মতামত

নিন্দনীয়, দুঃখজনক

ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়ে সারাদেশের মানুষ যখন ক্রিকেট আনন্দে ভাসছে ঠিক তখনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দুদের ঘর-বাড়ি ও মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয় ব্যাপার যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে এখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এটির প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য একটি চক্র সব সময়ই তৎপর থাকে। অপতৎপরতাকারীরা যাতে সুবিধা করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ঘটনার পূর্বাপর বিবেচনায় রেখেও সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগ ওঠে রসরাজ দাস (৩০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এর জের ধরে তার ফাঁসির দাবিতে রোববার দিনভর উত্তাল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া অন্তত ১০টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দুদের ঘর-বাড়ি ও মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাস তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পবিত্র কাবা শরীফের ব্যঙ্গচিত্র করে একটি পোস্ট দেন। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরেই ওই যুবককে গ্রেফতার করার পরই তার ফাঁসির দাবি তোলে স্থানীয়রা। এদিন বিকেলে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কে লাঠিসোটা নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতও এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। অপরাধীর শাস্তি দাবি করাটা অন্যায় নয়। তবে এটা করতে গিয়ে নিজেরাই অপরাধে জড়িয়ে গেলে সেটিও দুঃখজনক। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কিছুতেই কাম্য নয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এ জন্য ওই সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা, মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুর এটা তো দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না। তাছাড়া প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। এর আগে কক্সবাজারের রামুতে ফেসবুকের মাধ্যমেই ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দেয়া হয়েছিল। কয়েকদিন আগে চিত্রনায়ক আলমগীরসহ আরো বেশ কজন তারকা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ধর্মীয় বিষয়সহ নানা কথা ছড়ানো হচ্ছে, যা তাদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অথচ তাদের কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট-ই নেই। একই ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে গ্রেফতারকৃত রসরাজ দাসের ক্ষেত্রেও। কাজেই কারো অপরাধ প্রমাণের আগেই ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা কোনো অবস্থাতেই সমীচীন নয়। একটা কথা মনে মনে রাখা দরকার ফেসবুকে যে কেউ যে কারো নাম ও ছবি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে, পোস্ট দিতে পারে। এমনকি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেও যা খুশি তাই করতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে প্রযুক্তিবিদদের বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি করে ভাবতে হবে। কেউ যাতে প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে না পারে সেটির ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা আবারো প্রমাণ করলো সহিষ্ণুতার দিক থেকে আমরা এখনো কতটা পিছিয়ে। তদন্ত সাপেক্ষে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।  এইচআর/এমএস

Advertisement