একুশে বইমেলা

অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছেন নোমান!

কাসাফাদ্দৌজা নোমান। অনেকেই এই নামটি একবারে উচ্চারণ করতে পারেন না! এত খটখটে যার নামের বানান, লেখালেখিতে ভাষার ব্যবহার তার যথেষ্ট সরল। সহজ, সাবলীল বর্ণনায় তার লেখা পড়ে মানুষ যেমন হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে, তেমনি আবার কাঁদতে কাঁদতে বালিশও ভিজিয়ে ফেলে! মূলত তিনি গল্পকার। তবে রম্য লেখায় দিন দিন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তুমুল জনপ্রিয় তিনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি রম্য ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা প্রকাশ হচ্ছে তার। এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম বই `অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি`। তাকে নিয়ে লিখেছেন হাবীবাহ্ নাসরীন-শুরুর গল্পনোমান তখন ষষ্ঠ অথবা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছেন। সেই বয়সেই একটি লেখা ছাপা হয়েছিলো দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের রম্য ম্যাগাজিনে। লেখা লিখে, খামে পুরে, পোস্টবাক্সে জমাও দিয়েছিলেন ঠিকঠাক। তখনও জানতেন না, লেখাটি ছাপা হবে কি না। লেখাটি যখন ছাপা হলো তখন ভাইয়ের বিয়েতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন নোমান। বিয়ের হৈ-হুল্লোড়ে পত্রিকা আর দেখা হয়নি। পরে বাড়িতে গিয়ে পুরনো পত্রিকা ঘেঁটে দেখলেন, আরে! লেখা তো ছাপা হয়েছে! সেদিনই আত্মবিশ্বাসের ভিত গড়ে উঠেছিলো নোমানের। তিনি পারবেন! এরপরে পড়াশুনা, অলসতা, আড্ডা আর ঘোরাঘুরির কারণে অনেকটা সময় দূরে সরে ছিলেন লেখালেখি থেকে। মাঝে মাঝে অবশ্য লিখেছেন, তবে ধারাবাহিকভাবে নয়। এরপর ২০০৯ সাল থেকে শুরু করলেন ব্লগে লেখালেখি। তারপরের পৃষ্ঠা জুড়ে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প।`অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি`কেউ যখন কাউকে মনে করে, অথবা খুব অভাববোধ করে কারো, তখন কিছু না ভেবেই বলে দেয়, `আই মিস ইউ`। কিন্তু পৃথিবীর মধুরতম ভাষা, আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় এর যথার্থ কোনো প্রতিশব্দ নেই। বিষয়টি ভাবিয়ে তুললো নোমানকে। অনেক ভেবে তিনি লিখে ফেললেন, `অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি`! `আই মিস ইউ` অর্থ `অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি`। এবং এই নামেই রেখেছেন তার প্রথম বইয়ের নাম। বিভিন্ন সময়ে লেখা মোট তেরোটি গল্প স্থান পেয়েছে বইটিতে। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে দুইবার বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েও শেষপর্যন্ত সরে এসেছিলেন। `আরেকটু ভালো` লেখা পাঠকদের হাতে তুলে দিতেই নোমানের এই বিলম্ব। অবশেষে এবারের বইমেলায় এসেছে তার প্রথম বই `অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি`। এরইমধ্যে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছে বইটি।মানুষের কাছাকাছিনোমান মনে করেন, লেখালেখি থেকে যতটা মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানো যায়, আর কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়। বইমেলায় নতুন নতুন পাঠকের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে তার, নানাজনের নানা অভিমত, ভালোবাসা- সবকিছুই উপভোগ করেন তিনি। এই যেমন সেদিন মেলায় একটি ছেলে এসে বললো, সে একটি মেয়েকে ভালোবাসে, অনেকবার জানিয়েছেও সে কথা, তবে মেয়েটি সাড়া দেয়নি। তবে ছেলেটির বিশ্বাস, নোমান কিছু লিখে দিলেই মেয়েটি সাড়া দেবে! এইযে মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা এসবই নোমানকে লিখতে উৎসাহিত করে। ফেসবুকে ভীষণ জনপ্রিয় তিনি। তাতে নানারকম বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয় মাঝে মাঝে। তবে বিড়ম্বনার চেয়ে ভালো দিকগুলোই বেশি। এমনও হয়েছে, কারো জন্য রক্ত দরকার, নোমান স্ট্যাটাস লিখে পোস্ট দেয়ার পনের মিনিটের মধ্যেই তা জোগার হয়ে গেছে!আগামীর ভাবনা নগরজীবন, মানুষের সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ অনুভূতিগুলোকে নিজের ভাবনায় ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করেন নোমান। এই নিয়েই লিখে যেতে চান। লেখার মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দিতে চান। মানুষের ভালোবাসা পেতে চান। এবছরই একটি উপন্যাস লেখার ইচ্ছে আছে তার। সবকিছু ঠিক থাকলে সেই বই আগামী বইমেলায় পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবেন।এইচএন/আরআইপি

Advertisement