মতামত

ঢাকা আর কতো সইবে?

একটি দেশকে যদি মানব শরীরের সঙ্গে তুলনা করা যায়, তাহলে তার মুখ হচ্ছে রাজধানী। শরীরের সব মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম যেমন স্বাস্থ্য নয়, তেমনি দেশের সব মানুষ রাজধানীতে চলে আসাটাও কোনো সুলক্ষণ নয়।  এসবের মূল কথা হচ্ছে মুখই বলে দেয় সার্বিক অবস্থার কথা। রাজধানী ঢাকার বিপুল জনসংখ্যাই যেন বলে দিচ্ছে এই শহরের প্রকৃত অবস্থা আসলে কী।  রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার জনসংখ্যা এখন ১ কোটি ৭০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) দেওয়া  হিসাব অনুযায়ী ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ১১তম। কিন্তু আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার হিসাবে এটিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন শহরে যুক্ত হচ্ছে গড়ে আরও ১ হাজার ৭০০ মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। সত্যি বলতে কী, রাজধানী ঢাকা এরই মধ্যে বাস অনুপযোগী শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর ওপর জনসংখ্যার চাপ অব্যাহত থাকলে এই বিপুল জনসংখ্যার ভার কীভাবে বহন করবে ঢাকা -সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। এমনিতেই সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠেছে এই শহর। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ এ শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও কাঙ্ক্ষিত মানের নয়। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই যানজটে স্থবির থাকছে রাজধানী। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়নের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার।অথচ ঢাকার রয়েছে ৪০০ বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য। ঢাকা শুধু একটি শহর নয়, এর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। হারিয়ে যাওয়া সেসব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজধানীকে বাসোপযোগী করতে হলে জনসংখ্যার চাপ কমাতে হবে। এজন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সবকিছুই ঢাকাতে থাকতে হবে-এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখনই এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নিলে ঢাকার অবস্থান সবদিক থেকেই আরো নিচে নামতে বাধ্য। এইচআর/পিআর

Advertisement