মতামত

নবান্ন : আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের গর্বিত অনুভূতি

বাংলার চাষি শতকরা আশি যদি টানে পিছে বাকি বিশে মিলে দেশ গড়া যাবে- এ কথাটি মিছে। এ শুধু ছন্দায়িত প্রকাশ নয়, এর মর্মার্থ দেশীয় প্রেক্ষাপটে দারুণভাবে যুক্তিযুক্ত। কৃষিপ্রধান এ দেশের প্রাণ কৃষি। আমাদের কৃষ্টি, সমৃদ্ধি একান্তভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সে কৃষি কোনোকালে প্রাপ্য মর্যাদা লাভ করেনি আজতক। বাংলাদেশের উন্নয়নের মহানায়ক কৃষক-কিষাণী কিংবা কৃষি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত গবেষক, বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণবিদ, উন্নয়নকর্মী এরা সবাই প্রচার-প্রকাশের পেছনের দীপ্ত সারথি। কৃষি চাষা-ভুষার কাব্য হিসেবে থেকে গেছে স্বীকৃতির অন্তরালে। দাম দেয়া হয়নি বলে দাম পায়নি। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, এ দেশের শতকরা ১০০ ভাগ মানুষের মধ্যে আমরা কে বা কতজন কৃষির ওপর নির্ভরশীল নই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে? উত্তর পাওয়া যাবে না। অথচ আমরা বলি যারা জোগায় ক্ষুধার অন্ন আমরা আছি তাদের জন্য। একথা শুধু মৌখিক উচ্চারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে কৃষির সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো দাম দেয়া-পাওয়ার হিসাব না কষে মাটির সোঁদাগন্ধে মিশে থেকে প্রোথিত করেছে আগামীর সম্ভাবনার বীজ। এ বীজ মাটির অতুল প্রসাদে সিক্ত হয়ে আদর-আহ্লাদ পেয়ে অঙ্কুরিত হয়ে শাখা-প্রশাখা ফুলফলে সুশোভিত হয়ে খাদ্য জোগায়, পুষ্টি জোগান দিয়ে পূরণ করেছে আমাদের বহুমাত্রিক চাহিদার ষোলকলা।ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি-বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় প্রতিনিয়ত হানা দেয় বাংলার কৃষির অতনু শরীরে। তছনছ করে দেয় কৃষকের ঘামের ফসল। কৃষক দিশেহারা হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে বাংলার নাবিল জমিনে। অঙ্গহানি হয় কৃষির। স্থবির হয়ে যায় কৃষিপ্রাণ চঞ্চলতা। তবু ধ্বংসে ডরে না কৃষক। আবার লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তেপান্তরে জমি কর্ষণে। লাঙলের ফলার মাঝে লুকিয়ে রাখে সম্ভাবনার অমিত প্রতিশ্রুতি। জীবনের প্রয়োজনে কৃষির মাত্রা দিয়ে নতুন অভিযানে যাত্রা করে। অবলা প্রান্তর সবুজ-সোনালি রঙে রাঙিয়ে ওঠে মৌসুমে মৌসুমে। ফসলের মৌ মৌ মাতাল গন্ধে ভরে ওঠে প্রাণ। নবান্নের আয়েশি বন্দরে নোঙর খাটিয়ে কৃষক আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলে। প্রশান্তি পায় এ ভেবে বাংলার মানুষ বেঁচে থাক দু’বেলা খেয়ে-দেয়ে। অনেকেই তখন বলেন, কৃষি এলেই কৃষ্টি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এ মেকি বাক্য আবার হারিয়ে যায় যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। কিন্তু সবাই জানে না স্বীকৃতি-সম্মান ছাড়াই কৃষি টিকে যায় পালাবদলের মরীচিকায় যুগ শতাব্দী ধরে। কিন্তু কৃষির প্রতি আমাদের সার্বজনীন এ যে অবহেলা-অযত্ন তাতে কিন্তু আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে সরু করে দেয়। দিনে দিনে পিছিয়ে যায় সম্মুখপানে এগোবার সিঁড়ি। কিন্তু আমরা কি জানি অনেক দেশ আমাদের চেয়ে অনেক কম ঐতিহ্য-সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্ব কৃষিবাজারে দারুণভাবে জায়গা দখল করেছে। আমরা পারি না আমাদের অহেতুক দীনতার জন্য।আবহমান কাল থেকে চির ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু নবান্নের উৎসব ঘেরা অগ্রহায়ণ মাসের ১ তারিখ স্বীকৃতি পাওয়া দরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলার কৃষি প্রতি বছর ১ অগ্রহায়ণ পালিত হোক জাতীয় কৃষি দিবস। পাকাধানের আকুল করা গন্ধ, ধানকাটার আমেজ উচ্ছ্বাস, নবান্নের মাতোয়ারা, কৃষকের আনন্দ-আহ্লাদ, পিঠাপুলির আয়োজনের সঙ্গে মিশে থাকবে ১ অগ্রহায়ণের জাতীয় কৃষি দিবস। স্বীকৃতি পাবে বৃহত্তর কৃষি, স্বীকৃতি পেলো কৃষিভিত্তিক উন্নয়নের মহানায়ক কৃষক খামারিরা তাদের নিজস্ব দিবস হিসেবে। জানি না এ স্বীকৃতির কতটুকু আসল অংশীদার হবে তারা, যারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে কৃষককে, কৃষিকে চলমান রাখতে অহরহ অলক্ষ্যে কাজ করছে।