একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবসের ভোরে প্রভাতফেরী সহকারে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করতে দেখা গেছে একদল পথ শিশুদের। যাদের নিজস্ব ঠিকানা নেই। আবার অনেকেই আছেন মা ও বাবার নামও ঠিকভাবে জানেন না। সারিবদ্ধ শহীদ মিনারের পুষ্পস্তবক অপর্ণের নেপথ্যে রয়েছে ১২ জন নিবেদিত তরুণের প্রচেষ্টা। ওরা ১২ জন, সবাই সংবাদকর্মী। বয়সের মাপকাঠিতে তারুণ্যের উদ্দীপনা দীপ্ত বিশ্বাস রয়েছে। আর বিশ্বাসের আলোকে উদ্দীপনা নিয়ে স্বেচ্ছায় মানবিক কল্যাণে মনোনিবেশ করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে। প্রাথমিক অবস্থায় নিজের গ্রহণ করা উদ্যোগের কিছুটা সফলতাও লক্ষ্য করা গেছে কক্সবাজার শহরে। আর তার প্রমাণ মিলেছে একুশে ফেব্রুয়ারিতে পথশিশুদের প্রভাত ফেরী। ওমর ফারুক হিরুর নেতৃত্বে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর শুরুতে ১২ জন মিলে স্বেচ্ছায় তৈরি করেন ‘আমরা পথশিশু’ নামের একটি সংগঠন। আর এ সংগঠনটির ব্যানানে তারা পথশিশুদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেন। ১০ জন পথশিশু দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে এক যোগে একশত পথশিশু নিয়ে কাজ করছেন তারা। আর এ উদ্যোগের নেতৃত্বদানকারি সংবাদকর্মী ওমর ফারুক হিরু জানান, কক্সবাজারের ১২ জন সংবাদকর্মী শহরের পথশিুদের মূল ধারায় আনার লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু করেন নিজেদের উদ্যোগেই। কক্সবাজার শহীদ মিনার কেন্দ্রিক তাদের এ কাজ। তালিকাভূক্ত শিশুদের নিয়মিতভাবে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয় শহীদ মিনারে। একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, মাদক পরিহারের নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। একই সঙ্গে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ও তাদের জানানো হচ্ছে।আর মাদকাসক্ত পথশিশুদের নানা কৌশলে তা পরিহারের চেষ্টা চালানোর কথা বললেন উদ্যোক্তা অপর সংবাদকর্মী মইন উদ্দিন।তিনি জানান, পথশিশুরা কেউ স্বপ্ন দেখতে জানে না। তাদের মধ্যে স্বপ্ন তৈরি করে দিয়ে ভবিষ্যৎ সুন্দরের চেষ্টা তারা করছেন। সংবাদকর্মীদের এমন কাজে এগিয়ে এসেছেন কক্সবাজারের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক ফাহমিদা বেগম।তিনি জানান, পথশিশুদের পড়ালেখার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে বই যোগাড় করে দিয়েছেন তিনি। ওদের ক্লাসে মাঝে মধ্যে তিনি যান। ওদের পড়ালেখা শিখার দৃশ্য দেখেন।এসব পথশিশুদের দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, যেসব পথশিশু ওখানে রয়েছে তাদের অনেকেই নিজের মায়ের নাম জানলেও বাবার নাম জানেনা। শহরের মোহাজের পাড়া, বৈদ্যঘোনা, গাড়ির মাঠ, সমিতি পাড়া, লালদিঘীর পাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ওদের বসবাস। গত ৫ মাস ধরে ওদের লেখাপড়ার সাথে নানাভাবে বুঝানোর কারণে ইতিমধ্যে অর্ধেকেরও বেশী শিশু মাদক ছেড়ে দিয়েছে। তাদের একজন মো. ফারুক (৮)। এ পথশিশু মাদক সেবন প্রসঙ্গে জানায়, জুতার পালিশের সাথে ব্যবহার্য গাম সেবন করছে বেশ কিছুদিন ধরে। এরকম একটিন গামের দাম ত্রিশ টাকা। তবে সাংবাদিকদের সাথে মেলামেশার পর এসব তেমন আর সেবন করেনা। এরকম হাসান, গুরাইয়া, রায়হান, পুতু, করিমসহ অনেক পথশিশু সংবাদকর্মীদের পাশে আসার পর মাদক ছেড়ে দিয়েছে। উদ্যোক্তা সংবাদকর্মী আরাফাতুল মজিদ জানান, ওদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হয়। বিভিন্ন সময় ওদের জন্য পিকনিকের আয়োজনও করেছিলাম। তবে ওরা সাংঘাতিক অস্থির প্রকৃতির মানব সন্তান। একটি স্থানে দুই মিনিটও স্থির থাকতে পারেনা। তবুও শহীদ মিনারের পাদদেশে বসে অ-আ উচ্চারণ করতে দেখে তার ভালো লাগে।এ মহতি উদ্যোক্তদের মধ্যে ওমর ফারুক হিরু কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক কক্সবাজার-এর নিজস্ব প্রতিবেদনক, মইন উদ্দিন দৈনিক সমুদ্র কন্ঠের প্রধান প্রতিবেদক, আরাফাতুল মজিদ দৈনিক আজকের কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক। অন্যান্যরা হলেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি ইসমত আরা ইসু, দৈনিক আজকের দেশ-বিদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল আলিম নোবেল-দেশ-বিদেশ ও রাশেদ রিপন, দৈনিক আজকের কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক নুরুল আজিম নিহাদ, দৈনিক হিমছড়ির নিজস্ব প্রতিবেদক সাহেদ ইমরান মিজান, দৈনিক সকালের কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম বাদশা, দৈনিক বাঁকখালীর নিজস্ব প্রতিবেদক আমিরুল ইসলাম মোহাম্মদ রাশেদ, খোবাইব এবং স্বাশতি বড়ুয়া।এমএএস/পিআর
Advertisement