মা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। মা ডাকেই মানুষ খুঁজে পায় সীমাহীন শান্তি। মা-ই মানুষের একমাত্র নিরাপদ শান্তির ঠিকানা। মাকে নিয়ে রয়েছে সুন্দর সুন্দর অসংখ্য ছন্দ, কবিতা ও ছড়া। মায়ের ভালোবাসা, মায়ের জন্য ভালোবাসা ও খিদমত হতে হবে সম্পূর্ণ শর্তহীন।কবির ভাষায়- ‘মা বড় ধন সবচে আপন, নেইকো যাহার তুল্য; এক ফোঁট দুধ অনেক দামি, কে দিবে তাঁর মূল্য’। অন্য কবির ভাষায়- ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেন ভাই; ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’আল্লাহ তাআলা রহমতের সুধা দিয়ে প্রতিটি মাকে সৃষ্টি করেছেন। মা সন্তানের জন্য করুণার আধার। সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা, করুণা ও মমত্ববোধ আল্লাহর অশেষ কুদরতেরই নিদর্শন।মায়ের ভালোবাসার নিদর্শন শুধুমাত্র মানুষের জন্যই প্রযোজ্য নয় বরং সমগ্র প্রাণিজগতের জন্য। সন্তান যখন কোনো বিপদাপদে পড়ে, তখন কারো ব্যথা না লাগলেও মায়ের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম বন্ধ হয়ে যায়।কবি বলেন, ‘বিদেশে-বিরাজ্যে যাদের সন্তান মারা যায়; পশু-পাখি না জানিতে আগে জানে মায়’-এ কারণেই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি খেদমত পাওয়ার অধিকার শুধুমাত্র মায়ের।কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সত্য হলো- আল্লাহ তাআলা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হকের পর সবচেয়ে বেশি আবশ্যক পালনীয় হলো মায়ের হক।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার জলন্ত দৃষ্টান্ত ওঠে এসেছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাদিসে-বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবির নাম আলকামা। মৃত্যুকালীন সময়ে তাঁর জবান থেকে (তাওহিদের) কালিমা বের হচ্ছিল না। বিশ্বনবি এ খবর শুনে আলকামার ঘরে ছুটে গেলেন এবং আলকামার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি পুত্রের ওপর অসন্তুষ্ট?উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার ছেলে আমার চেয়ে তার স্ত্রীকে বেশি গুরুত্ব দিত। এ কারণে আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট। তখন বিশ্বনবি উপস্থিত সাহাবাগণকে নির্দেশ দিলেন, কাঠ সংগ্রহ করে আলকামাকে জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে শেষ করে দাও।আলকামার মা এ কথা শুনে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার চোখের সামনে আমার সন্তানকে আগুনে জ্বালিয়ে দিলে আমি মা হয়ে কীভাবে তা সহ্য করব?বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আলকামার মাকে অনুরোধ করলেন, হে আলকামার মা! তাহলে আপনি আলকামাকে ক্ষমা করে দিন। নতুবা আলকামা পরকালে অনন্তকাল ধরে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। তখন আপনি তা কী করে সহ্য করবেন?একথা শুনে আলকামার মায়ের মন নরম হয়ে যায়, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করে দেন। তারপর আলকামার জবানে (তাওহিদের) কালিমা জারি হয়ে যায় এবং কালেমা পড়তে পড়তেই ঈমানের সাথে হজরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু হয়।এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, মায়ের ভালোবাসা শর্তহীন। তাই পৃথিবীর সকল সন্তানের উচিত শর্তহীনভাবে মাকে ভালোবাসা। ভায়ের খিদমত করা। যথাযথভাবে মায়ের হক আদায় করা।পরকালে জান্নাত প্রাপ্তি এবং সফলতা লাভে মায়ের প্রতি সদাচরণ করা সন্তানের জন্য আবশ্যই করণীয়। অন্যথায় মায়ের অবাধ্যতার কারণে সন্তানকে পরকালে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।পরিশেষে...মায়ের হক আদায়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কেননা বিশ্বনবি বলেন, ‘দুনিয়াতে মায়ের দোয়া অতি দ্রুত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ ইচ্ছামতো ক্ষমা করতে পারেন।কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। বরং ওই অবাধ্য সন্তানকে এই পার্থিব জীবনেই মৃত্যুর আগে কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন। (বায়হাকি)হজরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুকালীণ ঘটনাই তাঁর জ্বলন্ত প্রমাণ। তাই মহান প্রভুর দরবারে প্রার্থনা, হে আল্লাহ! আপনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভে শর্তহীনভাবে মাকে ভালোবাসার; মায়ের খিদমত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি
Advertisement