নবান্ন শস্যভিত্তিক একটি ঐতিহ্যবাহী লোকজউৎসব শস্যোৎসব। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গ্রামবাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। এ দেশের সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এ উৎসব একটি সার্বজনীন উৎসব। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় প্রধান শস্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে যে কোনো ঋতুতে এ উৎসব পালিত হয়। অধিক শস্যপ্রাপ্তি, বৃষ্টি, সন্তান ও পশুসম্পদ কামনা এ উৎসব প্রচলনের প্রধান কারণ। উত্তর-পশ্চিম ভারতে নবান্ন উৎসব পালিত হয় বৈশাখ মাসে। সেখানে রবিশস্য গম ঘরে তোলার আনন্দে এ  বৈশাখী নবান্ন উৎসব পালন করা হয়। দক্ষিণ ভারতেও প্রচলিত আছে এমনি ধরনের নবান্ন উৎসব। বাংলাদেশের কয়েকটি উপজাতিও তাদের ধান ফসল ঘরে তোলার সময় নবান্ন উৎসব পালন করে। সাঁওতালরা পৌষ-মাঘ মাসে শীতকালীন প্রধান ফসল ঘরে তুলে উদযাপন করে উৎসব। তারা সাত দিন সাত রাত গানবাজনা এবং মদ্যপানের মাধ্যমে এ উৎসব পালন করে। উসুই উপজাতি অন্নদাত্রী লক্ষ্মীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে মাইলুকমা উৎসব পালন করে। জুম চাষি ম্রো উপজাতি চামোইনাত উৎসবে মুরগি বলি দিয়ে নতুন ধানের ভাতে সবাইকে ভূরিভোজন করায়। ফসল তোলার পর গারো উপজাতি ফল ও ফসলের প্রাচুর্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে পালন করে পানাহার ও নৃত্যগীতবহুল ওয়ানগাল্লা উৎসব। বাংলাদেশে নবান্ন উৎসব পালন করত প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়। হেমন্তে আমন ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ কিংবা পৌষ মাসে গৃহস্থেরা এ উৎসব পালনে মেতে উঠত। উৎসবের প্রধান অঙ্গ ছিল নতুন চালে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা। পরে দেবতা, অগ্নি, কাক, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়স্বজনদের নিবেদন করে গৃহকর্তা ও তার পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করতেন। এ উপলক্ষে বাড়ির প্রাঙ্গণে ঘরে-বাসায় আলপনা আঁকা হতো। পিঠা-পায়েসের আদান-প্রদান এবং আত্মীয়-স্বজনের আগমনে পল্লির মেঠো পথ প্রতিটি গৃহের পরিবেশ হয়ে উঠতো আনন্দঘন মধুময়। সর্বত্র গুঁড়ি কোটার শব্দ, শাঁখের শব্দে গ্রামাঞ্চল হয়ে উঠতো প্রাণবন্ত। পাড়ায় পাড়ায়,  বাড়িতে বাড়িতে  বসতো কীর্তন, পালাগান ও জারিগানের আসর। অগ্রহায়ণ মাসের উত্থান একাদশীতে মুখোশধারী বিভিন্ন দল রাতভর বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচগান করতো। কৃষকেরা নতুন ধান বিক্রি করে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ কিনতো। বর্তমানে সেসবের অনেক কিছুই লোপ পেয়েছে। এখন সংক্ষিপ্তভাবে কেউ কেউ এ উৎসব পালন করে। নবান্ন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সে ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে এ খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায় বলে তাদের ধারণা। এই নৈবেদ্যকে বলে "কাকবলী"। অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল।নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলার গ্রামীণ জীবনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। সবার ভেতর এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের ভিতকে মজবুত করে। কিন্তু কালক্রমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি হতে এ উৎসবটি হারিয়ে যাচ্ছে।