সময়ের সেরা গীতিকারদের একজন তিনি। তার নাম হয়তো অনেকে জানেন না। কিন্তু তার লেখা গানের তালে চোখ বন্ধ করে সুরের দেশে ভাসেননি সমসমায়িক ব্যান্ড ও আধুনিক গানে তেমন শ্রোতা খুব কমই পাওয়া যাবে। বলছি রাজীব আহমেদের কথা। আইয়ূব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘এক আকাশের তারা’, জেমসের কণ্ঠে ‘পাগলা হাওয়া’ পথিক নবীর কণ্ঠে ‘নিশি কালো মেঘ’ এবং আসিফ আকবরের গলায় ‘আকাশে তোর বাড়ি গেলো’ ইত্যাদি শিরোনামের জনপ্রিয় সব গান তিনি রচনা করেছেন। এক জনমে একজন গীতিকবির জন্য এই ক’টি গানই যথেষ্ট নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে। আগের মতো আর গানে নিয়মিত নন রাজীব আহমেদ। বেশ অনেকটা সময় বন্ধই ছিল তার কলম-খাতা। গেল দুই বছর ধরে মাঝে-মধ্যে হুট-হাট গান লেখেন তিনি। বেশিরভাগই অনুরোধের আসর। সর্বশেষ গেলো বছর নিজের কথা আয়োজনে প্রকাশ করেছিলেন অ্যালবাম ‘আলিঙ্গন’। নিজের অনলাইন মিউজিক লেভেল ‘গান এন্টারটেইনমেন্ট’ থেকে এটি প্রকাশ হয়েছিল। নীরবতা ভেঙে আবারো নতুন গান নিয়ে হাজির হচ্ছেন রাজীব আহমেদ। সুফি ঘরানার মিউজিকে ‘সুফিয়ানা’ বলে খ্যাত হালের সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী শাহরিয়ার রাফাতের কণ্ঠে প্রকাশ হতে যাচ্ছে তিন গানের সংকলন ‘রঙ মাখে মাছরাঙা’। এখানে তিনটি গানই লিখেছেন এই গীতিকার। এরই মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে গান করলেন রাজীব ও রাফাত। রাজীব আহমেদের কথায় গানগুলোর সুর-সংগীতের পাশাপাশি সেগুলোতে কণ্ঠও দিয়েছেন রাফাত। গানগুলোর শিরোনাম ‘মানুষ’, ‘খালি উদাস লাগে মন’ এবং ‘রঙ মাখে মাছরাঙা’। গানগুলো খুব শিগগিরই অনলাইন মিউজিক লেভেল গান এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে প্রকাশ পাবে। এই তিনটি গান নিয়ে রাজীব আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গেল বছর সিএমভির পাপ্পু ভাইয়ের উৎসাহে নতুন প্রজন্মের শিল্পী আশিক, নিশীতা, বেলাল, ইলিয়াসসহ আরো কয়েকজনের জন্য গান লিখেছিলাম। আর এবারে প্রিয় সাংবাদিক মইনুল হক রোজ ভাইয়ের উৎসাহে শাহরিয়ার রাফাতের জন্য গান লিখেছি। আমি আইয়ূব বাচ্চু, জেমস, আসিফ আকবরের মতো জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গান লিখেছি। কিন্তু নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে খুব একটা কাজ করা হয়নি। সেই ভাবনা থেকে রাফাতের সঙ্গে তিনটি গান করে খুব ভালো লাগছে। আরেকটা কথা হলো দীর্ঘদিন ধরে আমি গান লিখছি। কিন্তু আমি জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসাইনি। নিজের কাছে পছন্দ না হলে আমি কোনো গান শিল্পীকে দেই না। সেই থেকে বলা যায়, রাফাতের সঙ্গে গান করে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ ফিল করছি। আশা করছি গানগুলো পছন্দ হবে শ্রোতাদের।’তিনি আরো বলেন, ‘সুফি গানের শিল্পী হিসেবে রাফাতের একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ‘মানুষ’ শিরোনামে একটি গান করেছি। এখানে শ্রোতারা সুফি গানের আমেজ পাবেন। তবে ‘খালি উদাস লাগে মন’ গানটি দিয়ে নতুন রাফাতের যাত্রা হবে বলে আমার প্রত্যাশা। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন খুবই শ্রুতিমধুর হয়েছে। রাফাতের গান শুনে আমি সত্যি মুগ্ধ। রাফাতের গায়কীর বৈচিত্রতা মুগ্ধ করেছে। সব ধরণের গান সেই গাইতে জানে। কণ্ঠশিল্পী আসিফ ভাইও (আসিফ আকবর) নতুন তিনটি গান শুনে বেশ প্রশংসা করেছেন। এবার শ্রোতাদের ভালোবাসার অপেক্ষায় রইলাম।’গানের বর্তমান বাজার প্রসঙ্গে রাজীব আহমেদ জাগো নিউজকে আরো বলেন, ‘এটা ঠিক যে গানের বাজার আগের মতো নেই। কিন্তু এ কথা ঠিক নয় যে গান মন্দার বাজার। ইনকাম না থাকলে শিল্পীরা গান করতেন না। প্রচুর গান কিন্তু হচ্ছে। প্রচুর গীতিকারও আছেন আমাদের। বাজারে কেবল ফিতার জায়গায় ডিস্ক এসেছে। ভিডিও নির্মাণের যুগ এসেছে। আমি তো মনে করি এইসবের মাধ্যমে গানের বাজার বিস্তৃত হয়েছে। আগে ক্যাসেট বিক্রি করেই শিল্পীদের আয় হতো। এখন আয়ের নানা পথ খুলেছে। টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীগুলো থেকে শিল্পীরা আয় করতে পারছেন। ভিডিও থেকে টাকা আসছে। দেশ-বিদেশে স্টেজ প্রোগ্রাম বেড়েছে। টিভি-চ্যানেল থেকেও শিল্পীরা আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলা ভাষার গান বলে আমাদের অনলাইনে ইনকামটা ইংরেজি বা হিন্দি গানের মতো নয়। কারণ, আমাদের শ্রোত তুলনামূলক কম। তবুও আমি আশাবাদী মানুষ। হয়তো একটা নতুন পরিবর্তন আমাদের খানিকটা বিশৃঙ্খল করেছে কিন্তু খুব শিগগিরই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আমরা পৌঁছাবো।’এই গীতিকার জানান, শ্রোতাদের কাছ থেকে সাড়া মিললে রাফাতের গাওয়া তিনটি গান নিয়ে ভিডিও নির্মাণের ইচ্ছে রয়েছে।এলএ/এবিএস
Advertisement