বিপিএলের আগের আসরের কথা মনে আছে তো? কী রান খরায়ই না ভুগেছে বিপিএলের ওই আসরটি! দর্শক বিনোদন বলতে যা বোঝায়, তার অনেকটাই ছিল না রান খরার কারণে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মানেই চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি। ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসার ফ্রি স্ট্রোক প্লে‘র ফলগুধারা। যা দর্শক মনোরঞ্জনের বড় খোরাক।কিন্তু ২০১৫ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে হওয়া আগের আসরে তার কমতি ছিল। রানের নহর বইয়ে যাওয়া আর চার-ছক্কায় সে অর্থে মাঠ মাতেনি। বরং পুরো আসর ভুগেছে রান খরায়। গড়পড়তা স্কোর লাইন ছিল ১২০‘রও নীচে। অনেক ম্যাচে ১০০ ও তার আশপাশেই থেকেছে দু’দলের স্কোর। একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দেই। তাতেই আগেরবার কম রান ওঠার চিত্র পরিষ্কার হবে। বিপিএলের সব আসর মিলে, এখন পর্যন্ত প্রথমে ব্যাট করে সাত দল ১০০‘র নীচে ইনিংস শেষ করেছে। পাঁচবারের ঘটনাই ঘটেছে ২০১৫ সালের বিপিএলে। অর্থাৎ আগের তিন আসর এবং এবার রংপুর ও খুলনার ম্যাচ ধরে এখন পর্যন্ত সাত দল ২০ ওভারের ম্যাচে শতরানের মুখ দেখেনি। ভাবা হচ্ছিল, এবার আর সে রান খরা থাকবে না। এবারের উইকেট হবে ব্যাটিং সহায়। ব্যাটসম্যানরা ইচ্ছেমত শটস খেলবেন। রান হবে। গড়পড়তা স্কোরলাইন ১৬০ থেকে ১৭০‘এর আশপাশে থাকবে। চিটাগাং ভাইকিংস আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রথম ম্যাচ দেখে সে ধারনা আরও প্রবল হয়েছিল। যেদিন তামিমের চিটাগাং ভাইকিংসের ১৬১ রানের জবাবে মাশরাফির দল তুলেছিল ১৩২ রান। এমনকি ৮ নভেম্বর বরিশাল বুলস ও ঢাকা ভাইকিংসের ম্যাচেও গড়পড়তা ১৫০ রান হয়েছে; কিন্তু হায়! তারপর থেকেই রান খরা। কোন ম্যাচেই কেউ ১৫০ ও করতে পারেনি। আসুন এক নজরে বাকি ম্যাচে প্রথম ব্যাট করা দলগুলোর ইনিংস দেখে নেই! ৯ নভেম্বর রাজশাহীর বিরুদ্ধে ১৩৩ রান করেও ৩ রানের নাটকীয় জয়ে মাঠ ছেড়েছে মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটান্স। একই দিন চিটাগাং কিংস আগে ব্যাট করতে নেমে করেছে ১২৪। সে রান অতিক্রম করে রংপুর জিতেছে ১৫ ওভারে। ১০ নভেম্বর রাজশাহীর বিরুদ্ধে খুলনা অলআউট হয়েছে বিপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে কম; ৪৪ রানে। এরপর আজ যে দুটি ম্যাচ হয়েছে, সেখানেও কোন দল ১৪০‘র ঘরেও পৌঁছাতে পারেনি। বরিশাল বুলসের সাথে ১২৯ রান করে ৬ উইকেটে হেরেছে মাশরাফির কুমিল্লা। আর পরের ম্যাচে আগে ব্যাট করে ড্যারেন স্যামির রাজশাহী কিংসের বিরুদ্ধে ১৩৮ রান করেছে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডাইনামাইটস। শুধু স্কোরলাইন কমে যাওয়াই নয়। দিনকে দিন মনে হচ্ছে উইকেটের অবস্থাও খারাপ। ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারছেন না। বল স্বাভাবিকের চেয়ে স্লথ হয়ে ব্যাটে আসছে। তার চেয়ে বড় কথা ডাবল বাউন্স হচ্ছে। কখনো একটু লাফিয়ে ওঠা। আবার কোন কোন ডেলিভারি নিচে থাকছে। অবশেষে উইকেট নিয়ে মুখ খুলেছেন জাতীয় দলের দুই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আর মুশফিকুর রহীমও। জাগো নিউজের সাথে আলাপে দুজনই বলেছেন, শুরুতে মনে হচ্ছিল এবার রান হবে। গড়পড়তা ১৬০ এর আশপাশে থাকবে; কিন্তু এখন উইকেটের চরিত্র বদলে গেছে। শুক্রবার প্রথম ম্যাচ শেষে মাশরাফি ও মুশফিক দু’জনার একই কথা- এ মুহুর্তে শেরে বাংলার পিচে ১৫০ বেশ ভাল স্কোর। মাশরাফি বলেন, ‘আমার মনে হয় দিনের ম্যাচে ১৫০ ভালো সংগ্রহ। যারা আগে ব্যাট করবে, কম করে ১৫০ করতে হবে। কারণ পরে একটু শিশির পড়লেও উইকেট স্লো’ই থাকে। হয়তোবা শেষ দিকে উইকেট হাতে থাকলে শটস খেলা সম্ভব হয়। সে ক্ষেত্রে আমি বলছি যে, ১৫০ হলে ডিসেন্ট টোটাল হয়। আর রাতের ম্যাচে আরেকটু বেশি রান করতে হবে। কারণ শিশির থাকে অবশ্যই। তাতে উইকেট বল একটু স্কিড করতে পারে। যদিও রাতে ম্যাচ খেলিনি এখনো। তারপরও দেখে যতটুকু মনে হয়েছে।’ উইকেট নিয়ে মাশরাফির চেয়ে কঠিন কথা বলেছেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লাকে হারানোর পরও হল ভর্তি সাংবাদিকের সামনে বরিশাল বুলস ক্যাপ্টেনের সোজা সাপটা উত্তর, ‘সত্যি বলতে উইকেট দেখে মনে হয় ভালো; কিন্তু ব্যাটিং করতে গেলে অনেক কঠিন মনে হয়। নতুন বলে স্পিনটা কঠিন। আবার কিপিং করেও বুঝলাম পেস বোলিংটাও কঠিন। একটা বল লাফ দেয়। আরেকটা বল নিচু হয়। হয়তো বা এটা আবহাওয়ার কারণে হতে পারে। প্রতিদিন ম্যাচ হচ্ছে। হয়তো বা কিউরেটররাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন?’ কিউরেটরদের কাজ নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘তাদেরও বুঝতে হবে, কতটুকু পানি দিতে হবে। কিংবা রোদ কতটুকু উঠবে এটা অনুমান করা কঠিন হচ্ছে। এখন আবার রোদের উত্তাপও আগের মত থাকে না। শীত শীত ভাব। এখন এটা কিউরেটরের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের জন্য এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। এখনও একটা ১৭০ রানের বেশি ইনিংস হয়নি। তারমানে একটু হলেও কঠিন মনে হচ্ছে।’ এআরবি/আইএইচএস/এমএস
Advertisement