বিশেষ প্রতিবেদন

বিআরটিসির গাজীপুর ডিপোর ম্যানেজারের এ কেমন আচরণ

হ্যালো, এটা কি নূরে আলম ভাইয়ের ফোন নম্বর। উত্তরে, কি দরকার বলেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর ওপাশ থেকে তিনি বললেন, আপনি কি আমাকে চেনেন। উত্তরে না বলায় তিনি ক্ষেপে গেলেন এবং বললেন বেশিরভাগ সাংবাদিক আমার বন্ধু-বান্ধব, আর আপনি আমাকে চেনেন না। না চিনলে ফোন করলেন কেন। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে যে আমার চিনতেই হবে এমনটা কিন্তু নয়। এ কথা বলার পর তিনি বললেন, তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে আমাদেরও কিছু জানা আছে। যদি কোনো তথ্য জানার দরকার হয় তাহলে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে আসেন। তার আগে কোনো তথ্য দিতে পারবো না।এরপর তিনি রাগান্বিত কণ্ঠেই বললেন, কি জানতে চান বলেন। কথা বলার ধরনটা ঠিক এমনই ছিল বিআরটিসির গাজীপুর ডিপোর ম্যানেজার নূরে আলমের। মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত নম্বরে কল করলে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এমন আচরণ করেন।এর আগে বেলা ১টায় এই প্রতিবেদক শ্যামলী থেকে বিআরটিসির আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাসে ওঠেন (যার নম্বর ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৬৫৪৮)। এ সময় পুরো বাসটিই ফাঁকা ছিল। বাসে ওঠার পর চোখে পড়ে গাড়িতে লাগানো প্রতিটি ফ্যানই নষ্ট। কোনোটির পাখা আছে তো ঢাকনা নেই। কোনোটির আবার পাখাই নেই। গাড়িতে লাগানো ১২টি ফ্যানেরই একই অবস্থা।এ ব্যাপারে কন্ডাক্টর জাহিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি সব দোষ যাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, নিজের দিকে বাতাস পেতে যাত্রীরা ফ্যান এদিক সেদিক করার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। পরবর্তীতে ঠিক করা হয় কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু ঠিক করলে পরে যাত্রীরা ফ্যানগুলোর একই অবস্থা করেন।তার এসব কথার জোরালো প্রতিবাদ জানালেন পাশের সিটে বসা মধ্য বয়সী এক ভদ্রলোক। পেশায় ব্যাংকার আব্দুল জব্বারও মহাখালীর যাত্রী ছিলেন।তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মাঝে মধ্যেই বিআরটিসি গাড়িতে ওঠা হয়। ভাড়া নিয়ে তারা যাত্রীদের সঙ্গে যে আচরণ করেন তা অমানবিক। মাঝে মধ্যে হাতাহাতিরও ঘটনাও ঘটে।তিনি বলেন, এসব গাড়ির চালক ও হেলপার নিজেদের সরকারি বড় কর্মকর্তা ভাবেন। তিনি আরো বলেন, এর আগে শ্যামলী থেকে মহাখালী ১০ টাকা ভাড়া নিতো আজ ১৫ টাকা নিয়েছে। প্রতিবাদ করলেই চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন।বোরকা পরিহিত এক নারী তো বলেই ফেললেন, সরকার বিআরটিসি গাড়ি ছাড়ছে (ছেড়েছে) যাত্রীদের হয়রানির জন্য। তাদের খুব ভাব। ভাব ছাড়া কথাই বলেন না।এসব বিষয়ে পুনরায় কথা হয় কন্ডাক্টর জাহিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, টেকনিক্যাল থেকে বনানী পর্যন্ত ভাড়া ১৫ টাকা। প্রায় দুই মাস হয়েছে ভাড়া বাড়ানোর।তিনি বলেন, আগে শ্যামলী থেকে মহাখালীর ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এটা সত্যি। কিন্তু ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া লেগেই থাকে।এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে তিনি অফিসে কথা বলতে বলেন। পরে তিনি একজনের ফোন নম্বরও দেন।ওই নম্বরে কল করলে তিনি নিজেকে ইয়ার্ড মাস্টার হিসেবে পরিচয় দেন। তার নাম মকবুল হোসেন। তিনি জানান, গাড়ি মেরামতের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। যখন কোনো গাড়ি অকেজো হয় তখনই সেটা মেরামত করে ছেড়ে দিতে হয়।নষ্ট ফ্যানগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, তিন মাস আগে ফ্যানগুলো ঠিক করা হয়েছে। নতুন করে আবারো নষ্ট হয়ে গেছে। তিনিও ফ্যান নষ্টের পেছনে সব দোষ দিলেন যাত্রীদের।এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় কথা হয় গাজীপুর ডিপোর ম্যানেজার নূরে আলমের সঙ্গে। তিনিও বলেন, গাড়ি মেরামতের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। নষ্ট যেহেতু হয়েছে ঠিক করতে হবে।কবে নাগাদ ঠিক হতে পারে জানতে চাইলে তিনি তার অফিসে চায়ের দাওয়াত দিয়ে ফোনের লাইনটি কেটে দেন।এমএএস/ওআর/এবিএস

Advertisement