ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হলেও তাদের রক্ষায় আজো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে উপকূলে। শুধু ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতেই দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এতে মৃত্যু হয়েছে কয়েক লাখ মানুষসহ গবাদিপশু-পাখির। নিখোঁজের সংখ্যাও কয়েক লাখ। কোনো দিনও তাদের সন্ধান মেলেনি, মিলবে না হয়তো কোনো দিন।সেদিন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি হারিকেনে রূপ নেয়। যার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ২০-২৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, উপকূলবাসীর অধিকাংশ মানুষই এ সতর্কবাণী জানতে পারেনি। ঘুমন্ত মানুষের ওপর গভীর রাতে সর্বশক্তি নিয়ে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ‘গোর্কি’।মুহূর্তেই ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, গাছ-পালা, গবাদিপশু, ফসলের মাঠ ও রাস্ত-ঘাট ভেঙে সমতলে পরিণত হয়। জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভেসে যায় লাখ লাখ মানুষ। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকার জনপদ। শেষ রাতের দিকে প্রকৃতি শান্ত হয়ে আসে। কমতে থাকে জলোচ্ছ্বাসের পানি। কিন্তু থেকে যায় স্বজনহারাদের কান্না, আহাজারি আর হাহাকার। চারদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে লাশ। বাতাসে লাশের গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে উপকূলের বাতাস।বয়ে যাওয়া সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা এখনো ভুলতে পারছেন না উপকূলবাসী। আকাশে সামান্য মেঘ দেখলেই ভয়ে আতঙ্কে থাকেন তারা। চন্দ্র-সূর্য হিসাব-নিকাশ আর ধারণার ওপর নির্ভর করেই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস জানার চেষ্টা করেন তারা। এ জনপদের মানুষ এখনো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেননি। তাছাড়া আগের মতো সতর্কীকরণ ব্যবস্থাও নেই তাদের।নোয়াখালী উপকূলের মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা ভূমিহীন নূর নেচা বেগম দুর্যোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জাগো নিউজকে বলেন, ‘তুফান আইলে আল্লারে বোলান ছাড়া আঙ্গো কিচ্ছু করার নাই। বই বই তফসিগুনি। আল্লায়নি বলা কাটি লই যা। কোড়াই যামু, কোড়াই খামু? আঙ্গো তো কোনো জয়গা জমি নাই। সিডর, আইলা, রোয়ানু। কতো বন্যা গেলো কেউ তো আঙ্গোরে এক্কানা উদ্ধার কইত্তো আয়েন। ৩ বছরের নাতি জোয়ারে ভাসি গেছে। আর এক্কানা যদি জোরে আইতে তাইলে আন্ডা সব চলি যাইতাম। মরি গেলে খালে খালে ভাইসতাম।’তিনি জানান, তাদের এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নয়, সাগরে সামান্য জোয়ার বাড়লেই পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। আল্লাহর ওপর ভরসা করে তখন সবাই নিজ ঘরেই অবস্থান করেন।এ বিষয়ে উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সচেতনতাই দিতে পারে ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্তি। এতে যেমন উপকূলবাসীর দায়িত্ব রয়েছে তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব সরকারের।’ দুর্যোগ সচেতনতা বাড়াতে ১২ নভেম্বরকে দুর্যোগ দিবস হিসেবে পালন করার দাবিও জানান উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের এই কর্মী।সরকারিভাবে দিবসটি পালন না হলেও উপকূলের বিভিন্ন সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিনটিকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে পালন করে।এমএসএস/এমএমজেড/আরআইপি
Advertisement