আন্তর্জাতিক

ইতিহাসের বাঁক বদলের সামনে হিলারি!

প্রায় ১৫ মাসের দীর্ঘ প্রচারণা শেষে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশটির স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম বড় কোনো রাজনৈতিক দলের নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের বাঁক বদলের সুযোগের সামনে ডেমোক্রেট দলীয় এই প্রার্থী। দেশটির ১৪ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বেছে নেবেন হোয়াইট হাউসের কর্তাকে। দীর্ঘ প্রচারণা শেষে ইতোমধ্যে ১৭টি অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ভার্জিনিয়ার রিচমোন্ডের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ডেমোক্রেট দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম কেইন। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন স্বামী বিল ক্লিনটনকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের চাপ্পাকুয়ার স্থানীয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে পৌঁছার পর দলের কর্মীরা স্লোগান দেন। এ সময় নীরব থেকেছেন হিলারি; গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেননি তিনি।ভোট শুরুর আগে বেশকিছু গণমাধ্যমের চূড়ান্ত কয়েকটি জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে হিলারি। ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও ইপসসের সর্বশেষ এক জরিপ বলছে, হোয়াইট হাউসের দৌড়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পকে হারানোর ৯০ শতাংশ সুযোগ রয়েছে হিলারির। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে বড় কোনো দলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডেমোক্রেট দলীয় হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের অবস্থানের বিশ্লেষণ চলছে। নির্বাচনী ডামাডোল শুরুর পর থেকে উভয় প্রার্থীর বিভিন্ন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়েছে।অক্টোবরে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী হিলারির ই-মেইল ফাঁসের ঘটনার তদন্তে নামে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। সে সময় হিলারির জনপ্রিয়তায় ধস দেখা দিলেও নির্বাচনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এসে এফবিআই তদন্তে কোনো অপরাধ পায়নি বলে জানানোর পর ডেমোক্রেট শিবির স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিয়ে প্রচারণা চালায় হিলারি শিবির। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁসকারী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ওয়েবসাইট উইকিলিকস হিলারি ক্লিনটনের কয়েক হাজার ই-মেইল প্রকাশ করেছে। উইকিলিকস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের অর্থায়নে হিলারি ক্লিনটন জড়িত। উইকিলিকসের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান শিবির।তবে এসব দীর্ঘ বিতর্কের মাঝেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপে বরাবরই এগিয়ে হিলারি। রয়টার্স-ইপসসের সোমবারের জরিপ বলছে,  ট্রাম্পের চেয়ে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন হিলারি। এনবিসি নিউজ ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত জরিপে বলা হয়েছে, তীব্র লড়াই হতে যাচ্ছে দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে। ওই জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী হিলারি।এছাড়া এনবিসি ও সার্ভে মানকির সাপ্তাহিক এক অনলাইন জরিপ বলছে, হিলারি ৪৭ শতাংশ, ট্রাম্প ৪১ শতাংশ, জনসন ৬ শতাংশ ও স্টেইন ৩ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন; যা গত সপ্তাহ থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। এবিসি-ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপ বলছে, ৪ পয়েন্টে এগিয়ে হিলারি। বিবিসির জরিপে হিলারি ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।নির্বাচনের একদিন আগে এনবিসির ব্যাটেলগ্রাউন্ড মানচিত্র বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্লিনটনের কলামে ২৭৪টি ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে; যা গত সপ্তাহ থেকে অপরিবর্তিত আছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টরাল ভোটের চেয়ে বেশি পেয়েছেন। গত সপ্তাহে এনবিসির ওই মানচিত্রে ট্রাম্পের কলামে ১৮০ ইলেক্টরাল ভোট থাকলেও বর্তমানে তা কমে ১৭০ হয়েছে।জরিপে পিছিয়ে থাকলেও হিলারির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবধান যে কমে এসেছে সে বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে। তাই বিতর্কিত এই মার্কিন ধনকুবেরের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এর আগে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে দেশটিতে বসবাসকারী অভিবাসী, মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক এবং উগ্র মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প; যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগে ফাঁস হওয়া তার নারী কেলেঙ্কারির একাধিক ঘটনাও সমালোচনার জন্ম দেয়। দেশটিতে ১০ লাখেরও বেশি অভিবাসী মুসলিম রয়েছেন; মুসলিমদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে এসব ভোট হারাতে পারেন ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ১৪ কোটি ৬০ লাখ ভোটার নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে রেকর্ড ৪ কোটি ৪৯ লাখ ভোটার বুথে আগাম ভোট দিয়েছেন। দেশটিতে মোট ইলেক্টরাল কলেজের সদস্য রয়েছে ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট বাগিয়ে নিতে হবে প্রার্থীকে। তবে শেষ পর্যন্ত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসের দৌড়ে শেষ হাসি কে হাসবেন তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।এসআইএস/আরআইপি

Advertisement