অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি একটু ভিন্ন। এখানে সারা দেশ মিলিয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীই যে নিশ্চিত বিজয়ী হবেন এমন নয়। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। প্রতিটি রাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। একটি রাজ্যে যিনি বেশি ভোট পাবেন, সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোটই তার হয়ে যাবে। দেশটিতে মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। যিনি ২৭০ পার করবেন, তিনিই জয়ী হবেন। ট্রাম্পের ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। তবে এটা অসম্ভব নয়। নির্বাচনী কিছু শর্ত পার করতে পারলেই এই ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন তিনি। ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির নিজেদের লক্ষ্য স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সপ্তাহে কলোরাডো, ফ্লোরিডা, লোয়া, মেইনে, মিসিগান, নিউ মেক্সিকো, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহাইয়ো, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, ভার্জিনিয়া, নেভাডা এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন বাবদ ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী রেওয়াজ অনুযায়ী বেশির ভাগ রাজ্য একই দলকে বিজয়ী করছে। প্রায় ২০ বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা ডেমোক্রেটদের জয়ী করছে। ঠিক তেমনই টেক্সাস, লুইজিয়ানা, টেনেসির বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে রিপাবলিকানদের ভোট দিয়ে আসছে। হাতেগোনা কিছু রাজ্য পড়ে থাকে যেগুলো নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। এ ধরনের রাজ্যগুলো হল পেনসিলভানিয়া নিউ হ্যাম্পশায়ার, নেভাডা, ওহাইয়ো, আইওয়া, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, কলোরাডো ও নিউ মেক্সিকো।হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব রাজ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসব রাজ্যে ভোট নিশ্চিত সেখানে তারা খুব একটা যাচ্ছেন না। টেক্সাস, লুইজিয়ানা, টেনেসির বাসিন্দারা রিপাবলিকানদেরই ভোট দিচ্ছে। তাই এ রাজ্যগুলোতে ভোট নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে না ট্রাম্পকে। এছাড়া ফ্লোরিডা, ওহাইয়ো, নর্থ ক্যারোলিনা এবং লোয়াতে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের ডেপুটি ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ডেভিড বোসি বলেছেন, ‘আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে ওই চার রাজ্যে আমরা জয়ী হতে যাচ্ছি।’এদিকে নেভাডা, নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং নিউ মেক্সিকো এই রাজ্যগুলোর মধ্যে যে কোন দু’টি রাজ্যে জয়ী হতে হবে ট্রাম্পকে। এ সম্পর্কে বোসি বলেন, আমি মনে করি ওই সব রাজ্যে আমরা অন্যদের চেয়ে জয়ের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছি। আমরা জানি আমাদের বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। আমরা এক একটি ভোটের জন্য আপ্রাণ লড়াই করে যাচ্ছি। এখানে ট্রাম্পের ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হলে কিছু শর্ত রয়েছে। ছয়টি শর্ত পূরণ করতে পারলেই জয়ী হবেন ট্রাম্প। ইলেকটোরাল ভোট পেতে হলে প্রচারণায় কোনো ভুল করা যাবে না। এটাই ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বড় বাজি। যেসব রাজ্যে ভোট অনিশ্চিত সেখানে শেষ প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখা যাবে না। এখানে একটি ভোটও হাত ছাড়া করা যাবে না। এই পথটা বেশ কঠিন। ঠিকভাবে পরিকল্পনা মত কাজ করলে একেবারে ২৭০ ভোট পাওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় হবে না। যদি কর্মজীবী শ্বেতাঙ্গরা ট্রাম্পকে ভোট দেন তাহলেও অনেকটা এগিয়ে থাকবেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে বেশ আশাবাদী ট্রাম্প। তবে উইসকনসিন, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়ায় হিলারির অবস্থানে ফাঁটল ধরাতে পারেননি ট্রাম্প। নেভাডা অথবা নিউ হ্যাম্পশায়ারে খুব একটা ঘাম ঝড়াতে হয়নি ট্রাম্পকে। তিনি ফ্লোরিডা এবং ওহাইয়োতে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। নেভাডা, নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং কলোরডোতে ভোটারদের নিজের দিকে টানতে হবে ট্রাম্পকে। নির্দিষ্ট ইলেকটোরাল ভোট পেতে হলে ট্রাম্পকে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোট পেতে হবে। মধ্যবিত্তদের সমর্থনও প্রয়োজন ট্রাম্পের।টিটিএন/এবিএস
Advertisement