টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা বলা হয়ে থাকে ক্রিস গেইলকে; কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের গেইলের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। দেশে-বিদেশের প্রায় সব ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সদর্প বিচরণ সাকিবের। আইপিএল, বিগব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), বিপিএল, পিএসএল, এসপিএল সবখানেই আছেন তিনি। যে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশে টি-টোয়েন্টি লিগ হলেই, সেখানেই খেলেছেন সাকিব।দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া আসর বিপিএলের প্রথম আসর থেকেই মাঠ মাতাচ্ছেন সাকিব। বিপিএলের প্রথম আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলের হয়ে খেলা সাকিব দলকে ফাইনালে তুলতে না পারলেও ব্যাট-বল দুটোতেই দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দেন এই দেশসেরা ক্রিকেটার।২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরের সেমিতে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের করা ১৯১ রানের জবাবে ৪১ বলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৮৬ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেও খুলনার পরাজয় রুখতে পারেননি সাকিব। দল হেরে যায় মাত্র ৯ রানে। তবে গোটা আসরে অলরাউন্ড নৈপূণ্য দেখিয়ে ১২ ম্যাচে ২৮০ রান করার পাশাপাশি ১৫টি উইকেট লাভ করেন তিনি।প্রথম আসরে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের জন্য হোন্ডা কোম্পানির গাড়িটি সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো শহীদ জুয়েল গ্যালারির সামনে। চকচকে কালো সুন্দর গাড়ির দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন কতজন ক্রিকেটারই না মনে মনে ভেবেছেন ইস ওটা যদি আমার হতো। তবে পারফরমেন্সের ভিড়ে গাড়িটিও যে বিদেশে চলে যাবে, বেশিরভাগ মানুষের ধারণা তাই ছিলো।বিপিএল ফাইনাল শেষে পুরস্কার অনুষ্ঠানে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ঘোষণার আগেই দর্শক গ্যালারি থেকে একযোগে উচ্চারিত হয় সাকিবের নাম। ধারাভাষ্যকার অরুন লাল অনেকগুলো নামের ভিড় থেকে শেষ পর্যন্ত সেরা পারফরমারকেই ডাকলেন, সাকিব আল হাসান। স্টেডিয়াম গর্জে উঠে, সাকিব ধ্বনিতে মুখোরিত হয়। গাড়িটি দেশেই থেকে গেলো। বিপিএলের সেরা পারফরমার বাংলাদেশের অহংকার সাকিব।২০১৩ সালে দ্বিতীয় আসরে সাকিব আল হাসানের দল বদল হলেও পারফরম্যান্সে কোনো বদল হয়নি। এবার ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে অংশ নেন তিনি। এদিকে দ্বিতীয় আসরে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অংশ না নেয়ায় দেশি ক্রিকেটারদের মাঠে পারফর্ম করার সুযোগ ছিল বেশি।আর এ সুযোগটা হাতছাড়া করেনি সাকিব। ব্যাটে-বলে প্রাধান্য বিস্তার করে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জেতান এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ফাইনালে বোলিংয়ে কোনো উইকেট না পেলেও ২৯ বলে ৪১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে গ্ল্যাডিয়েটর্সকে শিরোপা জেতাতে ভূমিকা রাখেন সাকিব।২০১২ সালের মতো ২০১৩ সালেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। আগের আসরে ২৮০ রান করা সাকিব এবার ব্যাট হাতে করেন ৩২৯ রান। বোলিংয়ে আগের মতো এবারও নেন ১৫ উইকেট। ফলে অবিসংবাদিতভাবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠে সাকিবের হাতে।ফিক্সিংয়ে কারণে মাঝে এক বছর বিরতির পর ২০১৫ তে আবার মাঠে গড়ায় বিপিএলের তৃতীয় আসর। আগের দুই আসরের সেরা খেলোয়াড় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে প্রতিটি দলই পেতে আগ্রহ দেখায়। বিপিএলে নিলামের সময় আইকন খেলোয়াড়দের লটারিতে এক নম্বর হয়ে রংপুর রাইডার্স তাই আর দেরি করেনি। নির্দ্বিধায় সাকিবকে দলে টেনে নেয় উত্তরবঙ্গের দলটি।তবে আগের দুই আসরের মত এবার আর তার ব্যাট কথা বলেনি। আগের দুই আসরে ব্যাট হাতে ৬০৯ রান করা সাকিবের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১৩৬ রান। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও দলকে শেষ চারে তুলতে বল হাতে দারুণ ভূমিকা পালন করেন সাকিব। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট তুলে নেন তারকা এই খেলোয়াড়।বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, সবচেয়ে বড় ভরসা সাকিব আল হাসান শুধু বিপিএলেই নিজের ঝলক দেখাননি। আইপিএল, বিগব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), পিএসএল, এসপিএল সবখানেই আছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় লিগ ধরা হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে (আইপিএল)।কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএলে সাকিব আল হাসানের অভিষেক ২০১১ মৌসুমে। অভিষেকের পরই বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন দলের অপরিহার্য অংশ। কেকেআরের দুটি শিরোপা জেতার পেছনে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।বিগব্যাশ কেবল অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টই নয়, ক্রিকেট দুনিয়ায় এ টুর্নামেন্টের আবেদন গুরুত্ব অন্যরকম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিত্যনতুন নানা অনুষঙ্গ যোগ হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিগ ব্যাশের। এ টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের একজনই খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি সাকিব আল হাসান।প্রথম আসরে ইয়োহান বোথার চোট বিগব্যাশে অ্যাডিলেডে সুযোগ করে দিয়েছিল সাকিবকে। মাত্র দুটি ম্যাচে অংশ নিয়ে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৪৮ রান। হাত ঘুরিয়ে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। পরের আসরে মেলবোর্ন রেনিগেডসে নাম লিখিয়ে বোলিংয়ে দারুণ আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।টুর্নামেন্টে ৭ উইকেট নিয়ে পেসার জেমস প্যাটিনসনের সঙ্গে যৌথভাবে রেনিগেডসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি সাকিব। বল হাতে জ্বলে উঠলেও ব্যাট হাতে সাকিব ছিলেন অনেকটাই ম্লান। ৪ ম্যাচে ৪ ইনিংসে সাকিবের রান মাত্র ৩৯। গড় ৯.৭৫, সর্বোচ্চ ২২। এই ২২ রান করেছেন টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচ অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে। ফিল্ডিংয়ে চার ম্যাচে রান আউট করেছেন ১টি আর ক্যাচ নিয়েছেন ৩টি।বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগ মাতানো গেইল-পোলার্ড-ব্র্যাভোদের দেশে ক্যারিবিয়ান লিগ খেলছেন সাকিব। বিসিবি থেকে অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) প্রথম আসরের পর আর খেলা হয়নি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। তবে চতুর্থ আসরে জ্যামাইকা তালাওয়াহসের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন সাকিব।এদিকে বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে খেলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ২০০তম ম্যাচ খেলার নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করার সঙ্গে খেলেছেন ২০৯ ম্যাচ। এর মধ্যে ১৯০ ইনিংসে ব্যাট করে ২০.৮৪ গড়ে করেছেন ৩২৯৩ রান। আর ২০৪ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ২৪২ উইকেট।জাগো চ্যাম্পিয়নের ১৪তম সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকেআইএইচএস/বিএ
Advertisement