এক সময় অত্যন্ত সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব উদযাপিত হতো, সব মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিল। ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়েছে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ প্রতি বছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে। ইদানীং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আনুষ্ঠানিক নবান্ন উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। নবান্নের উৎসবে থাকে কৃষকদের নতুন ধান কাটায় অংশগ্রহণ, নতুন ধান হতে চিড়া তৈরি, নতুন ধানের ভাত খাওয়া, নতুন ধানের পিঠাপুলি, পায়েস তৈরি এবং খাওয়া, নবান্ন উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরো কতোকিছু। নবান্ন উপলক্ষে এ বাংলায় প্রচলিত আছে অনেক আচার-অনুষ্ঠান। উত্তরের জেলাগুলোতে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে পিঠা-পায়েস খাওয়ানো হয়। নাইওর আনা হয় মেয়েকে। খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে কৃষকেরা মইয়না শাইল ধানের চাল দিয়ে এই উৎসব পালন করে। নেত্রকোনার হাজংরা হাতিবান্দা ধান দিয়ে ও মান্দিরা মিদিম ধানের চাল দিয়ে নবান্ন করে। এছাড়াও শেরপুর অঞ্চলের কোচ জনগোষ্ঠী পুরাবিনি ধান দিয়ে নবান্ন উৎসব করে।প্রত্যাশা আর সম্ভাবনার সম্মিলনে...বাংলার এ পলল ভূমির মানুষেরা সাধারণ, সহজ, সরল, কৃষিভিত্তিক।  আশায় বেঁধে রাখি আমাদের মন কখন আসবে আলোর দিশারি, আমরা সফলতার জ্যোৎস্না স্নানে সিক্ত করবো আমাদের সার্বিকতা। সুতরাং সীমাহীন প্রত্যাশা আমাদের বৃহৎ মনের ছায়া। গর্বের সঙ্গে এবং চ্যালেঞ্জের সঙ্গেই বলতে হয়, নবান্নের দিনে জাতীয় কৃষি দিবসের ঘোষণার সঙ্গে কৃষকদের প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া দাবি পূরণ করা যাবে। এর ফলে বাংলার কৃষিকে আমরা অনেক দূরে নিযে যেতে পারবো। নবান্ন উৎসবকে যতো বেশি সমৃদ্ধ ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করা যাবে অবলা কৃষি ততো মাতোয়ারা হয়ে উন্নয়নের উজানে এগিয়ে যাবে। সুতরাং কৃষি সার্বিক বিনিয়োগ যতো বেশি এর প্রাপ্তিও তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। অর্থাৎ গাণিতিক বিনিয়োগ আর জ্যামিতিক প্রাপ্তি। আর সম্ভাবনা কথা তো অমিয়ধারা। কৃষির এমন কোনো খাত নেই যেখানে অভূত সম্ভাবনা, প্রতিশ্রুতি লুকিয়ে না আছে। আমাদের শুধু প্রয়োজন, বিরামহীন অনুপ্রেরণা আর বাস্তবভিত্তিক প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও রসদ জোগানের। আসুন না আমরা বাহান্নর মতো, একাত্তরের মতো, নব্বইয়ের মতো সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষিতে নিবেদিত হই বিশেষভাবে। অন্য যে কোনো খাত বা শাখার চেয়ে অনেকগুণ বেশি সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে বাংলার কৃষি নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই।এতো আশা আর প্রত্যাশার সম্মোহনে আমাদের মনে রাখতে হবে চলমান বিশ্ব আর আগের মতো নির্মল, নিরাপদ, আয়েশি নেই। নিরাপদ খাদ্য আর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সার্বিক নিশ্চয়তা আগামী দিনের কৃষির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, কৃষি জমি হ্রাস, প্রাকৃতিক ও জেনেটিক সম্পদের বিলুপ্তি, কৃষি পরিবেশ সিস্টেমে লাগসই প্রযুক্তির স্বল্পতা, জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস, পরিবর্তিত জলবায়ুতে টেকসই প্রযুক্তি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অংশীদারিত্বমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি, কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া একান্তভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। এ পদক্ষেপ গ্রহণ বাস্তবায়ন আর ফল আনতে আমাদের সবকিছু করতে হবে। তা না হলে বিশ্ব বৈরিতার মুখে শুধু কৃষি নয়, সব থুবড়ে পড়ে আমরা অসহায়, দুর্বল হয়ে যাবো এবং অ-নে-ক পিছিয়ে পড়বো।