ধর্ম

মৃত্যুকে স্মরণ

১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, হে মানব সম্প্রদায় ! সুখ বিনাশকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি করে স্মরণ করো। – তিরমিযি,নাসায়ী, ইবন মাজাহ২. হযরত আনাস (রা) এর বর্ণনায় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সংকটময় মুহুর্তে বান্দা যখন মৃত্যুকে স্মরণ করে তখন এ স্মরণ তার সংকটময়তাকে দূর করে দেয় আর সুখের কালে মৃত্যু যখন স্মরণ করে তখন এ স্মরণ তার সুখ স্বাচ্ছন্দকে তিরোহিত করে দেয়।৩. হযরত ওমর(রা) রেওয়ায়েত করেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সবচাইতে বুদ্ধিমান লোক কে ? তিনি বললেন , যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে লেগে থাকে। (ইবন মাজাহ)৪. হযরত শাদ্দাদ ইবন আউস(রা) এর রেওয়ায়েতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে শুধরিয়েছে এবং পারলৌকিক জীবনের প্রস্তুতি স্বরুপ আমলে লেগে রয়েছে সেই বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি আকাঙ্ক্ষা রেখেছে আল্লাহর প্রতি কিন্তু নিজেকে প্রবৃত্তির দাস বানিয়েছে সে পরাজিত। -তিরমযি,ইবন মাজাহ৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, মৃত্যুর পর সবাইকে আক্ষেপ করতে হবে। সাহাবারা আরজ করলেন, সবাইকে আক্ষেপ করতে হবে এর অর্থ কি হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তির পুণ্য যদি অল্প হয় তাহলে সে এই বলে আক্ষেপ করবে যে আমি কেন পুণ্য আরো বেশি করলাম না । আর যদি সে পাপী হয় তাহলে পাপ থেকে বেঁচে না থাকার কারণে আক্ষেপ করতে হবে।– ( তিরমিযি)৬. হযরত রবি ইবন আনাস (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, পার্থিব জীবনের প্রতি অনাসক্তি ও আখেরাতের প্রতি আসক্তি সৃষ্টির জন্যে মৃত্যুর বিশ্বাস যথেষ্ট। – (আহমদ)৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে এক ব্যক্তি হাজির হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! মৃত্যু যে আমার প্রিয় নয়। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কি অর্থকড়ি আছে ? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন এ্গুলো অগ্রে প্রেরণ করে দাও। কেননা মুমিনের হৃদয় তার সম্পদের সাথে লেগে থাকে। তাই যদি সে সম্পদকে অগ্রে প্রেরণ করে দেয় তাহলে তার আকাংখাও হবে সম্পদের কাছে যেয়ে মিলিত হবার। আর সম্পদ যদি পিছনে রেখে যায় তাহলে সেও সম্পদের সাথে পিছে থেকে যাবার আশা করবে। (আবু নায়ীম)সম্পদ অগ্রে প্রেরণ করে দেয়ার অর্থ হল, অভাবীদের মাঝে সেগুলো বন্টন করে দেয়া।৮.  হযরত আবু কাতাদা (রা) ফরমান, একবার রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দিয়ে একটি জানাযার অতিক্রম হলো। রাসুল (সা) এটি দেখে বললেন, ‘মুসতারিহ অথবা মুসতারাহ মিনহু’। সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! মুসতারাহ এবং মুসতারাহ মিনহু এ বাক্যের মর্মকথা কি ? রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মুমিন আল্লাহর রহমতের মধ্যে প্রবেশ করে এবং দুনিয়ার যাতনা ক্লেশ থেকে স্বস্তি পায়। আর পাপি ও দুষ্ট লোকের মৃত্যুতে জীব-জানোয়ার, বৃক্ষ লতা, স্থান অঞ্চল এবং মানুষজনেরা স্বস্তি পায়। – বুখারি,মুসলিম।৯. হযরত ইবন মাসউদ(রা) বলেন, আল্লাহর সাক্ষাতের মাঝেই মুমিনের স্বস্তি। (আহমদ, ইবন আবি দুনিয়া)।১০. হযরত মাইমুন ইবন মেহরান(রা) বর্ণনা করেন, তোমরা সৎ কর্মের মাঝে লেগে থাকো, অথবা পূর্বে যে সৎ কাজ করেছ সেগুলোর স্মরন অব্যাহত রাখো। কারণ এতে মৃত্যু্র সময় সহজে আত্মা বেরিয়ে আসবে। (আহমদ)

Advertisement