দেশজুড়ে

সাঁওতাল পল্লীতে আতঙ্ক কাটেনি : খাদ্য সংকট

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ (বাগদা-কাটা) এলাকায় উচ্ছেদ ও লুটপাটের ঘটনার পাঁচ দিনেও মাদারপুরের সাঁওতাল পল্লীতে আতঙ্ক কাটেনি। সেইসঙ্গে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করায় সাঁওতাল পল্লীর লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। আধিবাসীদের উচ্ছেদ করার পর ধ্বংসস্তূপে আখ রোপণ ও চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। ফলে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সাপমারা ইউনিয়নের সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গ্রামে অবস্থান করছে। তবে এখানে স্ত্রী, সন্তান ও মেয়েরা অবস্থান করলেও পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে সাঁওতাল পল্লী। শত শত সাঁওতাল পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এসব পরিবারের অনেকে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।এর আগে পুলিশ পাহারায় (রচিক) কর্মাচারী-শ্রমিক এসব জমিতে আখ রোপণ করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাঁওতালের ছোড়া তীরবিদ্ধ হয়ে নয় পুলিশ আহত হন। কয়েক দফায় সংঘর্ষে সাঁওতাল ও চিনিকলের প্রায় ৩০ জন শ্রমিক-কর্মচারী আহত হন। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কল্যাণ চন্দ্র বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরদিন মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) পুলিশ অভিযান চালিয়ে দীজেন টুটু, চরণ সরেন, বিমল কিশকু ও মাঝিয়া হেমভ্রম নামে চার আদিবাসীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সংঘর্ষে দুজন আদিবাসী নিহত হন। তারা হলেন- দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার চান্দুপর গ্রামের মৃত জেঠা মাদ্রির ছেলে মঙ্গল মাদ্রি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্যামল হেমভ্রম। তবে এ ঘটনার পর এখনো ১৫ জন সাঁওতাল নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করছেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। বর্তমানে এসব ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে দুই সাঁওতাল নিহতের ঘটনা ঘটলেও এখনো এ নিয়ে থানায় মামলা হয়নি।চিনিকলের এসব জমি দখল ও উচ্ছেদের নেপথ্যে ছিলেন স্থানীয় কয়েজন প্রতিনিধি। এমনটাই অভিযোগ করলেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন। সাঁওতাল পল্লীতে আবারো হামলার আতঙ্কে ভুগছেন সাঁওতালরা। গত ৮ মাসে কয়েক দফায় সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর সাঁওতাল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সাঁওতাল পল্লী পুরুষশূন্য। এখানে নারীরা থাকলেও কাউকে দেখে তারা ভয়ে নিজেকে আড়াল করেন। কয়েক দিন ধরে সাঁওতাল পল্লীর ছেলেমেয়েরা স্কুলেও যেতে পারছে না। এমনকি পুরুষ না থাকায় মেয়েরা ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে হাটবাজার ও আশপাশেও বের হতে পারছেন না। কথা হয় সাঁওতাল পল্লীর রুমিলা কিসকুর (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গরিব ও নিচু জাতের মানুষ। সামান্য কৃষিকাজ করে সংসার চলে। কিছুদিন আগে কষ্টের টাকা দিয়ে মিলের জমিতে একচালা ঘর তুললাম। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে তা ভেঙে দেয়া হলো। পরে ছেলেমেয়েকে নিয়ে পুরনো বসতবাড়িতে গেলাম। সেখানেও হামলা চালিয়ে গরু-ছাগল লুট করা হয়। এখন আমরা কোথায় দাঁড়াব। আমাদের কে দেবে থাকার স্থান।  ফুলমতি মুরমু (৫৫) বলেন, খামারের জমিতে ঘর ছিল। তাতে কোনোরকম দিনাতিপাত করছি। কিন্তু সেই ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আর মাথা গোজার ঠাঁই নেই। কী আছে কপালে তাও জানা নেই। রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় চিনিকলের জমি দখলমুক্ত করেছে। এসব জমিতে এখন থেকে আখচাষের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রতকুমার সরকার বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাড়া অন্য কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না। এছাড়া আধিবাসী সম্প্রদায়ের দুজন নিহতের ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।জিল্লুর রহমান পলাশ/এএম/পিআর

Advertisement