এবং শেষ কথা...বাংলাদেশের চাষির সংখ্যা শতকরা আশি, যদি তাদের যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উন্নয়নের স্রোতধারায় মর্যাদার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না যায়, তাহলে এ কথা তো নিশ্চিত দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি কোনোকিছুই কাজে আসবে না। সব পরিকল্পনা, কর্মসূচি, কার্যক্রম বিফলে যাবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমরা শুরু করি, আমরা শেষ করি না। এটি আমাদের মজ্জাগত অভ্যাস। কিন্তু না আমাদের এ বেখেয়ালিপনা থেকে সরে আসতে হবে। নবান্ন পালন যেন শুধু এক দিনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একে কার্যকর ফলপ্রসূ করতে হবে। দরকার হবে সর্বস্তরের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টার। গবেষণা ও সম্প্রসারণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন, উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্পদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষিতে জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার, ফসলের সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, শস্য বহুমুখীকরণ ও উচ্চ মূল্যের ফসলের আবাদ বাড়ানো, কৃষক, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মানসম্মত বীজ উৎপাদন, আইসিটি ডাটাবেজ উন্নয়ন ও ব্যবহারোপযোগী করা, কৃষিভিত্তিক সম্প্রচার চ্যানেল, কৃষি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা, কৃষিপণ্যের উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা, কৃষিবাজার ও সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা ও শস্যবীমা, খাদ্য ব্যাংক, জিন ব্যাংক চালু, ক্রপজোনিং, ক্রপশিপ্টং, ইন্টারক্রপিং, মিক্সডক্রপিং, পরিবর্তিত জলবায়ুতে করণীয় এসব ধ্যানধারণা সুষ্ঠু বাস্তবায়নের এগিয়ে আসতে হবে। এসবের যৌক্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষির অগ্রগতি সাধিত হবে নিশ্চিত।সমাজের সর্বস্তরের জনগণ, নীতিনির্ধারক, কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণবিদ ও জাতীয় বীর কৃষকদের সম্মিলিত প্রয়াসে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যতের নিরাপদ খাদ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা । কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট সবার মর্যাদা এবং পাওনা নিশ্চিতকরণই ভবিষ্যতের খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা বলয় গড়ে উঠতে পারে। অতীতের বিশুদ্ধ সোনালি সময়ে ফিরতে পুরনো আর নতুনের আধুনিক মাত্রার সেতু বন্ধনে প্রয়োজন কৃষিভিত্তিক যুগোপযোগী পুনর্জাগরণের। নবান্ন উদযাপন সেসব সময়ের সুখ, সংগ্রাম, অর্জনের অস্তিত্বই ঘোষণা করে। এ কারণে প্রতি বছর নবান্ন এবং ধান কাটার প্রতীক মধ্য হেমন্তের  শুভদিন ১ অগ্রহায়ণ তারিখে যথাযোগ্য মর্যাদাসহ দিনটিকে উদযাপন করবে। মনে রাখতে হবে, কৃষিকে বিশেষ খাত হিসেবে বিবেচনা করে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষিখাত ও কৃষিখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিশেষ করে কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্টদের অবদান বিবেচনা করে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কৃষিকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হবে শতাব্দীর অমর মাইলফলক। আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ দিবস পালন যথোপযুক্ত মর্যাদা পাবে এবং এর প্রতিফলনে বাংলার কৃষি সমৃদ্ধ হবে, সুখে থাকবে বাংলাদেশ। তখন নিশ্চিতভাবে আমাদের কৃষি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।লেখক : কৃষিবিদ, উপপরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকাএইচআর/পিআর

Advertisement