এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয় ব্যাপার যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে এখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এটির প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য একটি চক্র সব সময়ই তৎপর থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে যে তাণ্ডব চালানো হল এটা কি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়? এটা খুবই স্পষ্ট ব্যাপার যে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা হচ্ছে। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে যে রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও গত রোববার হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৫টি মন্দির ও দেড় শতাধিক বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। তাতে সহস্রাধিক লোককে আসামি করা হয়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে ঐদিন রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় ৯ জনকে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোও হয়েছে। এরপরও শনিবার ভোরে এলাকার হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা কী করে ঘটে সেটিই আমাদের ভাবিয়ে তুলে। প্রশাসনের কাজটা তাহলে কি?ঘটনাগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে যখন চিনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বব্যাংক প্রধান মাত্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। এবং তারা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রগতিতে অকুণ্ঠচিত্তে সরকারের প্রশংসা করলেন। কিন্তু এর সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় যখন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। একটা দেশের উন্নয়ন কেবল ব্রিজ, কালভার্ট, দালান-কোঠা, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে সমাজে রক্ষা হয় না সে সমাজ আদৌ কতোটা এগিয়েছে সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়। জোরালো অভিযোগ ওঠে আমরা কি তাহলে পেছনের দিকে হাঁটছি? একবিংশ শতাব্দীর এ যুগে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যখন বদলে যাচ্ছে সবকিছু, বাংলাদেশেও লেগেছে প্রযুক্তির অভাবনীয় ছোঁয়া তখন সেই প্রযুক্তির অপব্যবহারের সুযোগ নিয়েই সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। এটাকে কি কোনোভাবেই অগ্রগতি বলা যায়?এর আগেও আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে বলেছি, ফেসবুকে যে কেউ যে কারো নাম ও ছবি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে, পোস্ট দিতে পারে। এমনকি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেও যা খুশি তাই করতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে প্রযুক্তিবিদদের বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি করে ভাবতে হবে। কেউ যাতে প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে না পারে সেটির ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা আবারো প্রমাণ করলো সহিষ্ণুতার দিক থেকে আমরা এখনো কতটা পিছিয়ে।নাসিরনগরের দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোরও বিকল্প নেই। এই ঘটনার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিচার বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্ধকারের শক্তি যদি আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় তাহলে প্রগতির পথে হাঁটা আমাদের জন্য কঠিন হবে। বিষয়টি সকলেরই মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এইচআর/আরআইপি
Advertisement