একুশে বইমেলা

পাঠকের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ: মোস্তফা কামাল বিপ্লব

মোস্তফা কামাল বিপ্লব। বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণে তার একটু্ও কম নয়। ভালোবাসেন লিখতে। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিষয়ে। গল্প, কবিতা, ছড়া, পাজল- সবকিছুতেই সমান সিদ্ধহস্ত তিনি। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম উপন্যাস `মেঘে ঢাকা নীলিমা`। বইমেলা ও লেখালেখির অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। মোস্তফা কামাল বিপ্লবের মুখ থেকেই শুনে নেয়া যাক-সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ততা মাধমিক পড়তে পড়তে। আমাদের স্কুলের বাংলা টিচার হযরত আলী স্যারের মুখে বিভিন্ন গল্প ও কবিতার ব্যাখ্যা শুনে আমার মনে হতো কবিতা বা গল্পের কাহিনী চোখের সামনে ভাসছে। তখন থেকেই আমি কল্পনায় বিভিন্ন ধরনের কাহিনীমালায় হাঁটতাম, আবার ভাবতাম কবিতা এবং গল্পের গল্প। লেখালেখির শুরু যেভাবে লেখালেখি শুরু মূলত মাধ্যমিক থেকেই। কাস সেভেনে পড়ার সময় আমি প্রথম কবিতা লিখি। সেটি ছিল দেশের কবিতা। অবশ্যই মাধ্যমিকে পড়তে পড়তে আমি ভাবতাম গল্প-কবিতা সব পাঠ্যবইয়ের গল্প-কবিতার মতোই দেশের এবং শিার হয়। কিন্তু একই কবি ও লেখক যে আরো অনেক অনেক প্রেমের ও সম-সাময়িক গল্প অথবা কবিতা লিখেছেন তা আমি জানতে পারি এবং বুঝতে পারি কলেজে পড়ার সময়। তখনও আমার লেখার মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা বিষয়টা আসতে শুরু করে।প্রতিন্ধকতা ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা অনেক আগে থেকেই রয়েছে আমার জীবনে। আমার বাবা-মা চান না যে আমি লেখালেখি করি। তারা চান আমি লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরি করি। লেখালেখি করতে গিয়ে লেখাপড়াটা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পরিবার থেকে আমি কোনো সাহায্য পাইনি। সেটাই আমার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।এগিয়ে যাওযার গল্প গ্রামের কলেজে পড়তাম আমি। কলেজে পড়তে পড়তে জামান লাইব্রেরীর জামান ভাই আমাকে প্রথম শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ভাইয়ের গল্প শোনান এবং তার একটি বই পড়তে দেন। আরো একজন টিচার আমাকে প্রথম হুমায়ূন আহমদের (বর্তমানে আমার প্রিয় লেখক) একটি বই পড়তে দেন। এই দুটি বই পড়ে এবং দেশে তাদের তখনকার অবস্থান ও লেখালেখির জগতে আসার গল্প শুনে নিজেকে খুবই আত্মবিশ্বাসী করে তুলি। কলেজে থাকতেই আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ পায়। ঝিনাইদহ এবং যশোর অঞ্চলের অনেক অনেক শিক ও ছাত্রছাত্রী পড়েছেন বইটি এবং আমাকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন।লেখালেখি থেকে অর্জনবর্তমান অবস্থান বলতে পাঠকের অন্তর আর অর্জন বলতে তাদের ভালোবাসা। এপর্যন্ত আমার প্রায় পঁচিশটির মতো বই প্রকাশ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি কিশোর বই। আমার প্রথম কিশোর বই ‘ফন্টে মিয়ার সাহস’ ২০১০ সালের বইমেলায় তৃতীয় মূদ্রণ শেষ হয়। এবছরই আমার প্রথম উপন্যাস ‘মেঘে ঢাকা নীলিমা’ প্রকাশ পেয়েছে অবসর প্রকাশনী থেকে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন প্রথম আলোর কাটুনিস্ট নিয়াজ চৌধুরী তুলি। বইটি মেলায় এসেছে দশম দিনে। এরপরও কয়েকদিনেই অনেক বই পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। অনেকেই বইটি পড়ে আমাকে জানিয়ে যে তাদের ভালো লেগেছে। সবাই আমাকে আরো বেশি বেশি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। পাঠকের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আমার বিজ্ঞান ও পাজলের বইগুলো বেশ জনপ্রিয় পাঠকদের কাছে। লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা লেখালেখি তো ব্যবসা নয়, যে পরিকল্পনা থাকবে। তবে আশা আছে, আছে স্বপ্নও। সারা জীবন লিখে যেতে চাই। বাংলাদেশের সবার হৃদয়ে আমার লেখনি দিয়ে জায়গা করে নিতে চাই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেকে মেলে ধরতে চাই। ভালো লিখে পাঠকের মনে প্রবেশ করতে চাই। বিজ্ঞাপন বা আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে ভালো লেখকদেরকে বিরক্ত করতে চাই না। নতুন লেখকদের জন্য আমি নিজেও তরুণ লেখক। তবে লেখালেখির অভিজ্ঞতা হিসাব করলে আমি বেশ পুরানো। নতুন লেখকদেরকে বলব, আগে ভালো ভালো লেখকদের বাছাই করা কিছু লেখা অবশ্যই পড়বেন, তারপর লেখার চেষ্টা করবেন।এইচএন/এমএস

Advertisement