দেশজুড়ে

খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী অঞ্চলের মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্র

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী অঞ্চলের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। নেই নিজস্ব ঠিকানা। উপজেলা পর্যায়ে নেই অফিস। রয়েছে জনবল সংকট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, এসব সমস্যার চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে কৃষকদের অসচেতনতা। যদিও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণার কমতি নেই।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ ও সার প্রয়োগের ফলে দিনে দিনে কমছে ফসলের উৎপাদন। প্রতি বছরই লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। সেই সাথে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পড়ছে হুমকিতে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা জরুরি। আর এটা নিয়েই কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। রাজশাহী অঞ্চলেও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। মাটি পরীক্ষার পর প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে তারা মাটির গুণাগুণ ভেদে কৃষকদের সার প্রয়োগে পরামর্শ দেন। একই সাথে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কৃষি ও কৃষক বান্ধব এ প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় কার্যালয় রাজশাহীতেই। তবে তা নিজস্ব স্থাপনায় নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঠাঁই ভাড়া ভবনে। রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। এর মধ্যে পাবনা ছাড়া কোথাও নেই নিজস্ব ভবন। কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের অফিস উপজেলা পর্যায়ে সম্ভব না হলেও প্রতিটি জেলায় স্থাপন করা জরুরি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুজ্জামান ।কৃষিবিদ কামরুজ্জামান জানান, একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দুজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত। পাশপাশি রয়েছেন ১১ টি পদের বিপরীতে জেলা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রয়েছেন তিনজন। সব মিলিয়ে লোকবল মাত্র ৩৭ জন। এই সল্প সংখ্যক লোকবল নিয়ে কোনো মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মীরা।তিনি বলেন, উপজেলা ভিত্তিক কৃষি উন্নয়নে ১৯৯৮ সালে প্রণীত হয়েছে ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা। এতে সংশ্লিষ্ট থানার ভূমি, মৃত্তিকা ও পানি সম্পদের বিস্তারিত তথ্য, বর্তমান ফসল বিন্যাস, ফসল ভিত্তিক সার সুপারিশমালা প্রণয়ন পদ্ধতি, ভূমি ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা এবং ফসল উপযোগিতা ও সম্ভাব্য ফসল বিন্যাস পদ্ধতি আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি এটি পরিমার্জনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সীমিত পরিসরে শিগগিরই কয়েকটি ইউনিয়নে ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।কৃষিবিদ কামরুজ্জামান আরো জানান, তারা বিভিন্ন এলাকায় মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন, এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে গাইড তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ধান-ফসলের পার্থক্য, গবেষণামূলক সয়েল হেলথ্ কার্ড র্কমসূচি, কৃষক সেবা কর্মসূচি, মাঠ জরিপ এবং মানচিত্র ও প্রতিবেদন তৈরিও চলছে। মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার সুপারিশ কার্ড প্রদান, মাটির উর্বরতা পরীক্ষণ কার্যক্রম এবং মাটির গুণাগুণ পরিবর্তনের সার্বিক কারণ নির্ণয়ও করছেন তারা।ভ্রাম্যমাণ মাটি গবেষণা বিষয়ে তিনি বলেন, মৌসুমজুড়ে পুরো অঞ্চলেই এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিস্তা নামের ভ্রাম্যমাণ মাটি গবেষণা কেন্দ্রে কৃষকদের সরবরাহকৃত মাটি পরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ৫০জন করে কৃষককে দেয়া হয়েছে এ সুবিধা। পরীক্ষা শেষে কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সার সুপারিশমালা। এরই আলোকে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারবেন কৃষকরা। তবে এনিয়ে কৃষকরা সচেতন নন বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তার ভাষ্য, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা এবং ফসলের উৎপাদন বাড়াতে মাটি পরীক্ষার বিকল্প নেই। তাই এ বিষয়ে কৃষকদেরই আগ্রহী হয়ে মাটি পরীক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু তারা তেমন সচেতন নন। কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ দিবস, সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আধুনিক  যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে এ কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলেও জানান কৃষিবিদ কামরুজ্জামান। আরএআর/এমএস

Advertisement