়সের জন্য লেখা। চাকরির সুবাদে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমার বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি সেগুলো লিখে যাচ্ছি বই আকারে যেন অভিজ্ঞতা বিনিময় সম্ভব হয়। জাগোনিউজ : এবারের বইমেলায় আপনার কতটি বই প্রতাশিত হয়েছে? মোট বইদীপু মাহমুদ : এবারের বইমেলায় আমার লেখা মোট এগারোটা বই এসেছে। পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস- ফেরা হয় না এবং শিশুদের জন্য লেখা গল্প সংকলন- বারো ভূত। তাম্রলিপি প্রকাশ করেছে কিশোর উপন্যাস- রাজকুমার ও যুবরাজ। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ মেলায় এনেছে দুটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি কিটি আর রিকি। সূচিপত্র প্রকাশ করেছে শিক্ষামূলক বই-কিশোর-কিশোরিদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যজিজ্ঞাসা আর প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ পরিচয়। হাতেখড়ি প্রকাশ করেছে শিক্ষক সহায়ক বই- খেলতে খেলতে শেখা। শিশুতোষ বই এনেছে পঙ্খিরাজ-বাড়ির সাথে আড়ি, ছোটদের বই-রায়া ও ছোটকু এবং ঘাস ফড়িং-চিরায়াত লেভ তলস্তয় মিথ্যাবাদী রাখাল বালক।আমার লেখা মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা: চল্লিশ।জাগোনিউজ : বইমেলা নিয়ে কিছু বলুন...কোনো অব্যবস্থাপনা চোখে পড়েছে কি?দীপু মাহমুদ : চারপাশে গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে। অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশ আর সাধারণ মানুষের অস্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্যে শুরু হয়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫। গত প্রায় দুই মাস ধরে চলছে নিরবচ্ছিন্ন অবরোধ। তার ভেতর থেমে থেমে হরতাল। শঙ্কা ছিল মানুষ মেলায় আসতে পারবে কিনা। আমাদের জীবন হয়ে পড়েছে অনিরাপদ। আমাদের অবাক করে দিয়ে মানুষ আসতে শুরু করলো মেলায়। দিনে দিনে সেই মানুষ বেড়ে গেল। মানুষ নিজ আত্মাকে বাঁচাতে ছুটে এলো। বই মানুষের আত্মাকে বাঁচায়। মানুষজন মেলা ঘুরে বই পছন্দ করছেন, বই কিনছেন।তবে মেলা দুই ভাগে ভাগ করা ঠিক হয়নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে বেশ একসঙ্গে করা যেত এই মেলা।জাগোনিউজ : বইমেলা নিয়ে আপনার কোনো ভাবনা দীপু মাহমুদ : আমি বাংলা একাডেমিকে বলব, বইমেলার ব্যাপারে আরও যত্নবান হতে। মেলাকে ভাগ না করে একসঙ্গে করা। মেলার সময় রাত ৯টা পর্যন্ত করা। যারা অফিস শেষে মেলায় আসেন তারা ঢুকেই দেখেন মেলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেলার পরিসর এবার বেড়েছে। তবে বড্ড খাপছাড়া। মাঝখানে প্যাভিলিয়নের জন্য ওপাশের স্টলগুলো ঢেকে গেছে। আর কিছু স্টল দেখাই যাচ্ছে না। সেদিকে যে মেলার কোনো অংশ আছে মনেই হচ্ছে না। এদিক নজর দিতে হবে।জাগোনিউজ : আপনার লেখালেখির বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে শিশুতোষ দীপু মাহমুদ : শিশুসাহিত্যে অনেক কাজ করার আছে বলে আমার মনে হয়েছে। শিশুদের বেড়ে ওঠা, তাদের ভাবনা, মস্তিষ্কের বিকাশ এটা দাবী করে। আমাদের বয়স উপযোগী করে বিষয়, শব্দ, বাক্য ইত্যাদি নির্ধারণ করতে হবে। ৫-৬ বছরের শিশুর চাহিদা আর ১১-১২ বছরের শিশুর চাহিদা ভিন্ন। আমি শিশুমানসকে শ্রদ্ধা করে যত্ন ভরে ওদের জন্য মানে শিশুতোষ লেখায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছি।জাগোনিউজ : সস্প্রতি আপনি সাইন্স ফিকশন নিয়ে লিখতে যাচ্ছেনদীপু মাহমুদ : কিশোর বয়স কল্পনায় পরিপূর্ণ। আর আজ যা কল্পনা আগামীকাল তা বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেই পারে। কিশোররা বিজ্ঞানমনষ্ক হোক। তারা নিজেদের ভেতর যুক্তি খুঁজুক। আমি সায়েন্স ফিকশন লিখছি কিশোর-কিশোরিদের ভেতর সহজ স্বাভাবিক একটা বিজ্ঞান মন গড়ে তোলার জন্য। জাগোনিউজ : আপনার `ফেরা হয় না` উপন্যাস নিয়ে কিছু বলুনদীপু মাহমুদ : ফেরা হয় না বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির প্রভাব ও পরিণাম নিয়ে লেখা উপন্যাস। যে তারুণ্য স্বপ্ন দেখে। যে তারুণ্য মানুষের মুক্তির কথা বলে। সেই তারুণ্য ছাত্র রাজনীতির ভুল পথে পরিচালিত হয়ে একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়। অথচ কথা ছিল ছাত্র রাজনীতি তাকে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে। সেটা না করে তারুণ্যের মোহকে কাজে লাগিয়ে এখনকার ছাত্র রাজনীতি দলীয় হীনস্বার্থে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। অস্ত্র মানুষের মুক্তির কথা বলে না। মানুষকে বদলে দিতে হয়ে ভেতর থেকে। এই কথা বলা হয়েছে ফেরা হয় না উপন্যাসে।জাগোনিউজ : বাঙালি জাতি হিসেবে আমার কতটা বইপ্রেমী? দীপু মাহমুদ : আমরা কিন্তু বই পড়ছি। জাতি হিসেবে আমরা তুমুল বইপ্রেমী না হলে এত প্রকাশনা সংস্থা, এত এত বই এগুলো বিক্রি হতো না। আমাদের তেমন পরিবেশ থাকলে দেখতেন রেল ইস্টিশানে, বাস স্ট্যান্ডে, লঞ্চঘাটে বসে মানুষ বই পড়ছে। জাগোনিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদদীপু মাহমুদ : ধন্যবাদ জাগো নিউজকে। বিএ/আরআইপি
Advertisement